সিরাজগঞ্জে আবারও যমুনার পানি বাড়ছে। উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ শহর রক্ষা বাঁধ হার্ড পয়েন্ট এলাকায় ৯ সেন্টিমিটার ও কাজীপুর মেঘাইঘাট পয়েন্টে ৮ সেন্টিমিটার বেড়েছে। ভাঙনের আতঙ্কে নির্ঘুম রাত কাটছে নদী তীরবর্তী মানুষ।
দেখা গেছে, পানি বাড়ার সাথে সাথে জেলার এনায়েতপুরে তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। গত দুই দিনে এই এলাকায় ১০টি বসতভিটা নদীতে বিলীন হয়েছে। বিলীন হচ্ছে গাছপালা, বসতবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ফসলি জমি।
প্রতিদিনই নদীতে বিলীন হচ্ছে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর, এনায়েতপুর ও চৌহালী উপজেলার বিস্তৃর্ণ এলাকা। ভাঙনের মুখে থাকা ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন এলাকাবাসী। অনেকে দিন কাটছেন খোলা আকাশের নিচে। এনায়েতপুর থেকে শাহজাদপুর উপজেলার পাঁচিল পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার নদীর ডানতীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ কাজ চলমান থাকায় ভাঙন দেখা দেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন দুর্গতরা।
এদিকে ভাঙনের কবলে পড়ে গত এক সপ্তাহে কাজীপুরে মেঘাই ঘাট এলাকায় স্পার বাঁধের ৩০ মিটার বাঁধসহ এনায়েতপুর, চৌহালী ও শাহজাদপুরে বসতবাড়ি, ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। হুমকির মুখে রয়েছে বসতবাড়ি, ফসলি জমিসহ নানা স্থাপনা।
প্রায় দেড় বছর আগে ৬৪৭ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন হয়ে সিরাজগঞ্জের যমুনা নদীর এনায়েতপুরের ব্রাহ্মণগ্রাম থেকে পাঁচিল পর্যন্ত সাড়ে ৬ কিলোমিটার ভাঙন প্রতিরোধে কাজ শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিন্তু স্থানীয়দের অভিযোগ, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতির কারণে কাজে ধীরগতি। আর এতেই গত দেড় বছরের ভাঙনের কবলে পড়ে বসত বাড়ি আর ফসলি জমি হারিয়ে নিঃস্ব হয়েছে কয়েক হাজার পরিবার। বিশেষ করে গত ১৫ দিনে ভাঙনের কবলে পড়ে ব্রাহ্মণগ্রাম ও আড়কান্দি, জালালপুরসহ দক্ষিণাঞ্চলে শতাধিক বসতভিটা নদী গর্ভে চলে গেছে। এছাড়া চৌহালী ও বেলকুচিতে যমুনার উভয় তীরেই চলছে ভাঙন।
এনায়েতপুরের জালালপুর গ্রামের ফজল বলেন, আগে বাড়ি ছিল পাকরতলায়। এখন জালালপুরে থাকি। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকরতলায় আমার বাড়ি ছিল। ২৫ বছর সেই বাড়িতে বসবাস করেছি। সাড়ে ১৬ ডিসিমালের বাড়ি, দুই বিঘা জমি, চারটি ঘর সব এখন নদীগর্ভে চলে গেছে। এখন গ্রামের একটি মাদ্রাসার জমিতে বসবাস করছি।
ভাঙনকবলিত আব্দুস সালাম বলেন, নদী ভাঙনে ৫ বার বাড়ি ঘর হারিয়েছি। বাড়ি পরিবর্তন করে জালালপুরে আশ্রয় নিয়েছি। এবারও ঘরের কোনায় নদী চলে এসেছে। যে কোন সময় বসত বাড়ি নদীতে চলে যাবে। বসত ঘর ভেঙে পানির দামে বিক্রি করেছি। এনায়েতপুর থেকে শাহজাদপুর উপজেলার পাঁচিল পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার নদীর ডানতীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ কাজ শুষ্ক মৌসুমে করতে পারলে নদী ভাঙত না।
সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, প্রকল্পের কাজ অব্যাহত রয়েছে। এই প্রকল্প শেষ হতে আরও কিছুটা সময় লাগবে। এনায়েতপুর, জালালপুর, হাটপাঁচিল ও চৌহালীতে ডাম্পিং কাজ চলছে। বর্ষকালে পানির জন্য প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন কঠিন।