muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

জাতীয়

চূড়ান্ত হিসাবে দেশে নদ-নদীর সংখ্যা ১০০৮

চূড়ান্ত হিসাবে দেশে নদ-নদীর সংখ্যা ১০০৮

দেশে নদ-নদীর তালিকা প্রাথমিকভাবে চূড়ান্ত করেছে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন। ওই তালিকায় নদ-নদীর সংখ্যা এক হাজার আটটি। আর দৈর্ঘ্য প্রায় ২২ হাজার কিলোমিটার।

বিশ্ব নদী দিবস উপলক্ষ্যে আজ রোববার এক সেমিনারে এ তালিকা সবার জন্য উন্মুক্ত করতে যাচ্ছে। খুব শিগগিরই ওইসব নদ-নদীর নাম গেজেট আকারে প্রকাশের পরিকল্পনা রয়েছে নদী রক্ষা কমিশনের। একই সঙ্গে নদীর সংজ্ঞাও চূড়ান্ত করতে চায়।

নদী রক্ষা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা জানান, গেজেট আকারে প্রকাশ করতে পারলে এসব নদী বাঁচানো ও সুরক্ষার পথ কিছুটা হলেও সুগম হবে। তারা আরও জানান, আরও কিছু নদ-নদীর তথ্য যাচাই-বাছাই চলছে। নদী রক্ষা কমিশনের তালিকায় থাকা কিছু নদীর বিষয়ে আপত্তিও রয়েছে। ওইসব আপত্তি নিষ্পত্তি হলে নদীর সংখ্যা আরও কিছু বাড়বে।

জানা গেছে, এর আগে ১০ আগস্ট দেশের সব নদ-নদীর একটি খসড়া তালিকা প্রকাশ করেছিল নদী রক্ষা কমিশন। ওই তালিকায় নদ-নদীর সংখ্যা ছিল ৯০৭টি। তালিকার ওপর মতামত ও আপত্তি আহ্বান করে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তিও দেয় কমিশন।

ওইসব মতামত ও আপত্তি নিষ্পত্তি করে এই এক হাজার আটটির তালিকা চূড়ান্ত করেছে। আরও কিছু আপত্তি এখনো নিষ্পত্তি হয়নি।

দেশে নদ-নদীর তালিকা নিয়ে দীর্ঘদিন বিতর্ক রয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড ২০১১ সালে তাদের এক প্রকাশনায় উল্লেখ করেছে, নদ-নদীর সংখ্যা ৪০৫। নদী গবেষকদের কেউ কেউ দাবি করেন, দেশে নদীর সংখ্যা হাজারের ওপর। দেশে নদী নিয়ে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় কাজ করে।

আর নৌপথ নিয়ে কাজ করে নৌপরিবহণ মন্ত্রণালয় ও অধীনস্থ সংস্থাগুলো। তাদের কারও কাছেই নদীর প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে গবেষণা নেই। এর মধ্যেই নদীর এ তালিকা তৈরি করেছে নদী রক্ষা কমিশন।

প্রতিষ্ঠানটির দাবি, ২০১৯ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট এক রায়ে বলেছেন, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন দেশের সব নদ-নদীর অভিভাবক, নদীর সঠিক সংখ্যা ঠিক করার দায়িত্বও তাদের। এই রায়ে আদালত দেশের সব নদীকে জীবন্ত সত্তা হিসাবেও উল্লেখ করেছেন। ওই এখতিয়ার বলেই নদী রক্ষা কমিশন এ তালিকা তৈরি করেছে।

নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, স্থানীয় প্রশাসনের সহায়তায় নদীর তালিকা তৈরি করা হয়েছে। সিএস রেকর্ডে যেগুলো নদী হিসাবে চিহ্নিত করা হয়েছে সেগুলো মরে গেলেও ওই জায়গা নদী হিসাবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। অনেক স্থানে নদী দখল করা হয়েছে। কোথাও প্রাকৃতিকভাবে নদী গতিপথ পরিবর্তন করে মরে যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, একই নদী বিভিন্ন জেলায় বিভিন্ন নাম ধারণ করেছে। আবার কোথাও একাধিক জেলায় একই নামে রয়েছে। সেখানে আমরা ওই জেলা ও নদীর নাম মিলিয়ে নামকরণ করেছি। এক প্রশ্নের জবাবে ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, নদীর তালিকার কাজ থামবে না। এটা চলমান প্রক্রিয়া।

চলাচলযোগ্য নৌপথ : নদী রক্ষা কমিশনের তথ্যমতে দেশে ২২ হাজার কিলোমিটার নৌপথ থাকলেও বাস্তবে নৌযান চলাচল উপযোগী নৌপথের সংখ্যা প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) তথ্যমতে, দেশে ইঞ্জিনচালিত নৌযান চলাচল করতে পারে এমন নৌপথের দৈর্ঘ্য নিয়ে শুষ্ক মৌসুমে চার হাজার ৮০০ কিলোমিটার। আর বর্ষা মৌসুমে সাত হাজার ৬০০ কিলোমিটারে।

আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর থেকে এ পর্যন্ত দুই হাজার কিলোমিটার নৌপথ ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে চলাচল উপযোগী করা হয়েছে।

তবে এ সংস্থাটির একাধিক প্রতিবেদন বলছে, ধীরে ধীরে নদী দখল হচ্ছে। নদীর তীর দখল ও ভরাট করে অপরিকল্পিতভাবে কলকারখানা গড়ে উঠছে। নদীতে প্রতিনিয়ত বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। এতে নদীর পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। সবচেয়ে ভয়ংকর তথ্য হচ্ছে, শুষ্ক মৌসুমে নদীর অবস্থান ধরে জরিপ করায় নদী সংকীর্ণ হয়ে যাচ্ছে।

বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমোডর আরিফ আহমেদ মোস্তফা বলেন, আমাদের সামনে বড় দুটি চ্যালেঞ্জ হচ্ছে-নদী দখল ও দূষণ। নদী দূষণ হলে নৌপর্যটনের বিকাশ ঘটবে না। আর দখলের কারণে নদীর প্রশস্ততা কমে যাচ্ছে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বন্দর এলাকায় নদী দখল হলেই ব্যবস্থা নিচ্ছি। তবে বন্দর সীমানার বাইরে দখল হলে সেখানে আমাদের তেমন কিছু করার থাকে না। যদি নদীর ফোরশোরে (তীরভূমি) স্থাপনা নির্মাণে আমাদের অনুমোদন নেওয়া বাধ্যতামূলক হতো তখন আমরা বিষয়টি নজর রাখতে পারতাম।

Tags: