দুই সন্তানকে নিজের কাছে রাখতে চেয়ে বাংলাদেশি প্রকৌশলী ইমরান শরীফের মামলা খারিজ করে দিয়েছেন আদালত। ফলে দুই শিশু জ্যাসমিনা মালিকা ও লাইলা লিনা তাদের জাপানি মা নাকানো এরিকোর কাছে থাকতে আর কোনো বাধা রইল না।
আজ রোববার ঢাকার দ্বিতীয় অতিরিক্ত সহকারী জজ ও পারিবারিক আদালতের বিচারক দুরদানা রহমান এই আদেশ দেন।
তবে এ রায়ে ন্যায় বিচার পাননি বলে দাবি করেছেন ইমরান শরীফের আইনজীবী নুরুল ইসলাম। তারা এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
অন্যদিকে জাপানি মায়ের আইনজীবী শিশির মনির বলেন, ‘বাবার আবেদন খারিজ করেছেন আদালত। এখন মায়ের জিম্মায় সন্তানদের থাকতে কোনো বাধা রইল না। এখনো একটি সন্তান বাবার কাছে রয়েছে। স্বেচ্ছায় বাবা যদি ওই সন্তানকে মায়ের কাছে না দেয় তবে আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
এর আগে গত ২২ জানুয়ারি মায়ের পক্ষে এই মামলায় যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন আইনজীবী শিশির মনির। আর বাবার পক্ষে যুক্তিতর্ক তুলে ধরেন আইনজীবী নাসিমা আক্তার। সেদিন মেয়ে জ্যাসমিনাকে আদালতে হাজির করা হয়। এরপর রায়ের দিন ঠিক করা হয়।
এর আগে গত ১৫ জানুয়ারি ওই দুই শিশু ও তাদের মায়ের বক্তব্য শোনেন। সেদিন বিচারক ক্যামেরা ট্রায়ালে বাবা ও মা এবং দুই শিশুর বক্তব্য শোনেন।
জাপানি চিকিৎসক নাকানো এরিকোর সঙ্গে বাংলাদেশি প্রকৌশলী ইমরান শরীফের বিয়ে হয় ২০০৮ সালে। দাম্পত্য কলহের জেরে ২০২০ সালের শুরুতে বিচ্ছেদের আবেদন করেন এরিকো। এরপর ইমরান স্কুলপড়ুয়া বড় দুই মেয়েকে নিয়ে বাংলাদেশে চলে আসেন। ছোট মেয়ে জাপানে এরিকোর সঙ্গে থেকে যান।
মেয়েদের নিজের কাছে রাখতে করোনা মহামারির মধ্যে গত বছরের জুলাইয়ে বাংলাদেশে আসেন এই জাপানি নারী। তিনি হাইকোর্টে রিট করলে তাদের সমঝোতায় আসতে বলেন বিচারপতিরা। কিন্তু ওই দম্পতি সমঝোতায় না আসায় কয়েক মাস শুনানির পর হাইকোর্ট দুই সন্তানকে বাবার হেফাজতে রাখার সিদ্ধান্ত দেন। পাশাপাশি মা যাতে সন্তানদের সঙ্গে দেখা করতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে বাবাকে খরচ দিতে বলা হয়।
হাইকোর্টের ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন শিশুদের মা নাকানো এরিকো। পরে আপিল বিভাগ এক আদেশে শিশু দুটিকে মায়ের জিম্মায় রাখার নির্দেশ দেন। কিন্তু বাবা তা না মানায় বিচারপতিরা উষ্মা প্রকাশ করেন। পরে আদালত শিশু দুটিকে বাবার হেফাজত থেকে এনে তাদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে মায়ের হেফাজতে দেওয়ার আদেশ দেন।
এদিকে সন্তানসহ পালানোর চেষ্টার অভিযোগে জাপানি মা এরিকো নাকানোর বিরুদ্ধে ইমরান শরীফ গত ২৯ ডিসেম্বর ঢাকা সিএমএম আদালতে একটি মামলা করেন। যা ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আরাফাতুল রাকিব পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।