muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

জাতীয়

যুদ্ধাপরাধ মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি গ্রেপ্তার

যুদ্ধাপরাধ মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামি গ্রেপ্তার

একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদণ্ডা‌দেশপ্রাপ্ত এবং দীর্ঘদিন ধ‌রে পলাতক যুদ্ধাপরাধী আবু মুসলিম মোহাম্মদ আলীকে (৭০) রাজধানী থেকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-৩।

শ‌নিবার রাতে রাজধানীর ডেমরা এলাকা থে‌কে তা‌কে গ্রেপ্তার করা হয়।

রোববার দুপু‌রে র‌্যাব-৩ এর কার্যাল‌য়ে ব‌্যাটা‌লিয়‌নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ ক‌লেন, গ্রেপ্তার আবু মুস‌লি‌মের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ ও ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের সাতটি অভিযোগ আনা হয়। ১৯৭১ সালে গঠিত ইসলামী ছাত্র সংঘের একজন অন্যতম সংগঠক এবং গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ থানা জামায়াত ইসলামীর সক্রিয় সদস্য ছিলেন আবু মুস‌লিম।

এছাড়াও তি‌নি শান্তি কমিটির সক্রিয় সদস্য হিসেবে অত্র এলাকায় লুটপাট ও বিভিন্ন ধরনের নাশকতামূলক কার্যক্রম চালাতেন। ১৯৭১ সালের জুলাই মাস থেকে শান্তি কমিটির গাইবান্ধা জেলাপ্রধান মওলানা মমতাজ উদ্দিনের নেতৃত্বে ধৃত আসামিসহ আরও অনেকে মিলে অত্র এলাকায় হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, নির্যাতন, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী কর্মকাণ্ড চালাত।

র‌্যাব কর্মকর্তা ব‌লেন, ১৯৭১ সালের ৯ অক্টোবর পূর্ব শত্রুতার জের ধরে শান্তি কমিটির দুর্ধর্ষ ডাকাত মো. আব্দুর রহিম মিয়া এবং গ্রেপ্তার আবু মুস‌লিম মোহাম্মদ আলীর নেতৃত্বে আবু সালেহ, আব্দুল লতিফ, রুহুল আমিন, নাজমুলসহ আরও কয়েকজন কুখ্যাত রাজাকার এবং পাকিস্তানি আর্মিদের একটি দল নিয়ে মালিবাড়ি গ্রামের গণেষ চন্দ্র বর্মনের বাড়িতে হামলা করে লুটপাট এবং বাড়ির সদস্যদের উপর নির্মম নির্যাতন চালায়। একপর্যায়ে অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে ঘর-বাড়ি পুড়িয়ে দেয়। এরপর গণেষ চন্দ্র বর্মনকে উঠিয়ে নেয়ার জন্য উদ্ধত হলে তার স্ত্রী, পুত্র, বন্ধু আকবর আলী এবং প্রতিবেশি মোহাম্মদ আলী ও মনসুর আলী এগিয়ে এলে তাদের সকলকে আবু মুস‌লিম এবং তার সহযোগীরা তাদের বেধড়ক মারপিট করে এবং একপর্যায়ে তাদেরকে আটক করে পা‌শের দরিয়াপুর ব্রিজে নিয়ে যায়।

সেখানে নিয়ে গণেষ চন্দ্র বর্মনকে নিয়ে হাত-পা বেঁধে মুখমন্ডল ও সারাশরীরে নৃশংসভাবে আঘাত করে তার মৃত্যু নিশ্চিত করে। এরপর তার মুখমন্ডল বিকৃত করে দেয় এবং মৃতদেহের সাথে ইট ও পাথর বেঁধে এমনভাবে নদীতে ডুবিয়ে দেয় যাতে করে লাশটি ভেসে ওঠতে না পারে। আটক আকবর আলী, মোহাম্মদ আলী এবং মনসুর আলীকে তারা কামারজানি আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে মারধর করে এবং নির্যাতন করে। আকবর আলীকে তারা উপস্থিত অপর দুই ব্যক্তির সামনে বৈদ্যুতিক শক এবং নির্যাতনের মাধ্যমে ক্যাম্পেই হত্যা করে। পরের দিন বিকালে অপর দুই ব্যক্তি মনসুর আলী এবং মোহাম্মদ আলীকে তারা ক্যাম্প থেকে ছেড়ে দেয়ার পর এরা কোন রকম পালিয়ে জীবন বাঁচায়।

কামারজানি আর্মি ক্যাম্পে হত্যাকাণ্ডের শিকার আকবর আলীর ছেলে আনিছুর রহমান বাদী হয়ে ২০১৩ সালে গাইবান্দা অধস্তন আদালতে ধৃত আসামি আবু মুসলিম মোহাম্মদ আলী, আব্দুর রহিম, আবু সালেহ, আব্দুল লতিফ, রুহুল আমিন, নাজমুল হুদাকে ১৯৭১ সালে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করে।

প‌রে ২০১৪ সালে মামলাটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে স্থানান্তর করা হয়। বিচারিক প্রক্রিয়া চলাকালীন আবু ম‌ুস‌লিম কখনোই আদালতে হাজির হয়নি। মামলার পর ২০১৩ সাল তি‌নি নিজ এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনে চলে যান। এরপর গভীর তদন্তে আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত প্রতিটি অভিযোগ প্রসিকিউশনের মাধ্যমে প্রমানিত হলে ২০১৭ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল আসামির বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডা‌দেশর রায় দেন।

র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক ব‌লেন, এই মামলার অভিযুক্ত অপর ৫ জন আসামির মধ্যে বর্তমানে ১ জন জর্ডানে অবস্থানরত, ১ জন কারাগারে, ২ জন পলাতক রয়েছে এবং ১ জন আসামি পলাতক অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে।

তি‌নি ব‌লেন, মামলা দা‌য়েরের পর ২০১৩ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ‌গ্রেপ্তার আবু মুস‌লিম সুন্দরগঞ্জ থানায় তার এক আত্মীয়র বাড়িতে আত্মগোপনে ছিলেন। ২০১৫ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে চলমান মামলায় জামিনের আবেদন করলে আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করেন। এরপর ট্রাইবুন্যাল কর্তৃক গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারী হলে আত্মগোপনে থাকেন।

চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে রাজধানীর ডেমরা এলাকায় একটি বস্তিতে থাক‌তে শুরু ক‌রেন। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব-৩ তা‌কে গ্রেপ্তার ক‌রে। তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।

Tags: