muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

জাতীয়

রাজধানীতে তীব্র পানির সংকট, ওয়াসার দুঃখ প্রকাশ

মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠ ডেস্কঃ- মোহাম্মদ মনির হোসেন থাকেন রাজধানীর রামপুরা বনশ্রী বি ব্লকের ৭ নম্বর সড়কে। দীর্ঘ প্রবাসজীবনের আয়ে তিনি এখানে সাত তলা বাড়ি করেছেন। চলতি মাসে সেই বাড়ির ভাড়া উঠাতে গিয়ে তিনি পড়েন বিপাকে। কয়েক দিন ধরে পানি না থাকায় ভাড়াটিয়ারা বেঁকে বসেছে।

মনির হোসেন বলেন, ‘কয়েক দিন ধরে ওয়াসার লাইনে পানি সংকট দেখা দিয়েছে। তাই ফ্ল্যাটগুলোতে পানি নেই। ভাড়াটিয়ারা এসে আমার কাছে পানি চায়। ওয়াসার কাছে একাধিকবার ফোন করে তাগাদা দিলে মেলে এক গাড়ি পানি। সেই পানির সঙ্গে গুনতে হয় নির্ধারিত টাকার চেয়ে দ্বিগুণ টাকা। এ নিয়ে ভাড়াটিয়াদের সঙ্গে আমার সম্পর্কের অবনতি হচ্ছে।’

শাহ আলীবাগ মিরপুর ১ নম্বর সেকশনের ফেনী ভবন। এ ভবনে বাস করে ছোট-বড় মিলিয়ে ১২টি পরিবার। সেখানেও বেশ কয়েক দিন ধরে পানির সংকট তীব্র। বাড়ির মালিক খাজা আজিমুদ্দিন রুপন বলেন, ‘গরম শুরু হতে না হতেই পানির সংকট দেখা দিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে ওয়াসার (মডস-জোন-৪) অফিসে গিয়েও তেমন কোনো কাজে আসেনি। ওয়াসা কর্তৃপক্ষকে বলতে শুনি চাহিদার তুলনায় নাকি পানির সরবরাহ বেশি। তাহলে সংকট হয় কিভাবে?’

দক্ষিণ বনশ্রীর বাসা নম্বর ২২৮, রোড নম্বর ১৮, কে ব্লকের ভবনটির চতুর্থ তলায় থাকেন গৃহিণী জাকিয়া সান্ত্বনা। গত কয়েক দিনের পানি সংকট নিয়ে তাঁর মন্তব্য জানতে চাইলেই ক্ষোভের সঙ্গে জানান, পানির অভাবে তাঁর ছেলে এই গরমেও গোসল না করেই স্কুলে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, বাসাবাড়ির দৈনন্দিন কাজের জন্য যে পানি দরকার তাও পাওয়া যাচ্ছে না। পানির লাইনে এক ফোঁটা দুই ফোঁটা পানি মাঝেমধ্যে আসে। এভাবে কি জীবন চলে?

শুধু বনশ্রী বা মিরপুরই নয়, গরম বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রাজধানীর অনেক এলাকায় পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ওয়াসার লাইনে পানি আসছে না। এলেও এত মৃদু যে তা জমিয়ে রাখা যাচ্ছে না। দিন দিন এ হাহাকার বাড়ছেই।

ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিংয়ের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘রাজধানীবাসীর পানি সরবরাহ করতে দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ঢাকা ওয়াসা বারবার ব্যর্থ হচ্ছে। তারা দূরের নদী থেকে পানি আনার জন্য যেসব পাইপের ব্যবস্থা করছে তা সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করে হচ্ছে না। তারা (ওয়াসা) পানি সংকটের বিষয়টি মাথায় নিতে রাজি নয়; বলছে পানি সংকট নেই। কিন্তু নগরবাসী তীব্র পানি সংকটে আছে। শুষ্ক মৌসুমে প্রতিবছর একই সমস্যা হচ্ছে। আগাম প্রস্তুতি না নিয়ে দায় এড়ানোর চেষ্টা করছে কর্তৃপক্ষ।’

এদিকে রাজধানীর বেশ কিছু এলাকায় পানি সংকট দিন দিন তীব্র হচ্ছে। ফলে ক্ষোভ বাড়ছে। কিছু কিছু এলাকায় পানির জন্য মিছিলও হচ্ছে। আবার কেউ কেউ ওয়াসা ভবন ঘেরাও করার মতো কর্মসূচি দেওয়ার হুমকি দিচ্ছে। নগরীর যাত্রাবাড়ী, শনির আখড়া, ডেমরা, মালিবাগ, মিরপুর-১, ১০ ও ১৪ নম্বর, লালমাটিয়া, ধানমণ্ডিতে পানির তীব্র সংকট চলছে। এ ছাড়া পুরান ঢাকার দীননাথ সেন রোড, সতীশ সরকার লেন, সদরঘাট, শাঁখারীবাজার, তাঁতীবাজার ও পান্নিটোলা এলাকায় পানি সংকট রয়েছে। আর যেটুকু পানি মাঝেমধ্যে পাওয়া যাচ্ছে সেখানেও ময়লা ও দুর্গন্ধ থাকায় তা ব্যবহার করা যাচ্ছে না।

ডেমরা কোনাপাড়া সামসুল হক খান স্কুলের পাশের একটি ভবনের বাসিন্দা নাসরিন সুলতানা জানান, কোনাপাড়া, ডগাইর বাজার, মধুবাগ, শান্তিবাগ এলাকায় ১৫ দিন ধরে পানি সংকট। কিন্তু তিন দিন ধরে তা তীব্র আকার ধারণ করেছে। ফলে চরম কষ্ট সহ্য করে পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে। এমন গরমের সঙ্গে পানির হাহাকারে জীবনই বিপন্ন হওয়ার জোগাড়।

গতকাল মঙ্গলবারও রাজধানীর অনেক এলাকায় পানির জন্য গভীর নলকূপ ও ওয়াসার জোন অফিসগুলোতে ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। পুরান ঢাকা ও মুগদা-বাসাবো এলাকায় গৃহিণীরা কলস নিয়ে পানির জন্য দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। অনেকে বাধ্য হয়ে বোতলজাত পানি কিনে সাময়িক চাহিদা মেটাচ্ছে। যদিও ঢাকা ওয়াসা বারবার দাবি করছে, ওয়াসার আওতাভুক্ত এলাকার জন্য পানির চাহিদা ২২৫-২৩০ কোটি লিটার। আর তাদের উৎপাদন সক্ষমতা ২৪৫ কোটি লিটার। এ তথ্য নগরবাসীসহ সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞ মহল মানতে নারাজ।

ওয়াসা সূত্রে জানা যায়, ৬ এপ্রিল ভোর ৬টা থেকে ৭ এপ্রিল ভোর ৬টা পর্যন্ত ঢাকা ওয়াসার পানি উত্তোলন লো ভোল্টেজ, লোডশেডিং ও বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে ৭১৩টির মধ্যে ৮৭টি পাম্প বন্ধ ছিল। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ২৪৪ কোটি ৮০ লাখ লিটার পানি উৎপাদন করার কথা থাকলেও সর্বমোট উৎপাদন হয়েছে ২৩৩ কোটি ৪৮ লাখ লিটার, যা উৎপাদনক্ষমতার চেয়ে ১১ কোটি ৩২ লাখ লিটার কম।

এ ব্যাপারে ঢাকা ওয়াসার বক্তব্য হলো, বিদ্যুৎ বিভ্রাট, পানি সরবরাহ লাইনের ত্রুটি, পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় কয়েকটি এলাকায় সাময়িক পানি সরবরাহ সমস্যা দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া কিছু এলাকায় সরবরাহ লাইন পুনঃস্থাপনের জন্যও সাময়িক পানি সরবরাহে অসুবিধা হচ্ছে।

পানির সংকটের জন্য ওয়াসার দুঃখ প্রকাশ : রাজধানীর বিদ্যমান তীব্র পানি সংকটকে আবারও পকেট সমস্যা বলে উল্লেখ করেছেন ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী তাকসিম এ খান। এ সমস্যার জন্য তিনি নগরবাসীর কাছে দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন, দ্রুত বিদ্যমান পানির পকেট সমস্যা কেটে যাবে। গ্রীষ্মকালে পানির বড় ধরনের কোনো সংকট হবে না বলেও দাবি ওয়াসার এমডির।

গতকাল বিকেলে কারওয়ান বাজারের ওয়াসা ভবনে জরুরি এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ওয়াসার এমডি। এ সময় ঢাকা ওয়াসার উপব্যবস্থাপনা পরিচালক এস ডি এম কামরুল আলম চৌধুরীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ওয়াসা বর্তমানে ৭৮ শতাংশ পানি ভূগর্ভস্থ উৎস থেকে সংগ্রহ করছে। আর বাকি ২২ শতাংশ ভূ-উপরিস্থ উৎস থেকে সংগ্রহ করা হয়। ঢাকা ওয়াসার পদ্মা, মেঘনাসহ হাতে নেওয়া অন্য প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে ভূগর্ভস্থ ও ভূ-উপরিস্থ পানি সংগ্রহের চিত্র পাল্টে যাবে।

মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠ ডটকম/13-04-2016/মইনুুল হোসেন

Tags: