muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

রাজনীতি

কংগ্রেসম্যানদের সঙ্গে বৈঠক, বিরোধী অবস্থানে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি

কংগ্রেসম্যানদের সঙ্গে বৈঠক, বিরোধী অবস্থানে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির নেতাদের সঙ্গে চা চক্রে মিলিত হন দুই মার্কিন কংগ্রেসম্যান রিক ম্যাককরমিক ও এড কেস। রোববার মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাসের গুলশানে বাসায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বিকেল চারটা থেকে সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত এ চা-চক্র চলে।

জানা গেছে, আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলে ছিলেন দলটির অর্থ ও পরিকল্পনা সম্পাদক ও সংসদ সদস্য ওয়াসিকা আয়শা খান, নাহিম রাজ্জাক এবং তামান্না নুসরাত (বুবলী)। বিএনপির প্রতিনিধি দলে ছিলেন প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি। জাতীয় পার্টির প্রতিনিধি দলে ছিলেন তিন সংসদ সদস্য শেরিফা কাদের, রানা মোহাম্মদ সোহেল এবং নাজমা আক্তার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়ার কংগ্রেসম্যান (রিপাবলিকান) রিক ম্যাক্রোরমিক ও হাওয়াইয়ের কংগ্রেসম্যান (ডেমোক্র্যাট) এড কেইস উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় পিটার হাস ছাড়াও মার্কিন দূতাবাসের রাজনৈতিক ও শ্রমবিষয়ক কর্মকর্তা ম্যাথিউ বেহ এবং উপরাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকবিষয়ক কর্মকর্তা আর্তুরো হিনেস উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষক পাঠাতে আমন্ত্রণ জানান আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। একই সঙ্গে অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতির কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ জানিয়ে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা আরও বলেন, সংবিধানসম্মত উপায়ে বাংলাদেশে আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কারো অযৌক্তিক দাবির কারণে, সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোন উপায়ে সরকার যেতে পারে না। সেই ম্যান্ডেট সরকারকে জনগণ দেয়নি।

আইনের মাধ্যমে সরকার নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করেছে বলে মার্কিন প্রতিনিধি দলকে জানায় আওয়ামী লীগের এক সদস্য। তিনি আরও বলেন, সামনের অধিবেশনে আরেকটা আইন আসবে। সেখানে নির্বাচনকালীন সময়ে বিশৃঙ্খলা করা, সাংবিধানিক বাধা দিলে শাস্তির বিধান রাখা হবে। প্রতিনিধি দলে থাকা এক সদস্য দেশ রূপান্তরকে এ তথ্য জানিয়েছেন।

চা-চক্র সূত্র বলছে, বিএনপির পক্ষ থেকে শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে না উল্লেখ করে তাদের দলের অবস্থান তুলে ধরেন। একই সঙ্গে দলটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাবে না বলেও ওই বৈঠকে জানান তিনি। তার অভিযোগ ছিল, দেশে এক ব্যক্তির শাসন চলছে।

বৈঠকে জাতীয় পার্টির প্রতিনিধি শেরিফা কাদের বলেন, কংগ্রেসম্যানরা সার্বিক নির্বাচনী পরিস্থিতি ও পরিবেশ সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। তারাও বাংলাদেশের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছেন বলে জানিয়েছেন। আমরা আমাদের মতো করে বিষয়গুলো উপস্থাপন করেছি। সেইসঙ্গে বলেছি, জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশ নিবে।

জানা গেছে, বৈঠকে কংগ্রেসম্যান এড কেইস আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলকে বলেন, শুধু তোমাদের দেশে নয় সারা পৃথিবীর কাছে বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন আশা করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। তাই অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে কাজ করছে দেশটি।

বৈঠকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে বাংলাদেশের গুরুত্ব কি কারণে সেই বিষয়টি উল্লেখ করা হয় বলে জানা গেছে। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে ইন্দো-প্যাসিফিকে অঞ্চলে বাংলাদেশ খুবই গুরুত্বপূর্ণ, একই সঙ্গে বাংলাদেশের জনসংখ্যা, সারা পৃথিবীতে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাপনা কমে যাচ্ছে, সেই ক্ষেত্রে বাংলাদেশে যেন গণতান্ত্রিক পরিবেশ বজায় থাকে সেটা চায় আমেরিকা।

এর আগে রোববার দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন সফররত যুক্তরাষ্ট্রের দুই কংগ্রেসম্যানের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতার কোনো সুযোগ আছে কি না, ঢাকা সফররত দুই মার্কিন কংগ্রেসম্যানের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, সরকার পতন নিয়ে তাদের (বিএনপি) যে দাবি, ওটাতে সমঝোতার কোনো স্কোপ নেই।

দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর আন্তরিকতা থাকলে সুষ্ঠু এবং সহিংসতা ছাড়া নির্বাচন সম্ভব বলে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যতগুলো দল আছে সব দল যদি নির্বাচনে যোগদান করে, তারা যদি আন্তরিকভাবে সিদ্ধান্ত নেয়, অবাধ, সুষ্ঠু ও সহিংসতা ছাড়া নির্বাচন চায়, তাহলে নির্বাচন সহিংসতা ছাড়া হবে।

এদিকে সকালে দুই কংগ্রেসম্যান ধানমন্ডি-৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করেন। পরে দুপুর ১টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজ এবং বৈঠক করেন তারা।

আগামীকাল সোমবার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প পরিদর্শন করবেন দুই মার্কিন কংগ্রেসম্যান।

উল্লেখ্য, যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের দুজন সদস্য গতকাল শনিবার (১২ আগস্ট) চার দিনের সফরে বাংলাদেশে এসেছেন। এদের একজন এড কেইস। তিনি ক্ষমতাসীন ডেমোক্রেটিক পার্টির কংগ্রেস সদস্য। অপরজন রিচার্ড ম্যাকরমিক, তিনি রিপাবলিকান পার্টির সদস্য।

Tags: