প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, নির্বাচন কমিশন আচরণবিধি প্রশ্নে কঠোর রয়েছে। কেউ আচরণবিধি না মানলে শক্ত পদক্ষেপ নেওয়া হবে। প্রার্থীদের অবশ্যই আচরণবিধি মেনে চলতে হবে। অন্যথায় আমাদের যে সংস্থাগুলো আছে তারা আইন অনুযায়ী পদক্ষেপ নেবে। নির্বাচনি আচরণবিধির প্রশ্নে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। কোনো প্রার্থী আচরণবিধির প্রশ্নে গুরুতর অপরাধ করে থাকলে তথ্য-প্রমাণ সাপেক্ষে প্রার্থিতা বাতিল করা হবে। এর আগেও আমরা নির্বাচনের আগের দিন প্রার্থিতা বাতিল করেছি। এর দৃষ্টান্ত আছে। সুতরাং সবাইকে নির্বাচন আচরণবিধি মেনে চলার জন্য আহবান জানাচ্ছি।
আগামী ২১ জুন রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।
বুধবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত রাজশাহী শিল্পকলা একাডেমিতে এ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে রাজশাহী আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়।
রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার জিএসএম জাফরউল্লাহর সভাপতিত্বে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় নির্বাচনে ইভিএমে বিরোধিতাকারীদের তিরস্কার করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, আমরা ইভিএমে অসংখ্য নির্বাচন করেছি। ইভিএমে প্রায় প্রায় ৬ হাজার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। সুতরাং এ পদ্ধতি নিয়ে আর শুনতে চাই না। যদি কারও আস্থা না থাকে, তাহলে আদালতের আশ্রয় নিতে পারেন। কারণ ইভিএমে কোনো ধরনের অনিয়ম, ম্যানিপুলেশন, টেকনিক কোনো কিছুই আমরা দেখতে পায়নি। যদি ইভিএমে ভুত কিংবা পেত্নী দেখতে পেতাম, তাহলে আমরা অবশ্যই ব্যবস্থা নিতাম। কারণ আমরাও স্বচ্ছতায় বিশ্বাস করি। আর নির্বাচন কমিশন সরকারের প্রতিনিধিত্ব করে না। নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিক নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান। আমরা আমাদের প্রতি আরোপিত দায়িত্ব নিরপেক্ষতার সঙ্গে পালন করব।
প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সুস্পষ্ট নিদের্শনা থাকবে জানিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, নির্বাচনে লেভেল প্লেইং ফিল্ড লাগবে। এটার প্রয়োজন আছে। আপেক্ষিক অর্থে এটা কম বা বেশি হতে পারে; কিন্তু প্রকৃত লেভেল প্লেইং ফিল্ড হতে পারে প্রার্থীদের মাধ্যমে। আপনারা যদি সহযোগিতা করেন তাহলে সেটা সম্ভব হবে। এ সময় ভোটারদের মাঝে আস্থা তৈরিতে সবাইকে কাজ করার আহবান জানান তিনি।
সিসিটিভির মাধ্যমে ভোট কেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করা হবে জানিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার আরও বলেন, নির্বাচনের সময় কেন্দ্রে সিসিটিভি থাকবে। এছাড়া ইলেকট্রনিক্স, প্রিন্ট ও অনলাইন মিডিয়ার দিকে আমাদের চোখ থাকবে। মিডিয়াতে বিষয়টি কিভাবে উঠে আসে সেটা অধুনা বিশ্বে গুরুত্বপূর্ণ। ভোর থেকে ভোটাররা আসবেন। লাইন ধরে দাঁড়াবেন। এখানে কোনো বিশৃঙ্খলা বা লাঠিপেটা হচ্ছে কিনা? জোরপূর্বক ভোটারদের সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে কিনা? সেটা দেখা হবে। ভেতরে মিডিয়াও থাকবে। তাদের ছবি তুলতে, কাজ করতে বাধা নেই। গোপন কক্ষের বুথ ছাড়া বাকি সর্বত্রই সাংবাদিকরা যেতে পারবেন। সাংবাদিকদের মাধ্যমেই আমরা জানতে পারবো, নির্বাচন কতটা শুদ্ধ, সিদ্ধ ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় অগ্রসর হচ্ছে। নির্বাচনকে গণতন্ত্রের সুস্থ ধারায় পরিচালিত করতে যেকোনো অপকর্ম ও অপকৌশলের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশন সজাগ থাকবে।
প্রার্থীদের উদ্দেশে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘন কিন্তু কমিশন করে না- আচরণবিধি লঙ্ঘন আপনারা করেন। আপনাদের অতি উৎসাহী সমর্থকরাই আচরণবিধি লঙ্ঘন করেন। আজকে যে অভিযোগগুলো শুনেছি, আপনারা আমাদের ওপর কোনো অভিযোগ করেননি। আপনারা পরস্পর পরস্পরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। আপনাদের নির্বাচনী আচরণ ও সংস্কৃতিতে পরিবর্তন আনতে হবে। পারস্পারিক সহিষ্ণুতার মাধ্যমে নির্বাচন প্রক্রিয়াকে সহযোগিতা করতে হবে। কেননা আপনাদের সহযোগিতা না থাকলে শুধুমাত্র নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসন শতভাগ স্বচ্ছতার সঙ্গে নির্বাচন সম্পন্ন করতে পারবে না।
এ সময় অহিংস পদ্ধতিতে নির্বাচনী কার্যক্রম পরিচালনা করে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে প্রার্থীদের সহযোগিতা কামনা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার।
মতবিনিময় সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন- নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহসান হাবিব খান (অব.), নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব জাহাংগীর আলম, রাজশাহী রেঞ্জের উপ-মহাপুলিশ পরিদর্শক (ডিআইজি) আব্দুল বাতেন, রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) কমিশনার আনিসুর রহমান, রাজশাহীর জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ, পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন রাসিক নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার দেলোয়ার হোসেন।
এদিকে অনুষ্ঠানের শুরুতেই মেয়রপ্রার্থী, কাউন্সিলরপ্রার্থী ও সংরক্ষিত আসনের প্রার্থীদের অভিযোগ শোনেন প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ সংশ্লিষ্টরা। এ সময় রাসিক নির্বাচনের চার মেয়রপ্রার্থীর মধ্যে তিন মেয়রপ্রার্থীই বক্তব্য ও দাবি তুলে ধরে বক্তব্য দেন। তবে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বক্তব্য দেননি।
এদিকে মতবিনিময় শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল জানান, নির্বাচন নিয়ে আমরা কোনো বৈদেশিক চাপ অনুভব করছি না। পেপার-পত্রিকায় বিভিন্ন চাপ আসছে, এমনটা শোনা যাচ্ছে। ইস্যুগুলো আমরা গায়েও মাখছি না। আমাদের দায়িত্ব হলো সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনগুলোকে এগিয়ে নেওয়া। আমরা সে অনুযায়ী কাজ করেও যাচ্ছি।
রাজশাহী সিটি নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, রাজশাহীর নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি কেমন হবে এটা আগাম বলতে পারব না। ভোট হওয়ার পরে আপনারা দেখতে পারবেন। তবে গাজীপুরে তো প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছে।