মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠ ডেস্কঃ- পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. সাইদুল ইসলাম বলেছেন, গত ১৪ বছরে ২০ বার ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সুন্দরবনের গহিন অরণ্যে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলেও এই প্রথম বন বিভাগ অপরাধীদের শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে।
এদিকে ২০০২ সাল থেকে এ পর্যন্ত ২০ বার অগ্নিকান্ডের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করলেও আলোর মুখ দেখেনি ওই তদন্ত প্রতিবেদন। তারপরেও এ বারে ছয়জনকে চিহ্নিত করে মামলা দায়েরে কে অন্য ভাবে দেখছে সুন্দরবন বিশিষজ্ঞরা।
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগ জানায়, গত বুধবার (১৩ এপ্রিল) সকালে নাংলী ক্যাম্পসংলগ্ন বনে অগ্নিককাণ্ডের ঘটনা ঘটে। বন বিভাগ এবং ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের তিনটি ইউনিট স্থানীয়দের সহায়তায় বৃহস্পতিবার (১৪ এপ্রিল) সকালে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। আগুনে সুন্দরবনের আট দশমিক ৫৫ একর বনাঞ্চল সম্পূর্ণ পুড়ে যায়। আরো ৬৬ একর বনাঞ্চলসহ জীববৈচিত্র্যের আংশিক ক্ষতি হয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তির জিপিএস ডিভাইসের মাধ্যমে সুন্দরবন বিভাগ পুড়ে যাওয়া বনাঞ্চলের এই হিসাব বের করেছে।এ ঘটনার মাত্র ১৭ দিন আগে নাংলী ক্যাম্প এলাকায় আরেকটি আগুনের ঘটনায় পুড়ে যায় প্রায় দেড় একর বনভূমি।
স্থানীয়রা জানান, বর্ষা মৌসুমে মাছ ধরার সুবিধার্থেই পরিকল্পিতভাবে সুন্দরবনে আগুন দেওয়া হয়। কয়েকটি অসাধু মৎস্য শিকারিচক্র প্রতিবছর বনে আগুন লাগিয়ে থাকে। শুষ্ক মৌসুমে তারা আগুন লাগিয়ে বন পরিষ্কার করে মাছের বিল তৈরি করে। বর্ষা এলেই শুরু হয় ওই চক্রের মাছ ধরার উৎসব। বন কর্মকর্তারা মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ওই চক্রের কাছে এসব বিল মৌসুমভিত্তিক অলিখিত ইজারা (লিজ) দেয়। সেখানে কারেন্টসহ বিভিন্ন ধরনের জাল পেতে মাছ শিকার করা হয়।
প্রতি মৌসুমে লাখ লাখ টাকা আয় হলেও সরকারের ঘরে একটি টাকাও আসে না।। আর এর সাথে জাড়িত স্থানীয় প্রভাবশালী ও বন বিভাগের এক শ্রেনীর অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারি। নাংলী ক্যাম্পসংলগ্ন আবদুল্লার ছিলার বনে আগুনের ঘটনাটি তারই অংশ বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, সুন্দরবনে প্রথম অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে ২০০২ সালের ২২ মার্চ। এর পর থেকে গেল ১৪ বছরে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের চাঁদপাই ও শরণখোলা রেঞ্জে বিভিন্ন এলাকায় অন্তত্য ২০ বার আগুন লেগেছে। এতে ৬০ একরেরও বেশি বনাঞ্চল পুড়ে যায়। এসব অগ্নিকান্ডের ঘটনায় সুন্দরী, গরান, গেওয়া, বাইন, সিংড়াসহ অনেক মূল্যবান গাছ পুড়ে যায়।
এর মধ্যে সুন্দরবন পূব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশন এলাকায়ই গত ১২ বছরে অন্তত্য ১৪টি আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। এসব অগ্নিকান্ডে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অন্তত ৪০ একর বনভূমি। তবে স্থানীয়দের হিসাবে আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত বনের পরিমাণ আরো বেশি।
মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠ ডটকম/17-04-2016/মইনুল হোসেন