মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠ ডেস্কঃ-তৃতীয় ধাপে ৬১৫ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আজ ভোট। প্রথম ও দ্বিতীয় ধাপের মতো তৃতীয় ধাপেও ব্যাপক সহিংসতার আশংকা করছেন স্থানীয় ভোটার ও প্রার্থীরা। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ব্যর্থতায় প্রথম দুই ধাপের সহিংসতায় ৫৮ জনের প্রাণ গেছে।
এ ধাপের নির্বাচনেও প্রভাব বিস্তার করতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছে অস্ত্রবাজরা। তারা প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে মোটরসাইকেলে মহড়া দিচ্ছে। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থীদের এলাকায় এ ধরনের ঘটনা বেশি ঘটছে। ফলে ওইসব এলাকায় বেশি আতংক বিরাজ করছে। এসব কারণে তৃতীয় ধাপেও সুষ্ঠু ভোট গ্রহণ নিয়ে সংশ্লিষ্টদের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে। তবে প্রথম দুই ধাপের তুলনায় এবার ভালো নির্বাচনের প্রত্যাশা করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
তৃতীয় ধাপের নির্বাচন প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ সাংবাদিকদের বলেন, আমরা সবাইকে আশ্বস্ত করতে চাই- গত দুই ধাপের চেয়ে শক্ত অবস্থানে থাকবে আইনশৃংখলা বাহিনী। আপনারা (ভোটাররা) নির্বিঘেœ, নির্ভয়ে ভোট দেবেন। ভোট কেন্দ্রে যাতায়াতে কেউ বাধা দিলেই ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি বলেন, ভোট গ্রহণে অনিয়ম হলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা ও আইনশৃংখলা বাহিনীর কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ পাওয়া গেলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। নির্বাচন কমিশনও আগ থেকে সব খোঁজখবর রাখছে।
ইসি সূত্র জানায়, আজ ৬১৫ ইউপিতে সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোট গ্রহণ চলবে। লক্ষ্মীপুরের রায়পুরের দুটি ইউপিতে চেয়ারম্যান, সংরক্ষিত নারী সদস্য ও সাধারণ সদস্য সব পদে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় ওই দুই ইউপিতে ভোট হবে না। বাকি ইউপিতে ২ হাজার ৬৭২ জন প্রার্থী চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে ১৪টি রাজনৈতিক দলের মনোনয়নে ১ হাজার ৪৮৭ জন ও স্বতন্ত্রভাবে ১ হাজার ১৮৫ জন প্রার্থী হয়েছে। মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীরা। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের উল্লেখযোগ্য অংশ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির বিদ্রোহী হয়ে লড়ছেন। গত দুই ধাপে সহিংস ঘটনার বেশির ভাগই আওয়ামী লীগ ও একই দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যে সংঘটিত হয়েছিল। এবারও একই ঘটনার পুনরাবৃত্তির আশংকা করা হচ্ছে। ইসির কর্মকর্তারা জানান, প্রথম দুই ধাপের মতোই তৃতীয় ধাপে একই ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে কমপক্ষে ২০ জন পুলিশ ও আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। তবে এবার আইনশৃংখলা বাহিনীকে চরম সতর্কতামূলক অবস্থায় থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শংকা প্রকাশ করে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়ন পরিষদের বিএনপির প্রার্থী মোহাম্মদ আকতারুল আলম যুগান্তরকে বলেন, নির্বাচনের শুরু থেকেই আমার নেতাকর্মী ও এজেন্টদের ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছে সরকারি দলের নেতাকর্মীরা। আমার পোস্টার ও ব্যানার ছিঁড়ে আগুন দেয়া হয়েছে। মাইকিংয়ে বাধা দেয়া হয়েছে। এসব ঘটনায় রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে তিনটি অভিযোগ করেও প্রতিকার পাইনি। এ কারণে পরবর্তী ঘটনায় অভিযোগ করিনি। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার থেকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের ভয় দেখানো হচ্ছে। তাদের বলা হচ্ছে, চেয়ারম্যান পদে প্রকাশে এবং মেম্বার পদে গোপনে ভোট দিতে হবে। এমন পরিস্থিতিতে সুষ্ঠু ভোট নিয়ে শংকায় রয়েছি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে শ্রীপুর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও তেলিহাটি ইউপির রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, তার অভিযোগ পেয়েছি। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে ওই অভিযোগ থানায় পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার মুক্তাপাড়া ইউপির স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. বরকত উল্যাহ মিয়া নির্বাচন কমিশনে আশংকা প্রকাশ করে বলেছেন, ভোটের দিন প্রতিপক্ষ প্রার্থীর লোকজন চেয়ারম্যান পদে ভোট নিজেরাই দিয়ে দেবে এবং ভোটারদের মেম্বার পদে ভোট দিতে ব্যালট দেবে বলে প্রচার করছে। এ অবস্থায় সাধারণ ভোটারদের মনে আতংক বিরাজ এবং সুষ্ঠু ও অবাধ ভোট গ্রহণ নিয়ে তার শংকা রয়েছে বলে জানান তিনি। ওই শংকার কথা প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছাড়াও আইনশৃংখলা বাহিনীর কাছে পাঠিয়েছেন এ প্রার্থী। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার ৩নং চুন্টা ইউপির স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী শেখ হাবিবুর রহমান ইসিকে জানিয়েছেন, তার প্রতিপক্ষ চারটি কেন্দ্র দখল করে ভোট দেয়ার ঘোষণা দিচ্ছে। এতে কেউ বাধা দিলে রক্তের বন্যা বইয়ে দেয়ার হুমকি দিয়েছে। ভোটের দিন খুনখারাবির আশংকা প্রকাশ করে ওই চার কেন্দ্রে বাড়তি নিরাপত্তা চেয়েছেন এ প্রার্থী। লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জের ইছাপুর ইউপির বিএনপির প্রার্থী মো. অলি উল্যার বাড়িতে বৃহস্পতিবার হামলা, ভাংচুর ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটেছে বলে জানিয়েছেন ওই প্রার্থী। তার অভিযোগ, ভোট গ্রহণ সামনে রেখে মুখোশ পরে মোটরসাইকেলে সশস্ত্র মহড়া দিয়ে একদল সন্ত্রাসী এ হামলা চালায়। মোবাইলে ধারণ করা ওই হামলার ঘটনা ভিডিও ফুটেজও জমা দেন তিনি।
মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠ ডটকম/23-04-2016/মইনুল হোসেন