রাজধানীর উত্তরায় ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের সোয়া ১১ কোটি টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় আরও দুই কোটি ৫৩ লাখ ৯৯ হাজার টাকা উদ্ধার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ। টাকা ছিনতাইয়ে জড়িত থাকার অভিযোগে আট ডাকাতকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
গ্রেপ্তারকৃতদের নাম- মো. সানোয়ার হাসান (২৮), মো. ইমন ওরফে মিলন (৩৩), মো. আকাশ মাদবর (২৫), সাগর মাদবর (২২), মো. বদরুল আলম (৩৩), মো. মিজানুর রহমান (২০), মো. সনাই মিয়া(২৮) ও মো. এনামুল হক বাদশা (২৬)।
রোববার দুপুরে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
তিনি জানান, রাজধানীর মিরপুর, বনানী সুনামগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করে এই টাকা উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় ৮ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গত রাতে গোয়েন্দা মিরপুর ও উত্তরা বিভাগের একাধিক টিম এই বিশেষ অভিযান চালায়।
পুলিশ জানায়, ৯ মার্চ তুরাগ থানাধীন এলাকা থেকে ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের বুথে পৌঁছে দেয়ার জন্য যাচ্ছিলো মানি প্ল্যান্ট লিংক প্রাইভেট লিমিটেড। প্রতিষ্ঠনিটির কর্মকর্তাদের ভাষ্য মতে, যাওয়ার সময় ১১ কোটি ২৫ লাখ টাকা ডাকাতি হয়। ঘটনার পর পরই তাৎক্ষণিক গোয়েন্দা বিভাগের তৎপরতায় ওই দিনই রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকায় অভিযান চালিয়ে করে ৩ কোটি ৮৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় গত রাতে বিভিন্ন সূত্র থেকে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গোয়েন্দা মিরপুর ও উত্তরা বিভাগের বিভিন্ন টিম অভিযান চালায়।
অভিযানকালে রাজধানীর বনানী থেকে সানোয়ার হাসানকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং তার কাছ হতে ১ কোটি ১৪ লাখ ৫১ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। পরে একই এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা মিলনকে। তার ভাটারার জোয়ার সাহারা বাসা থেকে ৩২ লাখ ৪৭ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার করা হয়। এছাড়া উত্তরা থেকে আকাশ ও সাগরকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং তাদের বাসা থেকে ১ কোটি ৭ লাখ টাকা এবং ছিনতাই কাজে ব্যবহৃত প্রাইভেটকার উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ আরও জানায়, এছাড়াও ডিবির অপর একটি টিম সুনামগঞ্জ এলাকায় অভিযান চালিয়ে ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িত বদরুল আলম, মিজানুর, সনাই মিয়া ও এনামুল হক বাদশাকে গ্রেপ্তার করে।
গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে অতিরিক্ত কমিশনার হারুন অর রশীদ বলেস, গত ৮ মার্চ একটি হাইস মাইক্রোবাস সিলেট যাওয়ার উদ্দেশ্যে ভাড়া করে চক্রটি। ৯ মার্চ এর চালক চক্রের সদস্যদের পূর্বের কথা মতো সকাল সাড়ে ৫টায় কুর্মিটোলা যাত্রী ছাউনীর সামনে যায়। সেখানে চক্রের সদস্যরা পিছনে সিট ঠিক করার কথা বলে। চালক পিছনে গেলে হাত পা ও চোখ বেঁধে ফেলে।
ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের টাকা লুট করার উদ্দেশ্যে ডাকাতি সংক্রান্তে চক্রটি গাড়ির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মিরপুর ডিওএইচএস এলাকায় ওঁৎ পেতে বসে থাকে। পূর্ব তথ্য মতে নির্দিষ্ট নম্বরের গাড়িকে অনুসরণ করার জন্য অপেক্ষার এক পর্যায়ে গাড়ি পৌঁছালে তারা পিছন পিছন অনুসরন করে। তারা গাড়িকে একবার সামনে অতিক্রম করে আবার পিছনে চলে যায়। নির্জন জায়গায় যাওয়ার পর এক পর্যায়ে টক্কর লাগিয়ে তর্কবিতর্ক শুরু করে।
পরে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তারা চলে যায়। এরপর তাদের টাকাসহ গাড়ি নিয়ে ৩০০ ফিট এলাকায় নিয়ে যায়। পথে গাড়িতে থাকা ৫ জনকে তারা নামিয়ে দেয়। দুই ট্রাংক ভেঙে বের করে তাদের সংগ্রহে থাকা ২টি চালের বস্তা ও ৫টি ব্যাগ ভর্তি করে। তখন ব্যাগ না থাকায় বাকি ট্রাংকে তারা টাকা দেখে ভয়ে বাকি টাকা ফেলে রেখে সবাই চলে যায়। পরে তারা গাড়ির ড্রাইভারের সিটে বড় একটি টাকার ব্যাগ ফেলে রাখে এবং গাড়িতে কাপড় পরিবর্তন করে চলে যায়।
অবশিষ্ট ব্যাগটি ড্রাইভার সুস্থ হয়ে নিজের কাছে রাখেন। এছাড়াও তিনি ট্রাংক থেকে অবশিষ্ট টাকা ভরে তার ভাইয়ের কাছে দেন। পরে তাদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী বাসা থেকে টাকা উদ্ধার করা হয়।
হারুন অর রশীদ বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের ১০ দিনের রিমান্ডে আবেদন করা হয়েছে। রিমান্ডে এনে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
ঘটনার পর্যালোচনার বরাতে তিনি বলেন, ১১ কোটি টাকা পরিবহনের সময় নিজস্ব নিরাপত্তা ব্যবস্থা অর্থাৎ গার্ডের জন্য অস্ত্রসহ কোন নিরাপত্তাকর্মী ছিল না। অধিকাংশ সময় এইভাবে অধিক টাকা পরিবহন হয় যা পরিবহনকৃত টাকা নিরাপত্তা বিধানে অপ্রতুল।
টাকা পরিবহনের সময় স্থানীয় থানাকে তারা অবহিত করেনি।
তিনি বলেন, টাকা ছিনাইয়ের ঘটনায় ডিবি অভিযান চলমান রয়েছে। ছিনতাইয়ের ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট অপরাধীদের গ্রেপ্তার ও বাকি টাকা উদ্ধারের অভিযান চলছে।
এ ঘটনায় ডিএমপির তুরাগ থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
হারুন অর রশীদ বলেন, এখন পর্যন্ত ডিবির অভিযানে মোট ৬ কোটি ৪৩ লাখ ৪৮ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।