দেশকে জাহান্নামের সঙ্গে তুলনা করা বিচারপতি এমদাদুল হক আজাদকে ডেকে কথা বলেছেন প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগের সব বিচারপতিরা। মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) প্রধান বিচারপতির খাস কামরায় ডেকে পাঠানো হয়।
সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বিচারপতি বিচারপতি এমদাদুল হক আজাদকে কথাবার্তায় আরও যত্নশীল হতে বলা হয়েছে। এসময় প্রায় ১০-১৫ মিনিট কথা বলেন তারা।
এর আগে অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ এএম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘দেশটাকে তো জাহান্নাম বানিয়ে ফেলেছেন’ হাইকোর্টের বিচারপতির এ ধরনের মন্তব্য অসাংবিধানিক ও অসৌজন্যমূলক। ওই বিচারকের প্রতি প্রশ্ন রেখে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, অনেক চক্রান্ত রয়েছে বিচার বিভাগ নিয়ে। তিনি (হাইকোর্টের বিচারক) কাকে লাভবান করার জন্য এ ধরনের মন্তব্য করেছেন।
এদিন হাইকোর্টে মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খান ও পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিনের জামিন শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীর বিরোধিতায় উষ্মা প্রকাশ করেন বিচারপতি মো. এমদাদুল হক আজাদের একক বেঞ্চ। এ সময় আদালত বলেন, দেশটা তো জাহান্নাম বানিয়ে ফেলেছেন।
শুনানির শুরুতে আদিলুর-এলানের পক্ষে জামিন শুনানি করতে ডায়াসের সামনে দাঁড়ান জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী। এসময় রাষ্ট্রপক্ষের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. রেজাউল করিমও দাঁড়িয়ে যান। তিনি বলেন, আমাদেরও বক্তব্য আছে। তখন হাইকোর্ট বলেন, আসামিদের আইনজীবীদের আগে বলতে দিন। আপনি এখন লাফ দিয়ে উঠছেন কেন?
এরপর আসামিদের আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী আবারও কথা বলা শুরু করেন। তথ্য প্রযুক্তি আইনের মামলায় আসামিদের দুই বছরের সাজা দেয়া হয়েছে। এছাড়া ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে বলে হাইকোর্টকে জানান তিনি। পরক্ষণে আবারও জামিনের বিরোধিতা করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রেজাউল করিম। তখন আদালত উষ্মা প্রকাশ করে রাষ্ট্রপক্ষের উদ্দেশে বলেন, তাহলে তাদের ২ বছরের সাজা দিলেন কেন? যাবজ্জীবন দণ্ড দিতে পারলেন না? এক পর্যায়ে আদালত বলেন, দেশটা তো জাহান্নাম বানিয়ে ফেলেছেন।
এরপর মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খান ও পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিন এলানকে জামিন দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে তাদেরকে ১০ হাজার টাকা জরিমানার আদেশও স্থগিত করা হয়।
এর আগে গত ১৪ সেপ্টেম্বর তথ্য প্রযুক্তি আইনে করা মামলায় আদিলুর রহমান খান ও এ এস এম নাসির উদ্দিন এলানকে দুই বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালত। একইসঙ্গে তাদেরকে ১০ হাজার টাকা করে জরিমানা করা হয়। অনাদায়ে আরও এক মাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়। ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ এম জুলফিকার হায়াতের আদালত এ রায় দিয়েছিল।
২০১৩ সালে রাজধানীর মতিঝিলে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে অভিযান নিয়ে তথ্য বিকৃতির অভিযোগে মামলাটি করা হয়েছিল। মামলার অভিযোগপত্রে বলা হয়, আসামি আদিলুর ও এলান ৬১ জনের মৃত্যুর বানোয়াট, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রতিবেদন তৈরি ও প্রচার করে জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি করে আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নের অপচেষ্টা চালায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সরকার ও রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি দেশে-বিদেশে চরমভাবে ক্ষুণ্ণ করে।