ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি ব্যবহার করে নামজারি শুনানির তারিখ ফোন করে জানানোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ভূমি মন্ত্রণালয়। নামজারি সেবা সম্পন্ন হবার পর সেবা গ্রহণকারী সেবার মানের বিষয়ে মতামতও দিতে পারবেন।
আজ রোববার রাজধানীর তেজগাঁওয়ে অবস্থিত ভূমি ভবন মিলনায়তনে এ সম্পর্কিত ‘দেশব্যাপী কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে ভূমিসেবার গুণগত মান মূল্যায়ন ও স্মার্ট নামজারি শুনানির নোটিশ প্রদান কার্যক্রম’-এর উদ্বোধনের সময় তিনি এ কথা বলেন। ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী বলেন, আজকের এই সেবা কার্যক্রম চালুর মধ্যে দিয়ে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রযুক্তির সাহায্যে ভূমিসেবা প্রদান শুরু করে এক নতুন যুগে প্রবেশ করল ভূমি মন্ত্রণালয়। যা সত্যিই এক বিশাল অর্জন, এক বিপ্লব।
তিনি আরও বলেন, ‘ভূমি মন্ত্রণালয় সেবামুখী মন্ত্রণালয়। আমরা সেই সে কথা মাথায় রেখেই কাজ করছি। যা করছি তা টেকসই করে করার চেষ্টা করছি। আমরা সিস্টেম এমনভাবে স্থাপন করছি যেন দুর্নীতির সুযোগই না থাকে। তবে আমরা মনে করি ভূমি মন্ত্রণালয়ের এখনো অনেকদূর যেতে হবে।’
রাজধানীর ভূমি ভবনে স্থাপিত নাগরিক সেবা কেন্দ্রের সফলতার ধারাবাহিকতায় দেশের প্রতিটি জেলায় সার্ভিস সেন্টার স্থাপন করার পরিকল্পনার কথা জানান ভূমিমন্ত্রী।
মন্ত্রী আরও জানান, নামজারি শুনানির তারিখ ফোন করে জানানোর ‘ওয়ান ওয়ে’ ব্যবস্থা আগামী সেপ্টেম্বর থেকে ‘টু-ওয়ে’ তে উন্নীত করা হবে। ফলে নাগরিকরা কথোপকথনেও অংশ নিয়ে বিস্তারিত জানতে পারবেন ও পাল্টা প্রশ্ন করতে পারবেন তাদের আবেদন সেবার বিষয়ে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে বসবাসকারী নাগরিকের কথা বিবেচনা করে এই সেবা সিলেটি, চাটগাঁইয়াসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষায়ও দেওয়া যায় কিনা তারও সক্ষমতা যাচাই করা হবে।
ভূমি সচিব মো. খলিলুর রহমান জানান, সরকারের ২০৪১ সালের মধ্যে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলার পরিকল্পনাকে সামনে রেখে, স্মার্ট প্রযুক্তি ব্যবহার করে ভূমি সেবাকে জনবান্ধব করে গড়ে তোলার জন্য প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেছে ভূমি মন্ত্রণালয়।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের ডিকেএমপি অনুবিভাগের যুগ্মসচিব ড. মো. জাহিদ হোসেন পনির উদ্বোধনকৃত কার্যক্রম নিয়ে একটি সচিত্র উপস্থাপন করেন।
বাংলাদেশের সরকারি দপ্তরসমূহের মধ্যে প্রথমবারের মত ভূমি মন্ত্রণালয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) অটোমেটিক ভয়েস কল সিস্টেম চালু করল।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নাগরিকদের মোবাইল নম্বরে কলের মাধ্যমে নামজারি শুনানির তারিখ জানিয়ে দেওয়ার কার্যক্রম স্থাপন করার সঙ্গে সঙ্গে ভূমি মন্ত্রণালয় মাল্টি-চ্যানেল ভিত্তিক নাগরিক সেবা (কাস্টমার সার্ভিস) প্রদানে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য ভূমিসেবাতেও যুক্ত হবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা।
এছাড়া, বাংলাদেশের সকল উপজেলা ভূমি অফিসের নামজারি সেবার গুণগত মান সম্পর্কে ফিডব্যাক দিতে পারবেন তারা। এর জন্য নামাজারি সেবা গ্রহণের পর একটি স্বয়ংক্রিয় ফোনকল করা হবে। এর মাধ্যমে নাগরিক নামজারি বিষয়ক সন্তুষ্টি বা অসন্তুষ্টির কারণ জানাতে পারবেন।
কোনো সুনির্দিষ্ট নামজারি মামলার সিদ্ধান্তের বিষয়ে অসন্তুষ্টির কারণটি ডিজিটাল উপায়ে সংগ্রহ করে শীঘ্রই ড্যাশবোর্ড land.gov.bd-এ প্রদর্শন করা হবে যা নিয়মিত মনিটরিং এর আওতায় আসবে। প্রাপ্ত মতামত মনিটরিং ও বিশ্লেষণ করে প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আজকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভূমি সংস্কার বোর্ডের চেয়ারম্যান মো. আবু বকর ছিদ্দীক এবং ভূমি আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান এ কে এম শামিমুল হক ছিদ্দীকী। অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আব্দুল বারিকসহ ভূমি মন্ত্রণালয় ও আওতাভুক্ত দপ্তর এবং মাঠ পর্যায়ের ভূমি অফিসের বিভিন্ন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।