বাংলাদেশ ব্যাংক আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত অনুযায়ী কাজ করছে। গৃহীত এসব কার্যক্রমের অগ্রগতি আগামী জুলাই মাস থেকে দৃশ্যমান হবে বলে জানানো হয়েছে।
রোববার আইএমএফের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে বৈঠক শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. মেজবাউল হক প্রেস বিফ্রিংয়ে এ কথা বলেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের কাজমি হলে এ প্রেস বিফ্রিং অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় সহকারী মুখপাত্র মো. সরোয়ার হোসেন ও সাঈদা খানম উপস্থিত ছিলেন।
মেজবাউল হক বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবায়ন পদ্ধতি অনুযায়ী এখনো আমাদের ৩০ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার রিজার্ভ রয়েছে। তবে আকুর বিল পরিশোধের পর ডলার রিজার্ভের পরিমাণ কমে যাবে। এ রিজার্ভ প্রতিশ্রুত পরিমাণের চেয়ে কমে যেতে পারে। তবে এরই মধ্যে জাইকা, বিশ্বব্যাংক, এডিবিসহ বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী যেসব চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন তার ইনস্টলমেন্ট শুরু এবং বৈদেশিক ঋণ ও সহায়তা পুষ্ট প্রকল্পের তহবিল ছাড় হলে রিজার্ভ বাড়বে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে গুণগত মান উন্নয়ন সংক্রান্ত শর্ত, অবকাঠামোগত মান উন্নয়ন সংক্রান্ত শর্ত এবং সাধারণ শর্ত নিয়ে আলোচনা করেছে আইএমএফ প্রতিনিধি দল। অন্যান্য শর্তের মধ্যে রয়েছে ব্যাংক আমানত, বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চায়ন, সুদ হার বাজারের ওপর ছেড়ে ও মার্কিন ডলারের একক দর ও খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনা। এসব কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা হয় বলে জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের এই মুখপাত্র।
তিনি বলেন, আইএমএফের পর্বের কিস্তির ব্যাপারে আলোচনা হয়নি। তার আগে আরও একবার অক্টোবর মাসে বাংলাদেশ সফর করবে আইএমএফ প্রতিনিধিরা।
নিত্যপণ্য আমদানিতে এলসি (ঋণপত্র) খুলতে কিছু আমদানিকারক ব্যাংকের সহায়তা পাচ্ছেন না। মুষ্টিমেয় কয়েকজন আমদানিকারক বেশি বেশি পণ্য আমদানি করছে- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, কোন গ্রাহককে বাণিজ্যিক ব্যাংক সুবিধা দিচ্ছে, কোন গ্রাহককে সুবিধা দিচ্ছে না, এগুলো দেখার কাজ বাংলাদেশ ব্যাংকের নয়। কোনো গ্রাহক এক ব্যাংক থেকে সুবিধা না পেলে অন্য ব্যাংক থেকে সেই সুবিধা নিচ্ছেন। ব্যাংক-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে এলসি খোলা হচ্ছে।
করোনা মহামারি ছাড়া উদ্ভূত বৈশ্বিক সব অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ঝুঁকি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভসহ সব বিষয়েই এখনো চালেঞ্জ রয়েছে।
ক্রমাগত মুদ্রাস্ফীতির চাপ, ট্রেডিং অংশীদারদের মধ্যে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি, প্রবাসী আয় এবং টাকার ওপর চাপের চ্যালেঞ্জ অব্যাহত রয়েছে।
রপ্তানি উন্নয়ন তহবিল (ইডিএফ) কমে আসছে। এর মানে এমন নয় যে, আগামীতে এ তহবিল অব্যাহত থাকবে না। এখন প্রয়োজন কম আছে- এ জন্য রপ্তানিকারকরা ঋণ কম নিচ্ছেন। আগামীতে হয়তো বেশি নিবে। এটা নির্ভর করছে গ্রাহকদের ইচ্ছার পর। তবে বৈদেশিক মুদ্রার পাশাপাশি স্থানীয় মুদ্রায় ১০ হাজার কোটি টাকার আরেকটি এইডিএফ গঠন করো হয়েছে। দুই তহবিলই চলমান থাকবে।
মুখপাত্র বলেন, রপ্তানি করার পর যথাসময়ে রপ্তানি আয় আসেনি, এমন অপ্রত্যাশিত আয়ের পরিমাণ এক দশমিক চার বিলিয়ন ডলার। তিন বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় সময় মতো আসেনি, এ সম্পর্কিত তথ্য সঠিক নয়। আয় দেশে ফেরত না আনা রপ্তানিকারকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
সুদহার বাজারের হাতে ছেড়ে দিলে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতে বিনিয়োগ ব্যাহত হবে- এমন প্রশ্নে মেজবা উল হক বলেন, এমন হওয়ার সম্ভাবনা নেই। জেনে বুঝেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে। এসএমই খাতের জন্য কম সুদে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিফাইনান্স ও প্রি-ফাইনান্স তহবিল রয়েছে। যেখান থেকে এসএমই খাতে ঋণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।