ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম বলেছেন, ‘ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার সড়কের সিগনাল নিয়ন্ত্রণ হবে সফটওয়্যারের মাধ্যমে। সেই প্রযুক্তি নিয়ে এসেছি। এখন বাস্তবায়নের সময়। এরই মধ্যে গুলশান-২-এর মোড়ে সড়ক সংকেত নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে ডিএনসিসির কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে। পুলিশের কাজ হাত দিয়ে গাড়ি থামানো না, পুলিশ আইনভঙ্গকারীকে শাস্তি দেবে।’
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে নগর ভবনে অনুষ্ঠিত সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ক সাংবাদিকতা কর্মশালার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়র এ কথা বলেন। কর্মশালায় বিভিন্ন জাতীয় গণমাধ্যমের ২৫ জন সাংবাদিক অংশ নেন। সমাপনী অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী সাংবাদিকদের হাতে সনদপত্র তুলে দেন মেয়র।
এ সময় আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘দেশের বাইরে কোনো সড়ক একমুখী করলে সেটার ওপর গবেষণা হয়। গবেষণা ছাড়া কাজ করলে সেটি স্থায়ীত্ব হবে না। বিশ্বব্যাপী নিরাপদ সড়কের ধারণা নিয়ে সঠিক সিদ্ধান্তটি নিতে হবে।’
মেয়র বলেন, ‘গুলশান-২ মোড়ে সিগন্যালটা ডিএনসিসি নিয়ন্ত্রণ করছে। আর্টিফিসিয়াল ইনটেলিজেন্সির মাধ্যমে ট্রায়ালভিত্তিক এক মাস চালাচ্ছিলাম। আনুষ্ঠানিকভাবে আগামী ১১ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পরীক্ষামূলক এ কাজটি দেখানো হবে। গুলশান-২ দিয়ে শুরু হবে, এরপর ধীরে ধীরে অন্য সড়কেও ডিএনসিসির কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের মাধ্যমে সড়ক সংকেত নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।’
মেয়র আরও বলেন, ‘গত এক মাসে গুলশান-২ মোড়ে ৩ লাখের ওপরে সিগন্যাল ব্রেক করেছে। এসব তথ্য কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষে রয়েছে। এখন সব প্রস্তুতি শেষ এবার বাস্তবায়নের পালা।’
তিনি বলেন, ‘সড়কে অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তির জীবনে ও পরিবারে গতির ছন্দপতন ঘটায়, সার্বিকভাবে উৎপাদনশীলতা ও অর্থনীতির ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে। গবেষণায় দেখা যায়, রোড ক্রাশে মৃত্যুর বেশিরভাগই শিশু ও তরুন, যারা দেশের সম্ভামনাময় এবং কর্মক্ষম অংশ। যারা দেশের জন্য আরও অবদান রাখতে পারে। তাই রোড ক্রাশ কমিয়ে আনার লক্ষ্যে ডিএনসিসি আওতাধীন সড়ক নিরাপদ করতে কাজ করে যাচ্ছে।’
ডিএনসিসি মেয়র বলেন, ‘ঢাকা উত্তরের সড়কে পথচারীদের প্রাধান্য দেওয়া হবে। এজন্য ফুটপাথ প্রশস্ত, নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দময় করা, ফুটপাথ হতে নির্মাণ সামগ্রী ও অবৈধ দোকান উচ্ছেদ এবং হকারদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মধ্যে আনা হচ্ছে। রাস্তা পারাপারে পর্যাপ্ত জেব্রা ক্রসিং বা পদচারী সেতুর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’
ডিএনসিসির সেবা গ্রহণকারী নাগরিক ও সেবা প্রদানকারী সরকারি সংস্থাগুলোকে ফুটপাথ ও সড়কে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হতে বিরত থাকার আহ্বান জানান মেয়র। তিনি বলেন, ‘নাগরিক সেবা প্রদানকারী কোনো সংস্থা কর্তৃক জরুরি প্রয়োজনে ফুটপাথ ও সড়ক কাটার প্রয়োজন হলে অবশ্যই ডিএনসিসিকে অবহিত ও প্রয়োজনীয় অনুমতি গ্রহণ করতে হবে।’
আতিকুল ইসলাম আরও বলেন, ‘সড়কের সমস্যা সমাধানে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা প্রয়োজন। সকল গণমাধ্যমে ট্রাফিক আইন ও রোড ক্রাশ নিয়ে প্রচারণা কর্মসূচি পরিচালনা করা প্রয়োজন। ডিএনসিসির পক্ষ থেকে সিগন্যালে গাড়ি থামানো ও আইন মেনে চলা, পথচারীদের সড়ক পারাপারে সহায়তা, বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালানো ইত্যাদি বিষয়ে প্রচারণার উদ্যোগ নেওয়া হবে। বিশেষ করে সিগন্যালগুলোতে সাইনবোর্ড স্থাপন করা হবে। ডিজিটাল স্ক্রিনগুলোতে প্রচারের উদ্যোগ নেওয়া হবে।’
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহ. আমিরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে নিয়োজিত বৈশ্বিক সংস্থা ভাইটাল স্ট্রাটেজিস’র টেকনিক্যাল এডভাইজর রোড সেফটি আমিনুল ইসলাম সুজন।