ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে ঘরেফেরা মানুষের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে ও নির্ধারিত সময়ে গমন নিশ্চিত করতে ২৪ ঘণ্টা সড়কে থাকবে ডিআইজি, অতিরিক্ত ডিআইজি, পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, ওসিসহ ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তারা। অনেক সময় অভিযোগকারীদের যথাসময়ে সেবা দেওয়া সম্ভব হয় না। এজন্য এবার সড়কে সক্রিয় থাকবে পুলিশের মোটরসাইকেল টহল। যাতে দ্রুত সময়ে অভিযোগ পাওয়ামাত্রই ব্যবস্থাগ্রহণ করা যায়।
আসন্ন পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে রাজধানীর গাবতলী স্থায়ী পশুর হাট সরেজমিন পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।
সোমবার (২৬ জুন) দুপুর পৌনে ১২টায় পুলিশ সদর দপ্তর ও ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে বৃষ্টি উপেক্ষা করে হাট পরিদর্শন করেন আইজিপি। এসময় ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক, অতিরিক্ত কমিশনার (অ্যাডমিন) এ কে এম হাফিজ আক্তার, অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম) ড. খ. মহিদ উদ্দিন, ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশীদ, সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামানসহ অন্যান্য কর্মকর্তা উপস্থিত রয়েছেন।
পুলিশ মহাপরিদর্শক বলেন, গত ঈদুল ফিতরে সবার সার্বিক সহযোগিতায় ঈদযাত্রা স্বস্তিদায়ক করতে পেরেছি। সাধারণ মানুষ আশ্বস্ত হয়েছেন ও যার যার গন্তব্যে নির্বিঘ্নে এবং যথাসময়ে গমন করতে পেরেছেন। এবারের ঈদযাত্রাও নির্বিঘ্ন করতে সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে।
আইজিপি বলেন, মেট্রোপলিটন পুলিশ হাইওয়ে পুলিশ, টুরিস্ট পুলিশ, জেলা পুলিশ রেলওয়ে পুলিশ, র্যাব, আর্ম পুলিশ ব্যাটালিয়ন, নৌ পুলিশ, ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশসহ সব ইউনিট একযোগে কাজ করছে। আমরা মালিক শ্রমিক, হাটের ইজারাদার ও যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলেছি। কেউ হয়রানির শিকার হচ্ছেন কি না তা জানার চেষ্টা করেছি। এখন পর্যন্ত সব স্বস্তিদায়ক রয়েছে বলে জানিয়েছেন তারা।
আইজিপি আরও বলেন, এর আগে আমরা গাজীপুর সাভার বাইপাইল এলাকা পরিদর্শন করেছি। সড়কের অবস্থার বিষয়ে মানুষের জেনেছি। ঈদযাত্রা সরজমিনে পরিদর্শন করেছি। সাধারণ মানুষ নিরাপদে নির্বিঘ্নে যার যার গন্তব্যে যাচ্ছেন। যোগাযোগ ব্যবস্থার বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে, পদ্মাসেতু হয়েছে। আগের মতো অবস্থা আর নেই যে মানুষ বাসের ছাদে চড়ে গন্তব্যে যাবেন। ঈদযাত্রায় সড়কের অবস্থার কথা ভেবে মানুষ আগে বাড়িতে নাকি রাস্তায় ঈদের নামাজ পড়বেন সেই শঙ্কায় থাকতেন, তবে সে পরিস্থিতি এখন আর নেই। গত ঈদুল ফিতরের ঈদযাত্রা ছিল স্মরণকালের স্বস্তিদায়ক।
গত ঈদের অভিজ্ঞতার আলোকে এবারের ঈদযাত্রা নিশ্চিতে সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
সাধারণ যাত্রীদের উদ্দেশে আহ্বান জানিয়ে আইজিপি বলেন, যেকোনো সমস্যায় প্রয়োজনে নিকটস্থ পুলিশে খবর দিন অথবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করুন। আপনার অভিযোগ জানান, পুলিশ দ্রুত সময়ের মধ্যে আপনার অভিযোগের নিষ্পত্তি করবেন।
ফিটনেসবিহীন ও লাইসেন্সবিহীন যানবাহন না চালানোর জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়েছে, টেলিভিশনে টিভিসি চালানো হয়েছে। খালি পিকাপ বা ট্রাকে যাত্রী হিসেবে উঠবেন না। এরপরও যদি কোনো যাত্রী ট্রাক-পিকাপে ওঠেন তাহলে পুলিশ সদস্যরা দেখামাত্রই তাদের সড়কে নামিয়ে দেবেন। সুতরাং নেমে ভোগান্তিতে পড়ার আগে স্বাভাবিক গণপরিবহন ব্যবহার করুন। অতিরিক্ত যাত্রী হিসেবে বাসে, ট্রেনে বা নৌপরিবহনে গমন না করতে অনুরোধ জানান আইজিপি।
তিনি বলেন, ঈদুল ফিতরের চেয়ে ঈদুল আজহায় পুলিশের দায়িত্ব বেশি। এবার সড়কে শুধু ঈদযাত্রায় কোরবানির হাটের নিরাপত্তা দিতে হচ্ছে পুলিশকে। পাশাপাশি মৌসুমি ফল ও কোরবানির হাটে পশুবাহী যানবাহনকে নিরাপত্তা দিচ্ছে পুলিশ।
আইজিপি হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, যারা জাল টাকার কারবার করেন তারা হুঁশিয়ার হয়ে যান। আমরা গত দুই মাসে ৩ কোটি ৬১ লাখ জাল টাকা উদ্ধার করেছি, গ্রেপ্তার করেছি কারবারিদের। সাম্প্রতিক সময়ে দেড় কোটি জাল টাকা উদ্ধার ও কারবারিদের গ্রেপ্তার করেছি। অজ্ঞানপার্টি মলমপার্টি, ছিনতাইকারিসহ যারা প্রতারণার সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। সাবধান হয়ে যান, প্রতারণামূলক কাজে জড়ালে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। কেউ প্রতারিত হলে সঙ্গে সঙ্গে ৯৯৯ নম্বরে খবর দিন, পুলিশ ব্যবস্থা নেবে।
ঈদের ছুটিতে যারা ঢাকাসহ শহর ছেড়ে গ্রামের বাড়িতে যাবেন তাদের উদ্দেশে আইজিপি বলেন, আমরা ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য। বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্রে ঈদ উপলক্ষ্যে জনসমাগম বাড়বে সে কারণে নিরাপত্তা নিশ্চিতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পুলিশ কর্মকর্তারা দিবারাত্রি দায়িত্বে নিয়োজিত থাকবেন।
ঈদে যারা ঢাকা শহর ছেড়ে ঈদ করতে গ্রামের বাড়িতে যাবেন, তারা নিজেদের প্রয়োজনীয়, গুরুত্বপূর্ণ, মূল্যবান জিনিসপত্র সযত্নে ও নিরাপদে রেখে যাবেন। কেউ কোনো সমস্যায় পড়লে পুলিশকে জানান, ফাঁকা ঢাকার নিরাপত্তা নিশ্চিতে ইউনিটকে নির্দেশনা দেওয়া রয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে আইজিপি বলেন, সড়ক শৃঙ্খলা নিশ্চিত করার জন্য পুলিশের পক্ষ থেকে প্রচারণা চালানো হয়েছে। মার্কেটে চুরি-ডাকাতি ঠেকাতে পুলিশের একাধিক টিম নিয়োজিত রয়েছে। কেউ ভোগান্তিতে বা প্রতারিত হলে অপরাধের শিকার হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে পুলিশকে জানান পুলিশ তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।