এশিয়া কাপের আগে যেন উড়ছিল পাকিস্তান। বাইশগজে ব্যাট-বলে রাজত্ব করে ওয়ানডে র্যাংকিংয়ের শীর্ষস্থান দখলে নিয়েছিল বাবর আজম এন্ড কোং। এশিয়ার শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়েও অপ্রতিরোধ্য দেখা যাচ্ছিল ম্যান ইন গ্রিনদের। সব বিভাগে ধারাবাহিক দলটারই কি না শেষমেশ এমন ভরাডুবি!
কলম্বোর আর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে সুপার ফোরের ম্যাচে জোড়া ফিফটি আর জোড়া সেঞ্চুরিতে ২ উইকেটে ৩৫৬ রানের বড় সংগ্রহ পায় ভারত। কোহলির ব্যাট থেকে এসেছে অপরাজিত ১২২ রান। রাহুলও অপরাজিত থেকেছেন ১১১ রান করে।
বড় টার্গেট তাড়া করতে নেমে চরম ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে পাকিস্তান। ভারতীয় বোলারদের তোপে বাবর আজমরা থেমেছে মোটে ১১৮ রানে। আর তাতে দুই দলের মধ্যকার লড়াইয়ে সবচেয়ে বড় ব্যবধানে (২২৮) হারের লজ্জাও পেল পাকিস্তান। যদিও এদিন চোটের কারণে ব্যাট করতে নামেননি পাকিস্তানের শেষ দুই ব্যাটার। ভারতের হয়ে ৫ উইকেট তুলে নিয়েছেন দলে ফেরা কুলদীপ যাদব।
এশিয়া কাপ কিংবা বৈশ্বিক কোনো টুর্নামেন্টে বহুল আকাঙ্ক্ষিত একটি ম্যাচ ভারত-পাকিস্তান লড়াই। এবারের এশিয়া কাপে এ নিয়ে দুবার মুখোমুখি হয়েছে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী দেশ দুটি। প্রথম দফায় বেরসিক বৃষ্টিতে ম্যাচ ভেস্তে যাওয়ার পর সুপার ফোরেও তেমন শঙ্কা ছিল। নির্ধারিত দিনে (রোববার) বৃষ্টির বাগড়ার পর সোমবার (১১ সেপ্টেম্বর) রিজার্ভ ডেতে গড়ায় খেলা। এদিনও বৃষ্টির বাধা থাকলেও শেষ বিকেলে মুখ তুলে তাকায় কলম্বোর আকাশ। আর তাতে ব্যাট-বলে দারুণ প্রদর্শনী দেখাল ভারত।
আগের দিন তথা নির্ধারিত দিনে রোববার টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নেমে দুই ওপেনার শুভমান গিল ও রোহিত শর্মার ব্যাটে উড়ন্ত সূচনাই পেয়েছিল ভারত। কিন্তু ফিফটি করে বিদায় নেন দুই ওপেনারই। এরপর আক্রমণাত্মক শুরু করেন বিরাট কোহলি ও চোট থেকে ফেরা লোকেশ রাহুল। গতকাল ২৪.১ ওভারে ২ উইকেটের বিনিময়ে ভারত ১৪৭ রান সংগ্রহ করার পর বৃষ্টিতে ম্যাচ রিজার্ভ ডেতে গড়ায়।
সোমবার রিজার্ভ ডে'তে নেমে শুরু থেকেই সাবলীল ব্যাটিং করতে থাকেন আগের দিন ২৪ রানের জুটি গড়া রাহুল ও কোহলি। এদিন দ্রুততম ১৩ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন বিরাট কোহলি। এই রেকর্ড গড়ার পর পরই ওয়ানডেতে নিজেদের ৪৭তম সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন তিনি।
এদিন ক্যারিয়ারের ৬ষ্ঠ সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন লোকেশ রাহুল। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থেকে অবিচ্ছিন্ন ২৩৩ রানের জুটি গড়েই দলকে ৩৫৬ রানের বড় পুঁজি এনে দেন এ দুই ব্যাটার।
বড় লক্ষ্য তাড়ায় শুরুতেই যেন শেষ পাকিস্তান! ইনফর্ম ইমাম-উল-হকের পর ব্যর্থ বাবর আজমও। দুই টপ অর্ডার ব্যাটারকে হারিয়ে যখন ধুঁকছিল পাকিস্তান, তখনই কলম্বোতে আরও একবার বৃষ্টির হানা। এরপর খেলা শুরু হলেও ভাগ্য বদলায়নি পাকিস্তানের।
বৃষ্টি থামার পর খেলা শুরু হলে প্রথম ওভারেই শার্দূল ঠাকুর আউট করেন মোহাম্মদ রিজওয়ানকে (২)। পাকিস্তান ৪৭ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর ভারতের জয় এক রকম নিশ্চিত হয়ে যায়।
ভেজা আউটফিল্ডকে কাজে লাগিয়ে ভারতের পেসাররা ধারাবাহিকভাবে অস্বস্তিতে রাখেন পাক ব্যাটারদের। অন্যদিকে একের পর এক উইকেট তুলে নিতে থাকেন কুলদীপ। ফখর জামান (২৭) এবং আঘা সালমানকে (২৩) সাজঘরে ফিরিয়ে পাকিস্তানকে আরও কোণঠাসা করে দেন এই ভারতীয় স্পিনার। বিপদে ভরসা দিতে পারেননি সহ-অধিনায়ক শাদাব খানও (৬)। তাকেও আউট করলেন কুলদীপ। ফেরালেন ইফতিখার আহমেদকেও (২৩)। ফাহিম আশরাফও (৪) আউট হলেন বাঁহাতি স্পিনারের বলে। ২৫ রানে ৫ উইকেট নিয়ে ভারতের জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিলেন সুপার ফোরে দলে জায়গা পাওয়া কুলদীপ।
চোটের কারণে পাকিস্তানের শেষ দুই ব্যাটার নাসিম শাহ এবং হ্যারিস রউফ ব্যাট করতে নামতে পারেননি। তাই ১২৮ রানে ৮ উইকেট পড়ার পরেই শেষ হয়ে যায় বাবরদের ইনিংস। একটি করে উইকেট নিয়েছেন বুমরা, হার্দিক এবং শার্দুল ঠাকুর।