muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

জাতীয়

বাংলাদেশে বিনিয়োগে আমরা নম্বর ওয়ান : মার্কিন রাষ্ট্রদূত

বাংলাদেশে বিনিয়োগে আমরা নম্বর ওয়ান : মার্কিন রাষ্ট্রদূত

ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস বলেছেন, ‘বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগে আমরা নম্বর ওয়ান। আগামীতেও বিনিয়োগের এই ধারা অব্যাহত থাকবে।’

আজ বুধবার নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে ইউনিক মেঘনাঘাট পাওয়ার লিমিটেডের (ইউএমপিএল) ৫৮৪ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্রকল্প পরিদর্শনে এসে তিনি এ কথা বলেন।

এ সময় ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন দূতাবাসের অর্থনৈতিক ইউনিটের প্রধান জোসেফ গিবলিন, ইউএমপিএলের চেয়ারম্যান মোহা. নূর আলী, ইউএমপিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক চৌধুরী নাফিজ সরাফাত, কোম্পানির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জহির উদ্দিন মোল্লা ও জিই (জেনারেল ইলেকট্রিক) গ্যাস পাওয়ারের দক্ষিণ এশিয়ার সিইও দীপেশ নন্দা উপস্থিত ছিলেন।

সকাল ৯টার দিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে পিটার হাস হেলিকপ্টারে বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প এলাকায় পৌঁছান। সেখানে চৌধুরী নাফিজ সরাফাত তাকে ফুলের তোড়া দিয়ে স্বাগত জানান। প্রকল্প অফিস প্রাঙ্গণে পৌঁছানোর পর পরিবেশ, স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা টিম মি. পিটার হাস ও অন্যান্য অতিথিদের নিরাপত্তা সরঞ্জাম প্রদান করেন।

বিদ্যুৎকেন্দ্রের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান জিই গ্যাস পাওয়ারের সাইট ম্যানেজার কালুম ডেভিড কর্নফোর্থ পিটার হাসকে প্রকল্পের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে অবহিত করেন।

এ সময় ইউএমপিএলের চেয়ারম্যান মোহা. নূর আলী বলেন, এই প্রকল্পটি বাংলাদেশের বেসরকারি খাতের সক্ষমতার প্রতীক। এটি একটি সর্বোচ্চ দক্ষ উচ্চ প্রযুক্তির বিদ্যুৎকেন্দ্র। কেন্দ্রটির কমদামের বিদ্যুৎ উৎপাদনের কারণেই বিপিডিবির কাছে মেরিট অর্ডারে শীর্ষস্থান দখল করবে।

তিনি বলেন, এই প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে বিদ্যুৎ খাতের মাস্টার প্ল্যান ও ভিশন ২০৪১-এর লক্ষ্য অর্জনের এক ধাপ এগিয়ে যাবে।

স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে এই প্রকল্পের মাধ্যমে যে ইতিবাচক পরিবর্তন আসছে তা দেখে খুশি বলেও ইউএমপিএলের চেয়ারম্যান জানান।

ইউএমপিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক চৌধুরী নাফিজ সরাফাত বলেন, ইউএমপিএল, জিই এবং নেব্রাসসহ আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের সহযোগিতায় এসইআরভি, এআইআইবি, ডিইজি এবং ওপেক তহবিল থেকে প্রকল্পে বিনিয়োগ এসেছে। এই বিনিয়োগ এখানে বিশ্বমানের অবকাঠামো নির্মাণে সাহায্য করেছে। এই বিদ্যুৎকেন্দ্র বাংলাদেশের জনগণকে পরিবেশসম্মত, নির্ভরযোগ্য এবং সাশ্রয়ী মূল্যের বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে।

তিনি জানান, এটি একটি পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ প্রকল্প। কেন্দ্রটি অন্যান্য বিদ্যমান কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্টের তুলনায় কম গ্রিন হাউস গ্যাস নির্গত করবে।

জিই গ্যাস পাওয়ারের দক্ষিণ এশিয়ার সিইও দীপেশ নন্দা বলেন, জিই গ্যাস পাওয়ার বাংলাদেশে সাশ্রয়ী, নির্ভরযোগ্য এবং টেকসই বিদ্যুৎ উৎপাদনে নতুন ও আধুনিক প্রযুক্তি আনতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। জিই বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতে বড় অবদান রেখে চলেছে। জিই ইউএমপিএল-এর প্রকল্পের অংশীদার হতে পেরে গর্বিত। কেন্দ্রটিতে জ্বালানি হিসেবে প্রাকৃতিক গ্যাস কম ব্যবহার হবে। এতে জ্বালানি কম ব্যবহার হওয়ায় গ্যাস বেঁচেও যাবে। কেন্দ্রটিতে উৎপাদিত বিদ্যুৎ প্রায় সাত লাখ বাড়িতে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।

প্রকল্প পরিদর্শনের সময় পিটার হাসকে প্রকল্পটির সর্বশেষ অবস্থা একটি পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশনের মাধ্যমে জানানো হয়। এরপর প্রকল্পটি ঘুরে দেখেন পিটার হাস।

প্রকল্প পরিদর্শনকালে মি. হাসকে জানানো হয়, ইউএমপিএলের মেঘনাঘাট বিদ্যুৎকেন্দ্রটি সব আইন মেনে নির্মাণ কাজ পরিচালনা করছে। প্রকল্পটি সামাজিক ও পরিবেশগতভাবে আন্তর্জাতিক উচ্চমান বজায় রাখছে। প্রকল্প কোম্পানি পুনর্বাসন কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে এবং প্রকল্পের ক্ষতিগ্রস্তদের যথাযথ পুনর্বাসন এবং উন্নতজীবন নিশ্চিত করার জন্য জীবিকা পুনরুদ্ধার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। প্রকল্প সংস্থাটি বেশ কয়েকটি সিএসআর (করপোরেট সোশ্যাল রেসপন্সেবিলিটি) কার্যক্রম পরিচালনা করছে। যার মধ্যে রয়েছে সুবিধাবঞ্চিতদের মাসিক ভাতা, নদী ঘাট নির্মাণ এবং ঘাটের এপ্রোচ রাস্তা, দরিদ্রদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ, দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ, গ্রামবাসীদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সহায়তা করা।

ইউএমপিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক চৌধুরী নাফিজ সরাফাত বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার ব্যবসায়িক এবং রাজনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রণী ভূমিকার জন্য পিটার হাসের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

তিনি বাংলাদেশের জন্য প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ অবকাঠামোতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির গ্যাস টারবাইন প্রদানে জিইসহ মার্কিন কোম্পানিগুলোর অবদানেরও প্রশংসা করেন।

উল্লেখ্য, নারায়ণগঞ্জের মেঘনাঘাটে ৫৮৪ মেগাওয়াট গ্যাস-ভিত্তিক কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্লান্ট নির্মাণের জন্য স্ট্র্যাটেজিক ফাইন্যান্স লিমিটেড, ইউনিক হোটেল অ্যান্ড রিসোর্টস লিমিটেড এবং জিই-এর কনসোর্টিয়াম ২০১৮ সালের ২৫ জুন এ প্রকল্পের ঠিকাদার বা ইপিসি নিযুক্ত করে জিইকে। পরবর্তী পর্যায়ে নেব্রাস পাওয়ার কিউ.পি.এস.সির প্রতিষ্ঠান ২৪ শতাংশ ইক্যুইটি অংশীদারিত্ব নিয়ে প্রকল্পে যুক্ত হয়।

প্রকল্পের উদ্যোক্তাদের সঙ্গে সরকার ও পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশের (পিজিসিবি) বাস্তবায়িত চুক্তি (আইএ), বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডি) সঙ্গে পিপিএ (পাওয়ার পারচেজ এগ্রিমেন্ট) ও ২০১৯ সালের ২৪ জুলাই তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ( তিতাস) গ্যাস সরবরাহ চুক্তি হয়। উদ্যোক্তা কোম্পানির সঙ্গে ২০১৯ সালের ৩০ আগস্ট টার্ন-কি ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের জেনারেল ইলেকট্রিকের (জিই) ইপিই বা ঠিকাদারি চুক্তি হয়। এছাড়া জিই কেন্দ্রের মূল যন্ত্রপাতি প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত।

প্রকল্প উদ্যোক্তাদের ২৫ শতাংশ ইক্যুইটি বিনিয়োগ রয়েছে। প্রকল্প ব্যয়ের বাকি ৭৫ শতাংশ স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক (সুইস ইসিএ-এসইআরভি কভার লেন্ডার), এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এআআইবি), জার্মান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (ডিইজি) এবং ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ওেএফআইডি) দিয়েছে।

ইতোমধ্যে প্রকল্পের ৯২ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবরে প্রকল্পটি বাণিজ্যিকভাবে (কর্মাশিয়াল অপারেশন ডেট-সিওডি) বাস্তবায়িত হওয়ার কথা রয়েছে।

Tags: