ভৈরবে স্ত্রীর নগ্ন ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে পর্নোগ্রাফি মামলায় স্বামী মোজাহিদ হাসানকে (২৮) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তিনি শহরের কালিপুর মধ্যপাড়া এলাকার শেখ ইসহাক মিয়ার ছেলে।
বুধবার (৪ অক্টোবর) রাতে পৌর শহরের নদী বাংলা সেন্টার পয়েন্টের সামনে থেকে অভিযুক্ত স্বামী মোজাহিদ হাসানকে গ্রেফতার করে ভৈরব থানা পুলিশ।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ৮ মে পৌর শহরের জগন্নাথপুর উত্তরপাড়া এলাকার আতিকুল ইসলামের মেয়ে সাউসান ইসলামের সঙ্গে পারিবারিকভাবে দ্বিতীয় বিয়ে হয় মোজাহিদ হাসানের। তিনি পেশায় একজন আদম ব্যবসায়ী। তার খারাপ ব্যবহার ও খারাপ চরিত্রের কারণে তার প্রথম স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে যান। দ্বিতীয় বিয়ের পর কিছুদিন যেতে না যেতেই ব্যবসার নাম করে মোজাহিদ যৌতুকের টাকার জন্য তার দ্বিতীয় স্ত্রী সাউসান ইসলামকে চাপ দেন। পরে মোজাহিদকে ১০ লাখ টাকা দেন সাউসানের পরিবার। আবার কিছুদিন যেতে না যেতেই আরও টাকার জন্য চাপ দেন মোজাহিদ। এতেই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কলহ শুরু হয়। টাকা না দিলে নগ্ন ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশের হুমকি দেন মোজাহিদ।
দীর্ঘদিন তাদের মধ্যে কলহের জেরে স্বামী-স্ত্রী দুজনই যার যার বাড়িতে থাকতে শুরু করেন। হঠাৎ একদিন লোকমুখে সাউসান ইসলামের নগ্ন ছবি ও ভিডিও বিভিন্ন জনের মোবাইলে ছড়িয়ে দেওয়ার বিষয়টি জানতে পারে সাউসানের পরিবার। পরে ভিডিও ও ছবি অন্যদের কাছ থেকে সংগ্রহ করে গত ২৮ সেপ্টেম্বর কিশোরগঞ্জ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত নং-২ এ পর্নোগ্রাফি মামলা দায়ের করেন স্ত্রী সাউসান। আদালতের নির্দেশে ভৈরব থানা পুলিশের উপপরিদর্শক মাসুদ রানা সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে অভিযুক্ত স্বামী মোজাহিদ হাসানকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসে।
এ বিষয়ে অভিযোগকারী স্ত্রী সাউসান ইসলাম বলেন, আমার সরলতার সুযোগ নিয়ে অশ্লীল ছবি ও ভিডিও মোজাহিদ মোবাইলে ধারণ করে রেখেছে। সে আমাকে শারীরিক ও মানুষিকভাবে নির্যাতন করতো এবং যৌতুকের টাকার জন্য চাপ প্রয়োগসহ মারধর করতো। আমি আমার বাবার বাড়িতে চলে আসলে মোজাহিদ আমার ছবি ও ভিডিও ফেসবুক ও বিভিন্ন জনের মোবাইলে ছড়িয়ে দেয়। আমি লোকমাধ্যমে জানতে পারি ও আমার নগ্ন ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে দিয়েছে। পরে আমি ছবি ও ভিডিও সংগ্রহ করি। আমি ভৈরব থানায় মামলা না করতে পেরে আদালতের মাধ্যমে মোজাহিদের বিচার প্রার্থনা করি।
তবে অভিযুক্তের বড় ভাই রাকিব হাসান রকি বলেন, পরিবারের সম্মতি ছাড়া আমার ভাই মোজাহিদ দুইটি বিয়ে করে। দ্বিতীয় স্ত্রী সাউসান ইসলামের চরিত্র খারাপ। তার আগে আরও দুটি বিয়ে হয়েছিল। চরিত্র খারাপ বলে অন্য স্বামীরা তাকে ছেড়ে দেয়। তার সঙ্গে একাধিক ছেলের সম্পর্ক রয়েছে। সে তার গর্ভে আমার ভাইয়ের সন্তান নষ্ট করে ফেলেছে। এজন্য আমার ভাইয়ের সঙ্গে দ্বন্দ্ব চলছে। অন্য সকল পুরুষের সঙ্গে মেলামেশার ভিডিও ছবি বিভিন্ন মাধ্যমে মুজাহিদের কাছে আসে। তারপর মুজাহিদ তার শ্বশুর-শাশুড়িকে জানালে তারা মেয়েকে শাসন করেন। তারপরও সব মেনে নিয়ে স্ত্রীকে ক্ষমা করে দিয়ে আবার একত্রিত হয়ে সংসার শুরু করে তারা। পরে আবারো মুজাহিদের কাছে নতুন আরেকটি ছেলের সঙ্গে তোলা বিভিন্ন ছবি আসে। সেটা দেখার পর মুজাহিদ আবার তার স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়ায় জড়িত হয়। সাউসান বাপের বাড়ি গিয়ে মুজাহিদকে ডিভোর্স দিয়ে দেয়। আমার ভাই পর্নো ভিডিও ছাড়ার ছেলে নয়। আমার ভাই নয় বরং অন্য প্রেমিকরা সাউসানের নগ্ন ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে দিয়েছে। আমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে, সে নির্দোষ।
এ বিষয়ে ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাকছুদুল আলম জানান, আদালতের নির্দেশে মোজাহিদ হাসানকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে ২০১২ সনের পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনের ৮(১)(২)(৩) ধারায় মামলা করেছেন তার স্ত্রী সাউসান ইসলাম। বৃহস্পতিবার দুপুরে তাকে কিশোরগঞ্জ আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।