ভারতীয় নাগরিক জিবরান তায়েবী হত্যা মামলার আসামি ইয়াছিন রহমান টিটুর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রাখা হয়েছে। আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে টিটুর করা আবেদন খারিজ করে আগের রায় বহাল রাখা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে ৭ বিচারপতির আপিল বেঞ্চ এই রায় দেন। এর ফলে টিটুকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করতেই হবে।
আদালতে ইয়াছিন রহমান টিটুর পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মুনসুরুল হক চৌধুরী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুজিত চ্যাটার্জি বাপ্পী ও সারওয়ার হোসেন বাপ্পী।
২০১২ সালের ১ আগস্ট জিবরান তায়েবী হত্যা মামলায় আপিল বিভাগ সংখ্যাগরিষ্ঠের মতে টিটুর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রাখেন। এ রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে টিটু রিভিউ আবেদনটি করেছিলেন।
চট্টগ্রাম সেন্ট্রাল মেরিটাইম (বিডি) লিমিটেডের প্রিন্সিপাল রিপ্রেজেনটেটিভ হিসেবে কর্মরত থাকাকালে ১৯৯৯ সালের ৯ জুন অফিস থেকে বাসায় ফেরার পথে জিবরান তায়েবীকে আগ্রাবাদের শেখ মুজিব রোডের চুংকিং রেস্টুরেন্টের সামনে গুলি করে হত্যা করা হয়।
ঘটনার পরদিন ডবলমুরিং থানায় জিবরানের এক সহকর্মী জেমস রায় মামলা করেন। জিবরানের বাবা টি এ খান পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের তৎকালীন শীর্ষ কর্মকর্তা ছিলেন। চাকরি সূত্রে ওই সময় জিবরান তার স্ত্রী তিতলী নন্দিনীকে নিয়ে চট্টগ্রামে অবস্থান করছিলেন। অন্যদিকে আসামি টিটু শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী গ্রুপ কেডিএসের চেয়ারম্যান এবং চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বারের সভাপতি খলিলুর রহমানের ছেলে।
আদালত সূত্র জানায়, ওই ঘটনায় করা মামলায় ১৯৯৯ সালের ২২ নভেম্বর আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। আট আসামি হলেন ইয়াছিন রহমান টিটু, মো. ওসমান আলী, আলী আকবর ওরফে দিদারুল আলম, জিল্লুর রহমান, জাহিদ হোসেন ওরফে কিরণ, মো. সিদ্দিক, ওমর আলী ওরফে জাহাঙ্গীর কসাই ও আলমগীর।
মামলাটিতে ২০০২ সালের ১২ এপ্রিল চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের রায়ে পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। অপর আসামি টিটু, ওমর আলী ও আলমগীর খালাস পান।
ওই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ হাইকোর্টে আপিল করে। আসামিরাও রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন। আপিলের শুনানি শেষে ২০০৭ সালের ২৮ মার্চ হাইকোর্ট পলাতক টিটুকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। একইসঙ্গে নিম্ন আদালতের রায়ে খালাসপ্রাপ্ত ওমর আলী ওরফে জাহাঙ্গীর কসাই ও আলমগীরকেও যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়া নিম্ন আদালতের রায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত মো. সিদ্দিক খালাস পান।
হাইকোর্টের রায়ের পর ২০১১ সালের ৯ অক্টোবর দেশে ফিরে এসে পরদিন চট্টগ্রামের আদালতে আত্মসমর্পণ করেন টিটু। পরে তাকে জেলহাজতে পাঠান আদালত। ওই বছরের ১৭ অক্টোবর কারাগারে থেকে তিনি আপিল বিভাগে আবেদন করেন। একই বছরের ২৪ অক্টোবর বিলম্ব মার্জনা করে আদালত আপিল শুনানির জন্য বিষয়টি তালিকাভুক্তির নির্দেশ দেন। আপিলের ওপর সাত কার্যদিবস শুনানি শেষে ২০১২ সালের ১ আগস্ট টিটুর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। এ রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে রিভিউ আবেদনটি করেছিলেন টিটু। শুনানি শেষে যা এখন খারিজ হলো।