কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলায় ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে জনজীবন। লোডশেডিংয়ের এমন প্রভাবে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এ অঞ্চলের সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে বেশি বিপাকে রয়েছেন এ অঞ্চলের ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ও ভ্যানচালকরা।
উপজেলার পৌর এলাকায় বিদ্যুতের কিছুটা উন্নতি থাকলেও ইউনিয়ন পর্যায়ে দেখা দিয়েছে চরম ভয়াবহতা। ইউনিয়ন পর্যায়ে দিনে-রাত মিলিয়ে বিদ্যুৎ থাকছে গড়ে ৫-৬ ঘন্টা। এ সময়ে একটি অটোরিকশা বা ভ্যানের ব্যাটারি চার্জ হচ্ছে ৪০-৪৫ শতাংশ। এতে ৩০-৩৫ কিলোমিটার রাস্তা অতিক্রম করলেই চার্জ ফুরিয়ে যাচ্ছে। ফলে পূর্ণচার্জের আয়ের পরিবর্তে আয় নেমে এসেছে অর্ধেকে।
জানা যায়, বেশিরভাগ চালক স্থানীয় অটো গাড়ির শোরুম, এনজিও বা সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে অটোরিকশা কিনেছেন। অটো চালিয়ে সংসার চালানোর পাশাপাশি প্রতি সপ্তাহে বা মাসে কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে হয়। আয় কমে যাওয়ায় সংসার ও কিস্তির টাকা নিয়ে সংকটে পড়েছেন তাঁরা। আবার কারো কারো বাড়ছে ঋণের উপর ঋণের বোঝা। কেউ কেউ পেশা বদলে অন্য পেশায় জড়িত হচ্ছেন।
জেলার আহম্মেদ ট্রেডার্সের সত্ত্বাধিকারী জসিম উদ্দিন সেন্টু জানান, ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে একদিকে অটোচালকেরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে অন্যদিকে এর প্রভাব আমাদের উপরও পড়ছে। ব্যবসায়ীক কারণে অনেকেরই বাকী দিতে হয়েছে। লোডশেডিংয়ের কারণে বাকি প্রদানে ব্যর্থ হচ্ছে চালকেরা। বাকি আদায় ১৫-২০% এ নেমে এসেছে । ফলে দিন দিন বাড়ছে ব্যাংক ঋণের চাপ।
তিনি আরও বলেন, প্রতিদিন টানা ৮ ঘন্টা চার্জ অব্যহত থাকলে নতুন একটি ব্যাটারি ২২-২৪ মাস ব্যবহার করতে পারে। কিন্তু ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে এ ব্যাটারির ৬-৮ মাসের বেশি ব্যবহার করতে পারেনা। ফলে একজন চালক ও আমরা উভয়েই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।
উপজেলা গুজাদিয়া ইউনিয়নের অটো রিকশাচালক আজিজুল জানান, স্থানীয় একটি সমিতি থেকে ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে অটোরিকশা কিনেছেন। সপ্তাহে ঋণের কিস্তি দিতে হয় ৬ হাজার টাকা। পরিবারে ছয়জন সদস্য। এই অটো চালিয়েই সংসার চালাতে হয়। লোডশেডিংয়ের আগে প্রতিদিন অটোরিকশাটি পুরো চার্জ দেওয়া যেত। তখন রোজ ৫০০- ৬০০ টাকা আয় করেছেন। এখন প্রতিদিন গড়ে ৬ ঘণ্টা বিদ্যুৎ পাচ্ছেন, তাতে অটোরিকশার ব্যাটারিতে ৪০ শতাংশ চার্জ হচ্ছে। এই চার্জে এক বেলা ভ্যান চালিয়ে ২০০-২৫০ টাকা আয় করেন। এই টাকা দিয়ে সংসার চালাবেন নাকি কিস্তি দেবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ঘুম হয় না তাঁর। কেননা দিনে দিনে ঋণের বোঝা বেড়ে যাচ্ছে। যদি এরকম লোডশেডিং আরও কিছু দিন চলে তাহলে পরিস্থিতি হবে ভয়াবহ।
শেষ পর্যন্ত ঋণের কিস্তি মেটাতে পরিবারের ভরণপোষণের একমাত্র অবলম্বন অটোরিকশাটি বাধ্য হয়ে বিক্রি করতে হবে, এমন শঙ্কার কথা জানিয়েছেন উপজেলার ন্যামতপুর ইউনিয়নের সালেহা বেগম। তিনি জানান, তার স্বামী কিছুটা শারীরিক প্রতিবন্ধী। ভারি কোন কাজ করতে পারেনা। তার উপর ছয়জনের সংসার। কিছু জমানো টাকা আর সমিতি থেকে ঋণ নিয়ে তার স্বামীকে একটি অটোরিক্সা কিনে দিয়েছিলেন। ঘন ঘন লোডশেডিংয়ের কারণে চাহিদা মত চার্জ দিতে না পারায় ৮ মাসের মধ্যেই ব্যাটারীর ৭০ ভাগ কার্যকরিতা নষ্ট হয়ে গেছে। একদিকে সংসারের ঘানি টানা অন্যদিকে সপ্তাহে ২ হাজার টাকা কিস্তি পরিশোধ করতে হলে হয় অটোরিকশাটি বিক্রি করতে হবে, না হয় সুদে ধার-দেনা করতে হবে।
উপজেলা অটোরিক্সা চালক সমিতি সূত্রে জানা যায়, পৌরসভায় প্রায় ৩৫০ এবং ১১টি ইউনিয়নে ১২০০-১৩০০ অটোরিক্সা-ভ্যানচালক রয়েছে। আগে একজন অটোরিক্সা/ভ্যানচালক দৈনিক প্রায় ৭০০-৮০০ টাকা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন। সেই টাকা দিয়ে সংসার খরচ ও কিস্তির টাকা অনায়াসে দিতে পেরেছেন। এখন লোডশেডিংয়ের কারণে প্রতিদিন এর অর্ধেক টাকা নিয়ে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে। লোডশেডিং যদি আরও কিছু দিন থাকে তাহলে পরিবার নিয়ে পথে বসতে হবে। সেই সঙ্গে গাড়ির বিভিন্ন যন্ত্রাংশ নষ্ট হবে। বিশেষ করে ভ্যানের ব্যাটারি একবার নষ্ট হলে ১৫ হাজার থেকে ১৮ হাজার টাকা লাগে।
ঘন ঘন লোডশেডিং ও উপজেলার বিদ্যুৎ পরিস্থিতির বর্তমান অবস্থা জানতে চাইলে কিশোরগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি করিমগঞ্জ জোনাল অফিসের ডিজিএম আখতারুজ্জামান অপরাগতা প্রকাশ করেন। তিনি আমার সংবাদ পত্রিকার জেলা প্রতিনিধিকে জানান, "পবিস এর যে কোন তথ্য প্রদানের ক্ষেত্রে আমি এনটাইটেল নই। কিশোরগঞ্জ পবিস এর সকল তথ্য ওয়েবসাইট এ আপলোড করা আছে। এছাড়াও কোন তথ্য প্রয়োজন হলে জি এম কিশোরগঞ্জ পবিস এর সহিত যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা হলো"। কিন্তু কিশোরগঞ্জ পবিস এর জিএম'র সঙ্গে মোবাইল ফোনে বার বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। এছাড়াও পবিস এর ওয়েবসাইটে সংশ্লিষ্ট কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।