পূর্ণ ও টেকশই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য সংবিধান ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার চেয়েছেন উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজের পক্ষে সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার এটিএম শামসুল হুদা।
রোববার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে ‘পূর্ণ গণতন্ত্রের পথে অভিযাত্রা: কিছু প্রস্তাবনা’ শীর্ষক এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি জানান।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে শামসুল হুদা বলেন, ‘দেশের গণতন্ত্র স্থায়ীভাবে প্রতিষ্ঠার জন্য সংবিধানের বেশকিছু জায়গায় পরিবর্তন আনা দরকার। একই সঙ্গে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করতে সেগুলোর ব্যাপক সংস্কার করা দরকার।’
তিনি বলেন, ‘একটি রাজনৈতিক দল গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য নির্বাচনকালীন সরকার ব্যবস্থায় শুধু তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পুনঃপ্রতিষ্ঠা চায়। কিন্তু এই ব্যবস্থায় নির্বাচনের পর নির্বাচিতরা গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোর কোনো পরিবর্তন আনবেন কি না সে কথা কেউ বলে না।’
গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় শুধু নির্বাচনই যথেষ্ট নয় উল্লেখ করে শামছুল হুদা বলেন, ‘বাংলাদেশ অনেক দূরে এগিয়ে গেছে। তবে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে গেলেও গণতান্ত্রিকভাবে এগোতে পারিনি আমরা। সবাই গণতন্ত্রের দোহাই দিয়ে ক্ষমতায় এসেছে। পরে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিজেদের মতো ব্যবহার করেছে।’
প্রস্তাবনা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘স্থায়ীভাবে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে হলে রাষ্ট্রপতি পদের পূর্ণ স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা; জাতীয় সংসদ, সুপ্রিম কোর্ট, নির্বাচন কমিশন, কর্ম কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন, তথ্য কমিশন ও মানবাধিকার কমিশনের মতো সংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে স্বাধীন করতে হবে।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা কোনো রাজনৈতিক দল নয়, এমনকি ক্ষমতায় যাওয়ার আশাও আমাদের নেই। ৯০-এর দশকে ৩টি রাজনৈতিক জোট এক হয়ে আন্দোলন করে রাষ্ট্রপ্রতি শাসিত সরকার থেকে সংসদীয় ব্যবস্থায় ফিরেছিল। আশা করি এবারও রাজনৈতিক দলগুলো এক হয়ে পূর্ণগণতন্ত্রও প্রতিষ্ঠা করবে। তবে একটু সময় লাগবে।’
সংবাদ সম্মেলনে সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, ‘আফগানিস্তানে ব্যাপক দুর্নীতি ও নির্বাচনে কারচুপির কারণে তালেবানের উত্থান হয়েছিল। সাধারণ মানুষ যখন কোথাও কোনো প্রতিকার না পায়, তখন ধর্মের আশ্রয় নেয়। আমাদের দেশে যে দুর্নীতি ও কারচুপি হচ্ছে তারও একটি দীর্ঘমেয়াদী ফলাফল আছে।’
কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন, ‘স্বাধীনতা পূর্ববর্তী সময়ে যখন জাতীয়তাবাদী আন্দোলন শুরু হয়, তখন রাজনৈতিক ব্যক্তিরাই পরিবর্তনের আন্দোলন শুরু করে। আগের পরিবর্তন যেহেতু রাজনীতিকরা শুরু করেছে এখনকারটাও তাদেরই শুরু করতে হবে। তখন স্কুল-কলেজের ছাত্র-শিক্ষক, পেশাজীবী ও সাধারণ মানুষ আন্দোলন শুরু করেছিল।’
তিনি বলেন, ‘আমরা চাই একটি বসবাসযোগ্য বাংলাদেশ। যেখানে ন্যায় বিচার থাকবে।’
উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজের ব্যানারে সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন সুজন সভাপতি এম হাফিজ উদ্দিন, সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ প্রমুখ।