ভারতের উত্তর সিকিমে প্রবল বৃষ্টিপাতে সৃষ্ট আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতির কারণে তিস্তা নদীর একটি বাঁধ খুলে দেয়া হয়েছে। এর ফলে তিস্তা নদীর বাংলাদেশ অংশেও পানি প্রবাহ বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। বুধবার (৪ অক্টোবর) বিকেল ৪টা থেকে বিপৎসীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে পানি প্রবাহ বেড়ে যাওয়ায় নদী তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল ও চরের অনেক বসতবাড়িতে পানি উঠেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। এছাড়া ফসলের ক্ষেত পানিতে ডুবে গিয়ে ফসলহানির শঙ্কায় চিন্তিত কৃষকরা। হঠাৎ পানি বাড়ার ফলে গবাদি পশুপাখির খাবার নিয়ে বিপাকে পড়েছেন স্থানীয়রা।
নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্যা ও ভাঙন আতঙ্কে রয়েছে নদীপাড়ের বাসিন্দারা। এদিকে আকস্মিক পানি বৃদ্ধির বিষয়ে নদীর দুই পারের মানুষকে সতর্ক করতে মাইকিং করছে স্থানীয় প্রশাসন।
এদিকে ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, তিস্তার উৎসে ব্যাপক বৃষ্টিপাতের কারণে চুংথাং হ্রদে পানি বেড়ে গেছে। হ্রদের পানি আটকে রাখতে ব্যর্থ হয়ে বাঁধ খুলে দেওয়া হলে ভাটিতে নদীর পানির স্তরের উচ্চতা ১৫ থেকে ২০ ফুট পর্যন্ত বেড়ে যায়।
ভারতীয় সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ভারতের উত্তর সিকিমে তিস্তা নদীর চুংথাং ড্যাম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় উজানে তিস্তা নদীর পানি সমতল দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গজলডোবা পয়েন্টে পানি সমতল মঙ্গলবার মধ্যরাত হতে বুধবার সকাল পর্যন্ত প্রায় ২৮৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে স্থিতিশীল।
এদিকে তিস্তা নদী দোমুহুনী পয়েন্টে বুধবার ভোর থেকে প্রায় ১১২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ধীরগতিতে হ্রাস পাচ্ছে। আজ বিকেলের তথ্য অনুযায়ী ডালিয়া পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার পাঁচ সেন্টিমিটার ওপরে অবস্থান করছে। বুধবার রাত পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৫০ সেন্টিমিটার ওপর পর্যন্ত উঠতে পারে। এর ফলে লালমনিরহাট ও নীলফামারী জেলার তিস্তাতীরবর্তী এলাকাসমূহ প্লাবিত হয়ে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
বুধবার বিকেল ৫টায় তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহের উচ্চতা রেকর্ড করা হয়েছে ৫২ মিটার ২৫ সেন্টিমিটার। অর্থাৎ বিপৎসীমার ১০ সেন্টিমিটার (বিপৎসীমা ৫২ মিটার ১৫ সেন্টিমিটার) ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এর আগে বিকেল ৪টায় একই পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছিল।
তথ্য অনুযায়ী, তিস্তা নদী রংপুরের কাউনিয়া পয়েন্টে বৃহস্পতিবার ভোরে বিপৎসীমার ২৮.৭৫ সেন্টিমিটার অতিক্রম করতে পারে। এর ফলে আগামী ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা জেলার তিস্তাতীরবর্তী এলাকাসমূহ প্লাবিত হয়ে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ভারতীয় আবহাওয়া সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, ভারতের সিকিম অঞ্চলে আগামী ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত ভারি বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস থাকায় তিস্তা নদী সংলগ্ন অঞ্চলসমূহে বন্যা পরিস্থিতি অব্যাহত থাকতে পারে।