muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

জাতীয়

সম্পর্ক জোরদারে আগ্রহী ঢাকা-মস্কো

সম্পর্ক জোরদারে আগ্রহী ঢাকা-মস্কো

বাংলাদেশের জন্মলগ্ন থেকেই বন্ধুর ভূমিকা পালন করে আসছে রাশিয়া। বন্ধুত্বের সেই সম্পর্ক আরও জোরদারে আগ্রহী ঢাকা এবং মস্কো। ২২ ঘণ্টার এক ঝটিকা সফরে বৃহস্পতিবার ঢাকা এসেছেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ।

বাংলাদেশে এসেই পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশ নেন তিনি। এরপর এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ল্যাভরভ যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের চাপের পরও রাশিয়া ইস্যুতে পররাষ্ট্র নীতিতে অটল থাকায় বাংলাদেশের প্রশংসা করছেন। এ সময় তিনি বলেন, আমাদের অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে বাইরের কিছু শক্তি হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা করছে, যা গ্রহণযোগ্য নয়।

বৈঠকে রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে ল্যাভরভ বলেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের সঙ্গে সমস্যা সমাধানে আলোচনা চলছে, এটি অব্যাহত থাকবে। তবে এখানে কিছু বহিরাগত পক্ষ খেলার চেষ্টা করছে। এতে হিতে বিপরীত হবে। এই সমস্যা সমাধানে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন পক্ষ আলোচনা অব্যাহত রেখেছে।

এক প্রশ্নের উত্তরে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, আমরা যদি পরিস্থিতি বিবেচনা করি, তাহলে দেখব তাদের লক্ষ্য চীনকে প্রতিহত ও রাশিয়াকে একঘরে করে ফেলা, যা কার্যত ন্যাটোর সমপ্রসারণেরই অংশ। একইসঙ্গে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিষয়েও কথা বলেন তিনি এবং এর ধারাবাহিকভাবে বাস্তবায়নের ওপর জোর দেন।

বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্ক জোরদার করতে রাশিয়া একমত উল্লেখ করে বাংলাদেশকে দক্ষিণ এশিয়ায় একটি ভালো ও দীর্ঘস্থায়ী অংশীদার হিসেবে মন্তব্য করেন ল্যাভরভ। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের দ্বিপক্ষীয় যোগাযোগ জোরদার করেছি।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ সফরে আসায় আমরা খুবই আনন্দিত। রাশিয়ার সঙ্গে আমাদের গভীর সম্পর্ক রয়েছে।

তিনি বলেন, তারা রোহিঙ্গা ইস্যু, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ এবং রাশিয়ায় বৃহত্তর বাজারে প্রবেশাধিকার নিয়ে আলোচনা করেছেন।

মোমেন বলেন, 'আমরা যুদ্ধ চাই না। আমরা চাই আলোচনা হোক এবং আলোচনার মাধ্যমে সব সমস্যার সমাধান হোক।' রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী দুদিনের সফরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকায় এসেছেন। যা পরিবর্তিত বৈশ্বিক পরিস্থিতির মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

সন্ধ্যা ৬টা ১৭ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন তাকে স্বাগত জানান। স্বাধীনতার পর রাশিয়ার কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এটাই প্রথম বাংলাদেশ সফর। শুক্রবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী। শুক্রবার দিনের শুরুতেই তিনি ধানমন্ডির বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর পরিদর্শন করবেন।

এর আগে ঢাকায় রাশিয়ার দূতাবাস জানায়, দুই দেশ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের উন্নয়নের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ইস্যুতে মতামত বিনিময় হবে এ বৈঠকে। রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ সফর শেষ করে ৯-১০ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লিতে জি-২০ সম্মেলনে যোগ দেবেন।

গত বছরের ২৪ নভেম্বর ঢাকায় অনুষ্ঠিত ২২তম আইওআরএ মন্ত্রী পরিষদের বৈঠকে যোগদানের জন্য ২৩ নভেম্বর ল্যাভরভের বাংলাদেশ সফরের কথা ছিল। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এই সফর বাতিল করা হয়। পরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন ও সের্গেই ল্যাভরভ টেলিফোনে আলাপ করেন এবং বাংলাদেশ ও রাশিয়ার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন এবং এ সম্পর্ককে আরও উচ্চতায় নিয়ে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।

টেলিফোনে আলাপকালে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী শিডিউল জটিলতার কারণে ঢাকায় আসতে না পারায় দুঃখ প্রকাশ করেন এবং শিগগিরই সফরের ইচ্ছা প্রকাশ করেন।

মোমেন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতার জন্য রাশিয়াকে ধন্যবাদ জানান এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনকে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

Tags: