muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

দূর পরবাস

বাঙালির অনন্য কীর্তি বৃটেনের ইষ্ট লন্ডন মসজিদ

বাঙালির অনন্য কীর্তি বৃটেনের ইষ্ট লন্ডন মসজিদ

প্রবাসী বাংলাদেশীদের অমর সৃষ্টি খোদ লন্ডন সিটির প্রাণ কেন্দ্রে অবস্থিত ইষ্ট লন্ডন মসজিদ। যা সমগ্র ইউরোপের মধ্যে বৃহত্তম মসজিদ। ইষ্ট লন্ডনের হোহাইট চ্যাপল এবং অলগেটের মধ্যবর্তী লন্ডন বরো অব টাওয়ার হ্যামলেটস এ অবস্থিত এই মসজিদটি।‌

শুক্রবার সকাল ১০টা থেকেই দল বেঁধে লন্ডনে বিভিন্ন এলাকা থেকে নারী, পুরুষ ও কিছু কিছু গোটা পরিবার নিয়ে ছুটে আসতে দেখা দেখা যায় জুম্মার নামাজ আদায় করতে। দুপুরে জুম্মার আজান দেওয়ার‌ ৩০মিনিট পর খতিব সাহেব খু‌ৎবা দিয়ে নামাজ শুরু করেন মুসুল্লিদের নিয়ে।‌

আরবি, বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় আমাদের কমিউনিটির সমসাময়িক সামাজিক বিষয়ের উপর আলোকপাত করে জুম্মার খুৎবা দেন মসজিদটির বাংলাদেশি খতিব শায়খ আব্দুল কাইয়ুম।

মসজিদের ইতিহাস অনেক দিনের পুরাতন, প্রায় একশত তের বছর পূর্বে (১৯১০ সালে) কিছু উল্লেখযোগ্য মুসলিম ব্যক্তিত্ব লন্ডনে একটি মসজিদ নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন এবং লন্ডন মসজিদ তহবিল প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৬ সালের মধ্যে বিশাল‌ একটা তহবিল গঠনের পর ট্রাস্টের ডিক্লারেশন অফ ডিড করা হয়। প্রথম তিন দশকের জন্য শুক্রবারের নামাজ এবং বিশেষ অনুষ্ঠানের জন্য কক্ষ গুলি ভাড়া করা হতো।

১৯৪০ সালে পূর্ব লন্ডনের হোয়াইট চ্যাপেল রোডে তিনটি স্থাপনা কিনে‌ মসজিদে রূপান্তরিত হয় ও ১৯৪১ সালের ১লা আগস্ট শুক্রবার মসজিদটির উদ্বোধন করখ হয়। সেদিন লন্ডন মসজিদ তহবিলের কার্যনির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান স্যার হুসেন সোহরাওয়ার্দী নব প্রতিষ্ঠিত পূর্ব লন্ডন মসজিদ এবং ইসলামিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রটিতে মুসুল্লিদের স্বাগত জানিয়েছিলেন। প্রথম নামাজের ইমামতি করেছিলেন ছিলেন সৌদি আরবের তত্কালীন রাষ্ট্রদূত শায়খ হাফিজ ওহাব।

মসজিদটি বাহির থেকে দেখতে যতোটা চাকচিক্যময় মনে হয় ভিতরের স্থাপত্য শৈলী আরো সুন্দর। বেশ বড় জায়গা নিয়ে প্রতিষ্টিত এই মসজিদের চারিদিকে অনেক বাড়ী ঘর রয়েছে এই মসজিদের মালিকানায়। শুক্রবার জুম্মার নামাজ আদায় করে মনে হল এটি আমাদের জন্য অহংকার করার মত একটি প্রতিষ্টান।

মসজিদটিতে একত্রে প্রায় দশ হাজার মুসল্লী একত্রে নামাজ পড়তে পারেন। ইষ্ট লন্ডন মসজিদ শুধু নামাজের স্থান হিসাবে ব্যবহৃত হয় না। এখানে পরিচালিত হয় কমিউনিটির বহুমুখী কর্মকান্ড। গোটা ইউরোপের বৃহত্তম মসজিদ হওয়াতে এই মসজিদটি বৃটেনের মূলধারায় বিশেষ প্রাধান্য পেয়ে থাকে।

১৯৮২ সালে মূলত তিনতলা ভবনের এই মসজিদের কাজ শুরু হয় যা শেষ হয় ১৯৮৫ সালে। পরবর্তীতে ২০০৪ সালে লন্ডন মুসলিম সেন্টার এবং ২০১৩ সালে মারিয়াম সেন্টার এর কাজ সম্পন্ন হয় | বিশাল এই মসজিদ কমপ্লেক্স তৈরিতে খরচ হয় প্রায় ২২.৩ মিলিয়ন পাউন্ড। এই মসজিদে দুটি অংশের একটি হলো লন্ডন মুসলিম সেন্টার এবং মারিয়াম সেন্টার।

২০১১ সালে ইংল্যান্ডের উগ্রপন্থী দল ইংলিশ ডিফেন্স লীগ মসজিদের সামনে দিয়ে বিক্ষোভ প্রদর্শনের ঘোষণা দিলে ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের প্রতিরোধের মুখে সরকার মসজিদের সামনে সব রকমের সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। সমগ্র ইউরোপে ইসলাম ধর্মের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তার কারণে প্রতি মাসে এই মসজিদে উল্লেখযোগ্য সংখক ভিন্ন ধর্মের অনুসারীরা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে আসেন। ব্রিটেনের প্রধান মন্ত্রী ছাড়াও বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্র প্রধানসহ মসজিদ আল হারাম এবং মসজিদ আল নবাবীর ইমাম সাহেব এই মসজিদে নামাজ আদায় করেছেন।‌বছরের একটি বিশেষ সময়ে এই মসজিদের দরজা খুলে দেওয়া হয় অমুসলিমদের জন্য যাতে তারা ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে আরো বেশি জানতে পারেন। বাংলদেশী ব্রিটিশদের অক্লান্ত পরিশ্রমে গড়ে ওঠা ইস্ট লন্ডন মসজিদ আজ সমগ্র ইউরোপের ইসলামিক ঐতিহ্যের কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।‌ ‌মসজিদের কাছেই অবস্থিত শহীদ আলতাফ আলী পার্ক। এই পার্কটি এখন বাঙ্গালীদের দাবী আদায়‌ ও‌ মিলন‌ মেলার পাদপীঠ হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

Tags: