উজানের দেশ চীন। নিজেদের অংশে থাকা ব্রহ্মপুত্র নদের বিভিন্ন অংশে বাঁধ দিয়ে দেশটি ইতিমধ্যেই ৮টি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরি করেছে। এর মধ্যে কয়েকটি বর্তমানে চালু আছে। অন্যগুলোও নির্মাণ ও চালুর প্রক্রিয়া চলছে। আর এই নদে তৈরি বাঁধগুলো বাংলাদেশের জন্য বিপর্যয়কর হতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
ব্রিটিশ গণমাধ্যম ডেইলি মিররের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই ৮টি বাঁধ ছাড়াও বিশাল আকারের আরেকটি বাঁধ (মেগা-ডেম) স্থাপনের পরিকল্পনা করেছে চীন। দেশটির চতুর্দশ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা (২০২১-২৫) অনুসারে, তিব্বতের কৈলাসে সৃষ্ট ব্রহ্মপুত্র নদের লিনঝি প্রিফেকচার অংশে ৬০ গিগাওয়াট জলবিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন ওই বাঁধটি নির্মিত হতে পারে।
বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে নিচু নদীপ্রান্তীয় দেশ। এ জন্য দেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া অধিকাংশ নদীর জন্যই অন্য দেশের অনুগ্রহের ওপর নির্ভর করতে হয়। এর মধ্যে ব্রহ্মপুত্র বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ নদ।
বহু পথ পাড়ি দেয়া এই নদটি ব্রহ্মপুত্র, ইয়ারলুং সাংপো, যমুনাসহ বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন নামে পরিচিত। এর সঙ্গে যুক্ত আছে অসংখ্য উপনদীও। ব্রহ্মপুত্র নদ তাই ভারতীয় উপমহাদেশে ভূ-রাজনৈতিক সংঘাতের একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হয়ে উঠেছে।
ডেইলি মিররের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রেড ফ্ল্যাগ ক্যানেলের মাধ্যমে ব্রহ্মপুত্র নদ সহ তিব্বত অঞ্চলের অন্যান্য নদী থেকে চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের শুষ্ক অঞ্চলে পানি নিয়ে যাওয়ার নানাবিধ পরিকল্পনার বাস্তবায়ন চলছে। তবে পরিসংখ্যান বলছে, ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার ওপর নির্ভরশীল মানুষদের ৬০ শতাংশই বাংলাদেশি। এই নদের চীনা অংশে নানা ধরনের নির্মাণ কার্যক্রম, খনি উত্তোলন এবং পলি জমে যাওয়ার কারণে ইতিমধ্যেই স্রোত প্রবাহ অনেকাংশে কমে গেছে এবং পানির মানও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
ডেইলি মিররের কাছে বাংলাদেশি কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, নদীটির ওপর চীনা নিয়ন্ত্রণ বাড়লে যখন প্রয়োজন হবে না তখন পানির প্রবল প্রবাহ বয়ে যেতে পারে। আর শুষ্ক মৌসুমে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজনের সময় দেখা যাবে—নদীতে কোনো পানির অস্তিত্বই নেই।
বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, বিদ্যুৎ উৎপাদন ছাড়াই রেড ফ্ল্যাগ ক্যানেল দিয়ে চীনারা পানি অপসারণ করলে নদের ওপর নির্ভরশীল বাংলাদেশের লক্ষাধিক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
তাই বাংলাদেশি পরিবেশ অধিকারকর্মী এবং ‘রিভারাইন পিপল’-এর মহাসচিব শেখ রোকন মিররকে বলেন, ‘চীন ভবিষ্যতে কোনো বাঁধ নির্মাণ করার আগে বহু পাক্ষিক আলোচনা হওয়া উচিত।