দিনাজপুরে হঠাৎ বিকট শব্দে মাটি দেবে গর্ত তৈরি হওয়ায় গ্রামবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। অনেকে বিষয়টি ‘অলৌকিক’ মনে করলেও বিশেষজ্ঞরা জানান, মাটির নিচে পানির স্তর নেমে যাওয়ায় এমনটি হচ্ছে।
গত শুক্রবার রাতে সদর উপজেলার শশরা ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের উমরপাইল বালুপাড়া গ্রামে হঠাৎ করেই কমপক্ষে ১০টি গর্ত তৈরি হয়। প্রতিটি গর্তের গভীরতা প্রায় তিন থেকে চার ফুট।
স্থানীয়রা জানান, সকালে ওইসব জমিতে বৃষ্টির পানি জমে। পরে গ্রামবাসী ঘুমের মধ্যে বিকট শব্দ শুনতে পান। ঘুম থেকে জেগে তারা শব্দের উৎসের কাছে গিয়ে গর্তগুলো দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। গর্ত সৃষ্টির ঘটনাকে কেউ বলছেন- অলৌকিক ঘটনা, কারও কাছে তেলের খনি থাকার সম্ভাবনা।
খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ফায়ার সার্ভিসের প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। গর্তগুলো দেখতে বিভিন্ন স্থান থেকে ছুঁটে আসছে মানুষ।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোকসেদ আলী রানা জানান, গর্তগুলো দেখতে উৎসুক মানুষ ভিড় জমাচ্ছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতনদের জানানো হয়েছে।
এ বিষয়ে সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সাথী দাস গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বিষয়টি আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। সড়কের পাশেও কয়েকটি গর্ত তৈরি হয়েছে। বিষয়টি সড়ক বিভাগকেও জানানো হয়েছে।’
হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃত্তিকা বিভাগের শিক্ষক শাহাদাত খান গণমাধ্যমকে এ বিষয়ে বলছেন, ‘মাটির নিচে পানির স্তর নেমে যাওয়ায় এমনটি হচ্ছে। যাকে সিংকহোল বলা হয়।’
আমেরিকার ভূতত্ত্ব জরিপ সংস্থার মতে, ভূগর্ভস্থ পানি অথবা খনিজ উত্তোলন করা হলে মাটির অভ্যন্তরে ফাঁপা জায়গা তৈরি হয়। নিচের স্তরের মাটি যখন ভূমির ওপরের চাপ নিতে পারে না তখনই ধসে পড়ে আর তৈরি হয় বিশালাকার গর্ত তথা সিংকহোল। রাস্তায়, খেলার মাঠে, ফসলি জমি কিংবা উন্মুক্ত প্রান্তরে যে কোনো সময় তৈরি হতে পারে এমন সিংকহোল। ভিন্ন ভিন্ন এলাকাভেদে সিংকহোলের আকার বা গভীরতাও একেক রকম হয়ে থাকে।
আপাতদৃষ্টিতে এটিকে প্রাকৃতিক ঘটনা মনে করা হলেও এসব গর্ত সৃষ্টির পেছনে রয়েছে মানুষের কর্মকাণ্ড। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা ও জলবায়ু সংকটের সরাসরি প্রভাবে মনুষ্য বসতির কাছাকাছি এ ধরনের সিংকহোল উদ্ভব হচ্ছে।
এদিকে জানমালের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে সিংকহোলের দিকে নজর রাখার আহবান জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা।