গণ অধিকার পরিষদের নুরুল হক নুরের সঙ্গে বৈঠকের পাশপাশি ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের এজেন্ট মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানেরও বৈঠক হয়েছে। সময় সংবাদকে দেয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে এর সত্যতা নিশ্চিত করেছেন সাফাদি নিজেই। তবে, কী বিষয়ে আলোচনা হয়েছে তা বলতে চাননি তিনি।
নুরুল হক নুরের সঙ্গে সাক্ষাতের পর নতুন করে আলোচনায় আসে ইসরাইলের সাবেক গোয়েন্দা ও সাফাদি সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল ডিপ্লোম্যাসি, রিসার্চ অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনসের পরিচালক মেন্দি এন সাফাদি। তবে এর আগেও ২০১৬ সালে বিএনপির সে সময়ের যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীর সঙ্গে সাক্ষাতের আলোচনায় ঝড় ওঠে বাংলাদেশে।
তখন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাতে ইসরায়েলিদের সঙ্গে আঁতাত করেছেন। পরে ২০১৬ সালের ১৫ মে দেশে ফেরার পর রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলায় গ্রেফতার হন আসলাম।
সময় সংবাদের সঙ্গে বিশেষ সাক্ষাৎকারে সাফাদি আসলাম চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠকের কথা স্বীকার করলেও এ নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলেননি।
সাফাদি বলেন, ‘আমাদের এখনকার আলোচনা নুরকে নিয়ে। আসলাম চৌধুরী বা অন্য বিরোধী নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে আরেকদিন অন্য কোনো ইন্টারভিউয়ে কথা বলা যাবে।’
এ সময় তারেক রহমানের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকের বিষয়ে হ্যাঁ-নাতে উত্তর জানতে চাইলে মেন্দি ‘হ্যাঁ’ বলে উত্তর দেন। পাশাপাশি বলেন, ‘আমাদের আলোচনা নুরকে নিয়ে। অন্যদের বিষয়ে অন্য কোনো ইন্টারভিউয়ে কথা বলা যাবে।’
তারেকের সঙ্গে বৈঠকে কী বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল তার বিস্তারিত জানাতে চাননি মেন্দি এন সাফাদি।
তবে বছরের শুরুতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে ভার্চুয়াল মিটিংয়ের ভিডিও ফাঁস হলে নিশ্চিত করে সাফাদি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দিয়েছিলেন।
তারেককে বাংলাদেশে ফেরানোর আশ্বাস সাফাদির
ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের এজেন্ট মেন্দি এন সাফাদির সঙ্গে বিএনপির এক নেতার কথোপকথনের নতুন একটি চাঞ্চল্যকর ভিডিও ভাইরাল হয় বছরের শুরুতে। ভিডিওতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে উদ্দেশ করে কথা বলতে দেখা গেছে মেন্দিকে। তার পেছনে দাঁড়ানো ছিলেন বিএনপির কৃষি বিষয়ক সহসম্পাদক ও তারেক রহমানের ঘনিষ্ঠ কৃষিবিদ চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল ফারুক ও বিএনপিপন্থি সাংবাদিক মামুন স্ট্যালিন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এতে বোঝা যাচ্ছে তারেক রহমানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা রয়েছে এই ইসরাইলি গোয়েন্দার।
ভিডিওতে তারেক রহমানকে উদ্দেশ করে সাফাদিকে বলতে শোনা যায়, ‘শুভ সকাল তারেক রহমান। আমি মেন্দি। আপনার প্রতিনিধি দলের সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়েছে। আমরা বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছি। আমি মনে করি, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যা নিয়ে আমি কাজ করছি। যেসব তথ্য আমি চেয়েছি এবং যেগুলো পেয়েছি; সব বিষয়েই আমাদের আলোচনা হয়েছে। আমাদের মিশন সম্পর্কে কথা হয়েছে।’
তারেক রহমানকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়ে সাফাদি বলেন, ‘সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, আমার পেছনে যে টিম রয়েছে, তারা আমাদের মিশন সফল করার জন্য কাজ করছে। এ টিম বাংলাদেশের মানুষের মুক্ত জীবন ও গণতন্ত্র নিশ্চিত করবে।’
তারেক রহমানকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে আনারও আশ্বাস দিয়েছেন মেন্দি সাফাদি। তিনি বলেন, ‘আমি আশা করি, এ টিম আপনাকে বাংলাদেশের নেতা হিসেবেও প্রত্যাবর্তন করাবে।’
এছাড়া দেশে দণ্ডিত হয়ে লন্ডনে পলাতক তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাতের প্রত্যাশা জানিয়ে সাফাদি বলেন, ‘ধন্যবাদ। আশা করি, আপনার সঙ্গে খুব শিগগিরই লন্ডনে দেখা হবে।’
এই ভিডিওটি কবে ধারণ করা হয়েছে সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য এখনও পাওয়া যায়নি। আওয়ামী লীগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড ইনফরমেশনের (সিআরআই) সমন্বয়ক তন্ময় আহমেদ সময় সংবাদকে বলেন, ‘মেন্দি যখন তারেক রহমানের সঙ্গে কথা বলছিল, তখন সামনে দাঁড়িয়ে কেউ ভিডিও করেছে। তাদের চক্রের লোকজনই এই ভিডিও ফাঁস করেছেন। নাহলে এটা কখনোই আমাদের পাওয়ার কথা না। ভিডিও পাওয়ার পর, সেটির সত্যতাও আমরা নিশ্চিত করেছি।’
মেন্দির সঙ্গে তারেক রহমানের যোগাযোগের কারণ জানতে চাইলে তন্ময় বলেন, ‘তারা ইসরাইলি কানেকশনের মাধ্যমে পশ্চিমা দেশগুলোর মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের ওপর চাপ বাড়াতে চায়। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কথা বলাতে চায়। তারা মূলত বিএনপির এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চাইছে।’
সরকারকে চাপে রাখতে তারা ইসরাইলি গোয়েন্দাদের ব্যবহার করছে জানিয়ে তন্ময় আহমেদ বলেন, ‘তারেককে উদ্দেশ করে মেন্দি কথা বলছেন। এটি কোনো তুচ্ছ বিষয় না, অনেক বড় বিষয়। সেভাবেই গুরুত্ব দিয়ে দেখা উচিত।’
কে এই সাফাদি
ঢাকায় নিযুক্ত ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত ইউসুফ এস ওয়াই রামাদান জানান, মেন্দি সাফাদির আসল নাম মুনজের সাফাদি। তিনি গুলেন হায়েস্তের একজন সিরীয়। ওই জায়গাটা ১৯৬৭ সালে ইসরাইল দখল করে নেয়।
পরবর্তী জীবনে মোসাদে যোগ দেয়ার কারণে মেন্দি সাফাদিকে তার বাবা-মা ও ভাই-বোন ছেড়ে চলে যায়। কারণ তিনি নিজের পরিবারের সম্মানহানি করেছেন। এ অবস্থায় গুলেন হায়েস্ত ছেড়ে তেলআবিবে চলে আসেন সাফাদি। বর্তমানে তিনি সাফাদি সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল ডিপ্লোম্যাসি, রিসার্চ অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনসের পরিচালক।