muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

আন্তর্জাতিক

পুতিনের বন্ধু থেকে শত্রু হয়ে উঠা কে এই বিদ্রোহী প্রিগোজিন?

পুতিনের বন্ধু থেকে শত্রু হয়ে উঠা কে এই বিদ্রোহী প্রিগোজিন?

ইয়েভজেনি প্রিগোজিন। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে বিশ্বজুড়ে আলোচিত নামগুলোর একটি। একটা সময়ে পুতিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র ছিলেন। কিন্তু সময়ের পরিক্রমায় সেই প্রিগোজিনই পুতিনের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরেছিলেন। হয়ে উঠেছেন বন্ধু থেকে শত্রু।

দীর্ঘ সময় পর্দার অন্তরালে থেকেই কাজ করেছেন ইয়েভজেনি প্রিগোজিন। এমনকি তার ভাড়াটে সেনা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ওয়াগনারও অনেকটা আড়ালে থেকেই কাজ করছিল বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ‘রাশিয়ার স্বার্থ’ হাসিলে। ওয়াগনার এবং প্রিগোজিন উভয়ই আলোচনায় আসে ২০২২ সালের শুরুতে ইউক্রেন যুদ্ধ আরম্ভ হওয়ার পর। ইউক্রেনের রণক্ষেত্রে ওয়াগনার বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে দারুণ যুদ্ধ করেছে রাশিয়ার হয়ে।

১৯৬১ সালের ১ জুন তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের সেন্ট পিটার্সবার্গে জন্ম নেন প্রিগোজিন। তার শৈশব কেটেছে নিদারুণ হতাশা এবং দুর্দশায়। কৈশোরেই চুরি এবং জালিয়াতির হাতেখড়ি হয় তার। পরে মাত্র ২০ বছর বয়সে প্রিগোজিনের জালিয়াতি এবং চুরির অপরাধে ১২ বছরের কারাদণ্ড হয়। পরে ৭ বছর সাজা ভোগ করার পর ১৯৮৮ সালে সাধারণ ক্ষমার আওতায় পড়ে ১৯৯০ সালে মুক্তি পান।

কারামুক্তির পর প্রিগোজিন মা এবং তার সৎ বাবার সঙ্গে খাবার বিক্রির পেশায় নামেন ১৯৯০ সালের দিকেই। পরে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর প্রিগোজিন নিজে রেস্তোরাঁ ব্যবসা শুরু করেন এবং এক পর্যায়ে নিজেকে বেশ উচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি ক্রেমলিনেও খাবার সরবরাহের দায়িত্ব পেয়ে যান।

যাই হোক, প্রিগোজিন এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন রাশিয়ার একই শহর অর্থাৎ সেন্ট পিটার্সবার্গের বাসিন্দা। তাদের বেড়ে উঠা সেখানেই। এরপর ১৯৯০ এর দশক থেকে এই দুজন পরস্পরের ভালো বন্ধুতে পরিণত হন। পরে পুতিনে আনুকূল্যে প্রিগোজিন ক্রেমলিনের খাবার সরবরাহের দায়িত্ব পান। অল্প সময়ের মধ্যে রুশ অলিগার্কদের একজন হয়ে উঠেন।

প্রিগোজিনের অর্থভাগ্য আরও বেশি করে খুলতে শুরু করে ২০১৪ সাল থেকে। সে সময় রাশিয়ার সমর্থনে ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চলে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনে সহায়তা দেয়ার দায়িত্ব পেয়ে যান প্রিগোজিন এবং সেখান থেকেই তার যুদ্ধের প্রতি নেশা জেগে উঠে। সেসময়েই প্রিগোজিন ওয়াগনার প্রতিষ্ঠা করেন এবং ইউক্রেনসহ বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে রাশিয়ার হয়ে লড়াই করা শুরু করেন।

ইউক্রেন ছাড়াও ওয়াগনার মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, সুদান, লিবিয়া, মোজাম্বিক, সিরিয়ার গৃহযুদ্ধে ওয়াগনারের সেনা পাঠিয়েছিলেন। সংস্থাটির বিরুদ্ধে নৃশংসতা ছাড়াও বিভিন্ন মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ রয়েছে।

যেভাবে বিদ্রোহী হয়ে উঠলেন প্রিগোজিন

ইউক্রেনের রণক্ষেত্রে লড়াইয়ের মাঝামাঝি সময় থেকে প্রিগোজিন অভিযোগ করা শুরু করেন রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু এবং সেনাপ্রধান জেনারেল গেরাসিমভ তার বাহিনীকে পর্যাপ্ত অর্থ, অস্ত্র এবং গোলাবারুদ সহায়তা দিচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে তিনি খোলাখুলিই রাশিয়ার সামরিক নেতৃত্বের সমালোচনা শুর করেন।

সর্বশেষ গত শুক্রবার (২৩ জুন) ওয়াগনার প্রধান একটি ভিডিও প্রকাশ করেন। সেখানে তিনি রাশিয়ার শীর্ষ সামরিক নেতৃত্বের প্রতি তার ক্ষোভের কথা প্রকাশ করেন এবং প্রথমবারের মতো পুতিনের ইউক্রেন হামলার মূল উদ্দেশ্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করেন।

নিজস্ব টেলিগ্রাম চ্যানেলে বিদ্রোহের ঘোষণা করে বলেন, রাশিয়ার ‘শয়তান সামরিক নেতৃত্বকে’ অবশ্যই থামাতে হবে এবং তার বাহিনী ওয়াগনারে ন্যায়ের পক্ষে লড়াইয়ে রাশিয়ার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করবে। প্রতিক্রিয়ায় রুশ গোয়েন্দা সংস্থা এফএসবি প্রিগোজিনের বিরুদ্ধে একটি মামলা ঠুকে দেয়।

পরে শনিবার ওয়াগনার প্রধান ঘোষণা দেন, তার বাহিনী ইউক্রেন থেকে রাশিয়ার অভিমুখে যাত্রা শুরু করেছে এবং সীমান্ত পেরিয়ে রোস্তভ-অন-ডন শহরটির দখলও নিয়েছে। পরে অবশ্যই সারাদিন দীর্ঘ আলোচনা শেষে বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কোর মধ্যস্থতায় অস্ত্র সংবরণ করতে সম্মত হয় ওয়াগনার।

Tags: