মোঃ সোহেল রানা (মাগুরা জেলা প্রতিনিধি):
শিক্ষায় অমনোযোগী হওয়ায় বাবা তার শিশু সন্তানের পায়ে পরিয়ে দিয়েছেন লোহার শেকল। শুধু তাই নয় শেকলের সঙ্গে ভারি কাঠ ঝুলিয়ে মাদরাসায় দিয়ে এসেছেন তিনি। কিন্তু হাফেজি শিক্ষায় অনিচ্ছুক তার সন্তানটি শেষ পর্যন্ত ভারি কাঠযুক্ত শেকল নিয়েই মাদরাসা থেকে পালিয়েছে।
নির্যাতনের শিকার আবুজার (১২) নামের ওই শিশুটিকে মাগুরা থানা পুলিশ উদ্ধারের পর বাঘারপাড়া থানা পুলিশের হেফাজতে দেয়া হয়েছে।
পুলিশ ও শেকল সহ পালিয়ে আসা শিশু আবুজারের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, তার গ্রামের বাড়ি যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার ইন্দ্রা গ্রামে। বয়স যখন সাত সে সময় তার বাবা আবদুল আলিম বাঘারপাড়ার সাদুল্যাপুর হাফেজিয়া মাদরাসায় ভর্তি করে দেন। কিন্তু হাফেজি শিক্ষায় আবুজারের কোন আগ্রহ নেই। যে কারণে সে বারবার মাদরাসা থেকে পালিয়ে যাবার চেষ্টা করে। যে কারণে শুক্রবার বাবা আবদুল আলিম পায়ের সঙ্গে শেকল বেধে ভারি কাঠ ঝুলিয়ে মাদরাসায় রেখে আসে।
কিন্তু এতেও শিশুটিকে মাদরাসায় আটকে রাখা যায়নি। রবিবার বিকালে মাদরাসার অন্যান্যদের ফাকি দিয়ে সে পালিয়ে যায়। ভারি কাঠের বোঝা সহ শেকলবাধা অবস্থায় কয়েক মাইল হেটে, বড় বড় মাঠ পেরিয়ে তারপর একটি বাসে উঠে সে মাগুরা শহরে এসে পৌছায়। রাত ১২টার দিকে মাগুরা শহরের ভায়নার মোড় বাসস্ট্যাণ্ড এলাকায় শিশুটিকে শেকল বাধা অবস্থায় ঘোরাফেরা করতে দেখে এলাকাবাসি পুলিশকে খবর দিলে তাকে উদ্ধার করা হয়।
সদর থানার এসআই মিলন জানান, পায়ে শেকল ও কাঠের বোঝা নিয়ে শিশুটি দারুন কষ্টের মধ্যে ছিল। তাকে উদ্ধারের পর শেকলমুক্ত করা হলে শিশুটি মুক্তির আনন্দ প্রকাশ করে।
নির্যাতনের শিকার শিশু আবুজার জানায়, হাফেজি পড়তে তার ভাল লাগে না। তারপরও আব্বা জোর করে শেকল দিয়ে বেধে রেখে দিয়েছে মাদরাসায়। সেখান থেকে পালাবার পর মাকে দেখতে যেতে ইচ্ছে হয়েছিল। কিন্তু বাড়িতে ফিরে গেলে বাবা মারধর করে আবারো মাদরাসায় শেকল বেধে রেখে আসবে। যে কারণে সে লুকিয়ে ফরিদপুরে খালার বাড়িতে যাবার চেষ্টা করছিল।
বিষয়টি নিয়ে সদুল্যাপুর হাফেজি মাদরাসার সুপারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সম্ভব হয়নি। তবে শিশু আবুজারের বাবা আবদুল আলিম জানান, তার দুই ছেলে। বড় ছেলেটি এবার এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। কিন্তু ছোটটিকে হাফেজ বানাবার জন্য মাদরাসায় দেয়া। কিন্তু সে পড়তে চায় না বলেই বাধ্য হয়ে শেকল বেধে দিয়েছি।
মাগুরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আজমল হুদা জানান, শিক্ষার নামে শিশুটির উপর দির্ঘদিন ধরে অত্যাচার করা হচ্ছিল। এটি অমানবিক এবং শিশু অপরাধ। শিশুটির বাড়ি এবং মাদরাসাটি যশোর জেলার বাঘারপাড়ায়। যে কারণে সোমবার রাতে সংশ্লিষ্ট থানা হেফাজতে তাকে তুলে দেয়া হয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠ ডটকম/19-04-2016/মইনুল হোসেন