নিজেদের ওপর চালানো গণহত্যার বিচার ও সম্মানজনকভাবে দ্রুত মিয়ানমারে ফেরার দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে রোহিঙ্গারা। আজ বৃহস্পতিবার সকালে এ কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ২৩টি ক্যাম্পে এ মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। রোহিঙ্গা কমিউনিটির নেতারা এতে বক্তব্য দেন।
আজ সকাল সোয়া ১০টা থেকে পৃথকভাবে শুরু হওয়া মানববন্ধন ও সমাবেশ চলে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত। তীব্র গরম উপেক্ষা করে ‘গো ব্যাক হোম’ প্রতিপাদ্যে চলমান মানববন্ধনে নানা দাবি নিয়ে বক্তব্য রাখেন ক্যাম্প ও ব্লক ভিত্তিক রোহিঙ্গা কমিউনিটি নেতারা। এসময় উপস্থিত রোহিঙ্গারা একবাক্যে দাবি করে- ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস অ্যান্ড গো হোম’।
বারবার প্রত্যাবাসন নিয়ে বৈঠক হলেও কোনো মতেই শুরু হচ্ছে না প্রত্যাবাসন। তাই, দ্রুত প্রত্যাবাসন ও নিপীড়নের বিচার নিশ্চিত করার দাবিতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে মানববন্ধনে জড়ো হয়ে যান হাজারো রোহিঙ্গা। মানববন্ধন ধীরে ধীরে সমাবেশে রূপ নেয়। সমাবেশে তারা ২০১৭ সালে তাদের ওপর ঘটে যাওয়া হত্যা, ধর্ষণসহ নিপীড়নের সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন। পূর্ণ মর্যাদা নিয়ে দ্রুত প্রত্যাবাসন কামনা করেন তারা।
এ সময় নিরাপদ আশ্রয় দেওয়ায় বাংলাদেশ সরকার ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানিয়ে রোহিঙ্গা কমিউনিটি নেতারা স্বগোত্রীয়দের উদ্দেশে বলেন, আশ্রয় দিয়েছে বলে এ দেশের সরকার ও জনগণের মন খারাপ হয় এমন কোনো কাজ করা থেকে বিরত থাকতে হবে। অনেকে মাদকসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হয়ে পুরো আশ্রিত রোহিঙ্গা জাতিকে লজ্জায় ফেলেছেন।
তারা দ্রুত প্রত্যাবাসনের দাবি করলেও তা নিশ্চিত হতে কতদিন লাগে তার সঠিক হিসাব নেই। ততদিন যেন বাংলাদেশ সরকার ও স্থানীয় জনগণ রোহিঙ্গাদের সুন্দর মনে আশ্রয় দেন, সেই পরিস্থিতি বজায় রাখতে বলেন তারা।
মধুরছরা ক্যাম্পের রোহিঙ্গা সালামত খান বলেন, ‘আমরা মিয়ানমারের অবর্ণনীয় নিপীড়নের শিকার হয়েছি। নারীদের ধর্ষণ, শিশুদের হত্যা করে আগুনে নিক্ষেপ, অন্তঃসত্ত্বার পেট কেটে মা-বাচ্চা দুজনকেই হত্যার মতো বর্বরতা পৃথিবীর আর কোথাও ঘটেছে কি না জানি না। প্রাণ বাঁচাতে অন্যায়ভাবে সীমান্ত অতিক্রম করলেও বাংলাদেশ সরকার আমাদের আশ্রয় দিয়েছে। এখানে থেকে যাওয়া সম্ভব নয়, তাই মর্যাদায় বার্মায় (মিয়ানমার) ফিরতে চাই। বিশ্বনেতাদের প্রতি অনুরোধ, নাগরিকত্বসহ সম্মানজনক প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করুন।’
টেকনাফ ক্যাম্পের রোহিঙ্গা নেতা ও হেড মাঝি বজলোর রহমান বলেন, ‘জাতীয় পরিচয়পত্র এবং নাগরিকত্ব অধিকার, বসবাসের বাড়ি ও জমি, সম্পত্তি ফেরত, জীবিকা ও চলাচলের অধিকার, নিরাপত্তা নিশ্চিতসহ চারটি দাবি বাস্তবায়নে লক্ষ্যে ক্যাম্পের ভেতর মানববন্ধন ও র্যালি করেছি। আমরা চাই কোনো ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে যেন প্রত্যাবাসন কার্যক্রম বন্ধ না হয়। আমরা নিজ দেশ মিয়ানমারে ফিরতে চাই।’
রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তায় দায়িত্বরত ১৬ এপিবিএনের উপঅধিনায়ক (পুলিশ সুপার) জামাল পাশা বলেন, উখিয়া-টেকনাফের ২৩টি ক্যাম্পের রোহিঙ্গারা ১৩টি পৃথক স্থানে স্বদেশে ফেরার আকুতি জানিয়ে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে। সেখানে বক্তব্য দিতে গিয়ে পুরোনো স্মৃতিচারণকালে অনেক রোহিঙ্গা কান্নায় ভেঙে পড়েন। সবার এক বাক্যে দাবি, গণহত্যার বিচার ও সম্মানজনক প্রত্যাবাসন। এপিবিএনের পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্য বিভাগও সতর্কাবস্থায় দায়িত্ব পালন করেছে।
এদিকে, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে নেওয়া প্রকল্প বাতিল করতে বলেছে জাতিসংঘ। আজ এক বিবৃতিতে এ কথা জানায় তারা। তাদের দাবি, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরানোর মতো পরিবেশ এখনো তৈরি হয়নি। মিয়ানমারে গেলে রোহিঙ্গারা ঝুঁকিতে পড়বেন।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নির্যাতন ও গণহত্যার শিকার হয়ে রোহিঙ্গারা দেশ ছাড়া হওয়ার ৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে ২০২২ সালের ২৫ আগস্ট সমাবেশ ও মানববন্ধনের আয়োজন করে। এর আগে, ২০১৯ সালের ২৫ আগস্ট ক্যাম্পে প্রথম বড় সমাবেশ করা হয়েছিল।