ময়মসনসিংহ আলোচিত বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মতিন মাস্টার হত্যা মামলায় ছয় আসামিকে মৃত্যুদণ্ড ও দুই আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে ময়মনসিংহের দ্বিতীয় অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ সাবরিনা আলী এ রায় ঘোষণা করেন। কোর্ট পরিদর্শক ঝুটন কুমার বর্মণ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- ত্রিশাল উপজেলার খাগাটিপাড়া এলাকার মোবারক হোসেন, মোক্ষপুর জামতলি এলাকার তোফাজ্জল হোসেন, নারায়ণপুর এলাকার রুবেল, সেলিম, সোহাগ ও মো. ইদ্রিস।
যাবজ্জীবন দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- একই উপজেলার মোফাজ্জল হোসেন ও দুলাল উদ্দিন। মামলার রায়ে একই সঙ্গে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড এবং যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত দুজনকে ২০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড করা হয় অনাদায়ে আরও তিন মাস করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
আদালত সূত্র জানায়, ২০১৮ সালে স্থানীয় জমির দালাল সিন্ডিকেট অসহায় জনগণের জমি জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে বিক্রি করার প্রতিবাদ করেছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মতিন। এতে ক্ষুব্ধ ওই বছরের ৬ জুলাই রাতে সিন্ডিকেটের লোকেরা পরিকল্পিতভাবে তাকে খুন করে পালিয়ে যান।
মামলার বিবরণে জানা যায়, জমি দখলের প্রতিবাদ করার জেরে ২০১৮ সালের ৩ জুন খুন হন ত্রিশাল উপজেলার জামতলী গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মতিন। তিনি উপজেলার মঠবাড়ি ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং খাগাটি জামতলী মাদরাসার সহকারী শিক্ষক ছিলেন। ঘটনার পরের দিন অজ্ঞাতদের আসামি করে ত্রিশাল থানায় হত্যা মামলা করেন নিহতের ছেলে মাহমুদুল হাসান। এরপর তদন্ত শেষে পুলিশ আটজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। পরবর্তীকালে আদালত ২৫ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে বিচারক আজ এই রায় ঘোষণা করেন।
রায়ে বিচারক উল্লেখ করেন, বীর মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যার মাধ্যমে আসামিরা পুরো জাতিকে ক্ষতিগ্রস্ত ও কলঙ্কিত করেছে।
রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে নিহত বীর মুক্তিযোদ্ধার ছেলে মাহমুদুল হাসান মামুন বলেন, এলাকায় জমি দখলের প্রতিবাদ করায় হত্যা করা হয়েছিল আমার বাবাকে। এরপর বিচার বাধাগ্রস্ত করতে নানা অপতৎপরতা চালিয়েছে আসামিরা। তবুও আমরা শেষ পর্যন্ত এ রায়ের মাধ্যমে ন্যায়বিচার পেয়েছি। আমরা সকল আসামির মৃত্যুদণ্ড প্রত্যাশা করেছিলাম, তবে যে রায় হয়েছে তাতে আমরা সন্তুষ্ট ও সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞ।
মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী ছিলেন পীযূষ কান্তি সরকার ও মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল। তাদের সহযোগিতা করেন অ্যাডভোকেট শফিকুল ইসলাম, মোজাক্কির হোসাইন জাকির, মাহবুব আলম মামুন ও স্বপন কুমার সরকার।
অপরদিকে, আসামিপক্ষে আইনজীবী আবদুল গফুর, নূরুল হকসহ কয়েকজন মামলা পরিচালনা করেন।