প্রাক-শিল্পযুগের চেয়ে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে একুশ শতকের শেষ নাগাদ এমন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন বিজ্ঞানীরা।
আশঙ্কা সত্যি হলে একদিকে ভয়াবহ বন্যা দেখা দেবে, অন্যদিকে পানীয় জলের অভাবে পড়বে ২৪ কোটি মানুষ হিমালয়ের হিমবাহ শতকরা ৭৫ ভাগ অর্থাৎ ষোলো আনার মধ্যে বারো আনাই গলে যেতে পারে একুশ শতকের শেষ নাগাদ। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে এই বিপর্যয়ের মুখে পড়তে যাচ্ছে হিমালয় অঞ্চলটি। নতুন এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই পরিমাণ হিমবাহ গলে যাওয়ার কারণে প্রত্যক্ষভাবে ওই অঞ্চলের ২৪ কোটি মানুষ একদিকে ভয়াবহ বন্যা ও অন্যদিকে পানীয় জলের অভাবে পড়বে।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের জলবায়ু ও পরিবেশ প্রতিবেদক গ্লোরিয়া ডিকি গতকাল তার প্রতিবেদনে অবশ্য উল্লেখ করেছেন, সংশ্লিষ্ট সরকারসমূহ এই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে : চীন পানির সরবরাহ বাড়ানোর কাজ করছে, হিমবাহী হ্রদ থেকে সৃষ্ট সম্ভাব্য বন্যার জন্য আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা গ্রহণ করছে পাকিস্তান।
হিমালয় অঞ্চল আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, ভুটান, চীন, ভারত, মিয়ানমার, নেপাল ও পাকিস্তান পর্যন্ত সাড়ে তিন হাজার কিলোমিটার জায়গাজুড়ে বিস্তৃত।
হিমালয় এভারেস্ট ও কেটুর জন্য প্রখ্যাত। আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানীদের একটি দল ওই অঞ্চলে ধারণার চেয়ে বেশি হারে বরফ গলে যাওয়ার প্রমাণ পেয়েছেন। কাঠমান্ডুভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ইন্টিগ্রেটেড মাউনটেইন ডেভেলপমেন্ট (আইসিআইএমওডি) এই গবেষণার নেতৃত্ব দিচ্ছে। আইসিআইএমওডি এই অঞ্চলের আন্তঃসরকার বৈজ্ঞানিক কর্তৃপক্ষ।
আইসিআইএমওডির গবেষণা বলছে, চলতি শতকের প্রথম দশকের তুলনায় দ্বিতীয় দশকে ৬৫ শতাংশ বেশি হারে হিমালয়ের হিমবাহ গলেছে। এভাবে চলতে থাকলে, প্রাক-শিল্পযুগের চেয়ে তিন ডিগ্রি সেলসিয়াস বৈশি^ক তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে তিন-চতুর্থাংশের বেশি হিমবাহ উধাও হয়ে যাবে চলতি শতকের মধ্যে। এই বিপর্যয় বেশি ঘটতে পারে পূর্ব হিমালয় অঞ্চলের ক্ষেত্রে, যা নেপাল ও ভুটান পর্যন্ত বিস্তৃত। তুলনামূলক এই বৈশ্বিক উষ্ণায়ন ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে এমনকি শতকরা ৮০ ভাগ হিমবাহই গলে যেতে পারে। আর বৈশ্বিক উষ্ণায়ন যদি দেড় থেকে দুই ডিগ্রি হয়, তা হলেও শতকরা ৩০ থেকে ৫০ ভাগ হিমবাহ গলে যাবে।
আইসিআইএমওডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গঙ্গা ও সিন্ধুসহ এই অঞ্চলের ১২টি নদীর অববাহিকায় জলপ্রবাহ এই শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে সর্বোচ্চ হতে পারে। এই নদীগুলোর ওপর ১৬০ কোটির বেশি মানুষ নির্ভরশীল।
এর আগেও হিমালয়ের হিমবাহের ভবিষ্যৎ নিয়ে উচ্চতর পর্যায়ের একাধিক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে। তবে প্রযুক্তির অপ্রাচুর্যতা ও তথ্য সংরক্ষণের খামতির কারণে সব সময় সন্দেহ ছিল- আসলেই কি হিমালয়ের বরফ ওভাবে গলছে?
২০১৯ সালেও একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল আইসিআইএমওডি। কিন্তু এবারের গবেষণা প্রতিবেদনের প্রধান লেখক, পরিবেশবিজ্ঞানী ফিলিপাস ওয়েস্টার বলেছেন, ‘আগের বারের তুলনায় এবারের অনুসন্ধানে প্রাপ্ত ফলাফলের ওপর আমাদের অনেক বেশি আস্থা আছে। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের রকমফেরে ২১০০ সালের মধ্য [হিমালয়ের হিমবাহের] কী ক্ষতি হতে পারে, সে সম্পর্কে আমাদের ধারণা আরও স্পষ্ট হয়েছে।’