এ-গাছ থেকে ও-গাছ, এক বিল্ডিংয়ের ছাদ থেকে আরেক বিল্ডিংয়ের ছাদ, কখনও বাড়ির সীমানাপ্রাচীরের ওপর, আবার কখনও টিনের ঘরের চালে দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করছে বিরল প্রজাতির এক ক্ষুধার্ত মুখপুড়া হনুমান। নিজের সীমানা থেকে বেরিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে পরিবারচ্যুত হনুমানটি। আর ক্ষুধা নিবারনে খাচ্ছে লতাপাতা কিংবা মৌসুমী ফল।
কোনোভাবে পথ হারিয়ে দল ও পরিবারচ্যুত হয়ে বড় আকারের এ হনুমানটি এখন বৃহত্তর হাওড়াঞ্চলের প্রবেশদ্বার হিসাবে খ্যাত কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলায় নতুন অতিথি হিসাবে অবস্থান করছে।
গত মঙ্গবার সরেজমিনে খুঁজ নিয়ে দেখা যায়, উপজেলার ন্যামতপুর, সুতারপাড়া ও দেহুন্দা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে বাড়ি এবং বাগানে ঘুরে বেড়াচ্ছে হনুমানটি। মানুষ দেখলেই ভয় পাচ্ছে। গাছ থেকে মাটিতে নামছে না। উৎসুক লোকজন মাঝে মাঝে নিচ থেকে গাছের ডালে কলা ও পাউরুটি ছুড়ে দিচ্ছেন। হনুমানটি সেগুলো ধরে খেলেও বেশিক্ষণ একস্থানে অবস্থান করছে না।
বৌসা বাজার এলাকার এরশাদ মিয়া জানান, তাড়াইল উপজেলার দিগধাইর ইউনিয়নের বৌসা বাজারে (করিমগঞ্জ উপজেলার ন্যামতপুর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী) গত ২৭ জুলাই সকালে একটি বট গাছে প্রথম হনুমানটি দেখা যায়। লোকজন এগিয়ে এলে এটি দ্রুত অন্যত্র চলে যায়। তবে স্থানীয় লোকজন তাকে খাবার দিলেও কেউ কেউ তাকে বিরক্ত করছে। এই খবর স্থানীয়দের মাঝে ছড়িয়ে পড়লে, এটি দেখতে ভিড় করছে উৎসুক জনতা।
ন্যামতপুর ইউনিয়নের দেওপুর গ্রামের আব্দুল কাইয়ুম জানান, হনুমানটি কখনো মোবাইল ফোনের টাওয়ারে আবার কখনো উঁচু বিল্ডিংয়ের ছাদে বসে থাকছে। আবার কেউ হনুমানটিকে দেখলেই ঢিল ছুড়ছে আবার কেউ খাবার দিচ্ছে। এভাবেই প্রায় ১ মাস ধরে খেয়ে না খেয়ে অনেকটা ক্লান্ত হয়ে পড়ছে হনুমানটি।
মাদ্রাসা শিক্ষক আবুল হাশেম বলেন, সকালে ঘুম থেকে উঠে শুনি ন্যামতপুর বাজারে মোবাইলের টাওয়ারের উপর একটি হনুমান এসেছে। এমন খবরে সেখানে গিয়ে দেখি অনেক মানুষ তাকে দেখার জন্য ভিড় করছে। হনুমানটি ভীত হয়ে টাওয়ারে উঠে বসে আছে।
স্থানীয় বাসিন্দা ইঞ্জিনিয়ার শাকিল আহম্মেদ নাদভী জানান, দীর্ঘ এক মাস ধরে হনুমানটি এ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বেড়াচ্ছে। গত মঙ্গলবার বিকালে দেহুন্দা বাজার এলাকায় মোখপুড়া হনুমানটিকে দেখা গিয়েছে। ঘুরতে ঘুরতে এখন সে ক্লান্ত। এভাবে চলতে থাকলে হয়তো খাবারের অভাবে মারা যেতে পারে। অনেকে হয়তো আতঙ্কিত হয়ে মেরেও ফেলতে পারে। তাই অতি দ্রুত হনুমানটিকে উদ্ধার করে বনে ছেড়ে দেওয়া উচিত।
জানা যায়, প্রায় এক মাস ধরে এ হনুমানটিকে এ এলাকায় দেখা যাচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে কোনো বর্ষণমুখর রাতে যশোরের সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে চোখ ফাঁকি দিয়ে চামড়া নৌবন্দরগামী ট্রান্সপোর্ট চড়ে কিংবা সিলেটের সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে পাথর বা কয়লা বোঝাই কার্গো জাহাজে হনুমানটি এ এলাকায় চলে এসেছে। বানর প্রজাতির এ প্রাণীটি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় অনিরাপদভাবে জীবনযাপন করছে। বন্যপ্রাণী পাচারকারী চক্রের কারণে নিরাপত্তার প্রশ্নটিও সচেতন মহলে আলোচিত হচ্ছে।
এ ব্যাপারে করিমগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পলাশ কুমার বসু জানান, এ পথহারা প্রাণীটির নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে তিনি সোমবার বিকালে ঢাকা বিভাগীয় বন কর্মকর্তার কার্যালয়ে যোগাযোগ করেছেন। খুব শিগগিরই বন বিভাগের একটি বিশেষ দল এসে হনুমানটি যথাযথভাবে উদ্ধার করে সরকারি নিয়মে নিরাপদ আশ্রয়ে ছাড়ার ব্যবস্থা করবে। এর আগ পর্যন্ত হনুমানটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও সদস্যদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।