muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

জাতীয়

ফুলবাড়িয়ায় বিস্ফোরণ জমে থাকা ‘গ্যাস’ থেকে

ফুলবাড়িয়ায় বিস্ফোরণ জমে থাকা ‘গ্যাস’ থেকে

রাজধানীর গুলিস্তানের ফুলবাড়িয়ার সিদ্দিকবাজার এলাকায় তিতাসের পরিত্যক্ত লাইনের ছিদ্র থেকে বের হওয়া গ্যাস জমে ভবনের বেজমেন্টে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দলের প্রাথমিক অনুসন্ধানে এ তথ্য উঠে এসেছে।

সিটিটিসির বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দল বলছে, সিদ্দিকবাজারের কুইন স্যানিটারি মার্কেট হিসেবে পরিচিত সাততলা ওই ভবনের বেজমেন্টে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের একটি পরিত্যক্ত লাইনের অস্তিত্ব তারা পেয়েছে। বেজমেন্টে একসময় রান্নাঘর ছিল, আর নিচতলায় ছিল খাবারের হোটেল।

এই রান্নাঘরে তিতাস গ্যাসের বাণিজ্যিক লাইন ছিল। ২০০১ সালে গ্যাস–সংযোগের লাইনটি রাইজার (গ্যাস সরবরাহের সংযোগস্থল) থেকে বিচ্ছিন্ন করা হয়। তবে সংযোগ লাইন অপসারণ করা হয়নি। যে কারণে সেটিতে গ্যাসের সরবরাহ ছিল। ওই লাইনের ছিদ্র থেকে বেজমেন্টের শীতাতপনিয়ন্ত্রিত কোনো একটি কক্ষের বদ্ধ কুটুরিতে গ্যাস জমে ছিল। সেখান থেকেই ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে বলে সিটিটিসি মনে করছে।

তবে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. হারুনুর রশিদ মোল্লাহ বলেন, বেজমেন্টে বৈধভাবে গ্যাস–সংযোগ থাকার কোনো সুযোগ নেই। সিদ্দিকবাজারের ভবনটিতে এমন কোনো সংযোগ থাকার কথা তার জানা নেই। তিতাসের একটি দল সেখানে কাজ করছে। এমন কিছু হলে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।

যদিও বিস্ফোরণস্থল পরিদর্শন শেষে সিটিটিসির পর্যবেক্ষণ হচ্ছে, সাততলা ভবনের পেছনের একটি রাইজার থেকে বেজমেন্টের দিকে ২০ মিটারের মতো একটি লাইন রয়েছে।

সিটিটিসির বোমা নিষ্ক্রিয়করণ দলের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) রহমত উল্লাহ চৌধুরী বলেন, বেজমেন্ট শীতাতপনিয়ন্ত্রিত হওয়ায় এর কক্ষগুলো ছিল আবদ্ধ। বেজমেন্টে পাঁচটি দোকান ছিল। দোকানগুলো শীতাতপনিয়ন্ত্রিত হওয়ায় সেখানে বাইরে থেকে বাতাস চলাচলের কোনো ব্যবস্থা ছিল না। ফলে সেখানে গ্যাস জমা হওয়ার পর কোনোভাবে স্পার্ক (আগুনের স্ফুলিঙ্গ) হওয়ার পরই ভয়াবহ বিস্ফোরণের এ ঘটনা ঘটে।

অন্যদিকে ফায়ার সার্ভিস বলছে, বিস্ফোরণের পর ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের উদ্ধারকারী দলের কর্মীরা গ্যাসের গন্ধ পান। দ্রুত তারা তিতাস কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। পরে তিতাসের কর্মীরা এসে ভবনের গ্যাসের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন।

বিস্ফোরণের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্য ও এই সংস্থার ঢাকা বিভাগীয় উপপরিচালক দিনমনি শর্মা বলেন, তিতাসের দুজন কর্মকর্তা এসে যে সংযোগটি বন্ধ করেছেন, সেটি সাত দিন আগে মেরামত করা হয়েছিল। ঘটনার পরদিন (বুধবার) তিতাসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে এসে বলেছিলেন, গ্যাসের গন্ধ পাওয়া যায়নি। কিন্তু গ্যাসের সংযোগ বন্ধ করে দেয়ার এক দিন পর সেখানে গ্যাসের গন্ধ না পাওয়াই স্বাভাবিক।

গত মঙ্গলবার বিকেল পুরান ঢাকার সিদ্দিকবাজারের একটি সাততলা ভবনের বেজমেন্ট থেকে দ্বিতীয় তলা পর্যন্ত ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। বিস্ফোরণে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১১টা পর্যন্ত ২৩ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে গতকাল দুপুরে ভবনের বেজমেন্টের দক্ষিণ পাশের সিঁড়ির নিচ থেকে মেহেদী হাসান নামে এক ব্যবসায়ীর লাশ উদ্ধার করেছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। রাত সাড়ে আটটার দিকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান আরাফাত ইয়াসিন নামের আরও একজন। তিনি ভবনে থাকা একটি স্যানিটারি দোকানের কর্মী ছিলেন। বিস্ফোরণে আহত হয়েছেন শতাধিক ব্যক্তি। এর মধ্যে এখনো চিকিৎসাধীন আছেন ২৩ জন।

সাততলা ওই ভবনের নিচতলায় স্যানিটারি দোকান, দ্বিতীয় তলায় ব্র্যাক ব্যাংকের অফিস এবং তিন ও চারতলায় আবাসিক ভবন। এ ছাড়া ওই ভবনের পাশের আরেকটি সাততলা ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সাততলা ভবনের ৪, ৫, ৬ ও ৭ তলা আবাসিক ভবন। এই সাততলা ভবনেও বিস্ফোরণ হয়ে থাকতে পারে জানিয়েছে পুলিশ।

এদিকে মঙ্গলবার মধ্যরাতে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল থেকে পরিবারের কাছে নিহতদের মরদেহ হস্তান্তর করেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ঢাকা একেএম হেদায়েতুল ইসলাম।

মরদেহ হস্তান্তরের সময় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে ৫০ হাজার টাকা করে সহায়তা দেয়া হয়।

এর আগে, রাতেই জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান জানিয়েছিলেন, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষতিপূরণ দেয়া হচ্ছে। আর্থিক সহায়তা, চিকিৎসা সহায়তা ও খাদ্য সহায়তা থেকে শুরু করে স্বজনদেরও সব ধরনের সহায়তা দেয়া হবে।

তিনি জানান, ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে সিদ্দিক বাজার বিস্ফোরণে জেলা প্রশাসনের সহায়তা বুথ বসানো হয়েছে। এ বুথ থেকে নিহতদের তাৎক্ষণিক ৫০ হাজার টাকা, গুরুতর আহতদের ২৫ হাজার, সামান্য আহতদের ১৫ হাজার আর্থিক সহায়তা দেয়া হচ্ছে। আমাদের টিম কাজ করছে। যতক্ষণ পর্যন্ত প্রয়োজন বুথ থাকবে।

Tags: