মুক্তিযোদ্ধার কন্ঠ ডেস্কঃ
ঈদে সবাই বোনাস পায়, তাইলে আমরারে বোনাস দিবা না কেনো? শুধু বউকে বোনাস দিলেই হবে? আমরাও না ডার্লিং হই! ডার্লিংকে ঈদ বোনাস দিতে হবে না?
রাজধানীর খামারবাড়ী এলাকায় ফুলবানু, লালবানুদের ‘দৌরাত্ম্য’ অতিষ্ট পথচারী। সাধারণ মানুষদের এভাবে অত্যাচার করা কেন? এই প্রশ্নের উত্তরেই উপরের কথাটি এক নিঃশ্বাসে বললো একজন।
আর ক’দিন পরই মোসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। বেতন-বোনাসের টাকায় চলছে কেনাকাটার তোড়জোড়। তাহলে এই যে উপেক্ষিত এবং সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখা একটা গোষ্ঠী- হিজড়া সম্প্রদায় এদের কেন ঈদ বোনাস থাকবে না? এ বাসনায় পিছিয়ে নেই রাজধানীর হিজড়া সম্প্রদায়ও।
শুক্রবার দুপুরে খামারবাড়ী এলাকায় দুজন হিজড়ার সঙ্গে কথা হয়। নাম বললো ফুলবানু আর লালবানু। অবশ্য তারা কখনো আসল নাম বলে না সেটা সবাই জানে। তারপরও বললো, ‘এইটা আমাদের আসল নাম না।’
কথায় কথায় আলাপ জমে উঠলো। জানা গেল, ফার্মগেট সিগন্যালে ঈদ বোনাস তোলার দায়িত্বে আছে তারা। বিভিন্ন সিগন্যালে তাদের মতো আরো অনেক দল আছে। তবে এ দায়িত্ব দিয়েছে কারা সে প্রশ্ন কৌশলে এড়িয়ে যায়।
রাস্তায় এভাবে বোনাস সংগ্রহের কাজটা নিয়ে মসকরা করে বলে, ঈদ উপলক্ষে বিশেষ অপারেশনে আছে তারা। বলে, ‘ঈদে সবাই বোনাস পায়, তাইলে আমারারে বোনাস দিবা না কেনু। শুধু বউকে বোনাস দিলেই হবে! আমরাও না ডার্লিং হই। ডার্লিংকে ঈদ বোনাস দিতে হবে না?’
শুনতে অনেকের কাছে বিশ্রি লাগলেও এটা তো সত্য এরা আসলেই অনেক বিবাহিত বা অবিবাহিত পুরুষের ‘ডার্লিং’, গোপন প্রেমিকা। এক বেসরকারি জরিপে জানা যাচ্ছে, হিজড়াদের প্রায় শত ভাগই যৌনকর্মী। তাহলে প্রতি এরা যাদের হাতবদল হচ্ছে তাদের অনেকেই তো সমাজে সম্মানের সাথে স্থান পাওয়া মানুষই। এই হিজড়ারা তো তাদেরই কারো না কারো ‘ডার্লিং’!
তবে তারা যে সাধারণ মানুষকে হেনস্থা করে না তা নয়। মিরপুর, আসাদগেট, ফার্মগেট, আগারগাঁও, বাংলামোটর, শাহবাগ, এলিফ্যান্ট রোড, নিউমার্কেট প্রভৃতি এলাকায় হিজড়াদের টাকা তুলতে দেখা গেছে। টাকা না দিলে অনেক যাত্রী বা পথচারীকে হেনস্থা করছে তারা।
দুই থেকে তিন জনের ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সিগন্যালগুলোতে তাদের অবস্থান। বাস, রিকশা বা অন্য যানবাহন সিগন্যালে থামার সঙ্গে সঙ্গেই যাত্রীদের কাছে গিয়ে ঈদ বোনাস দাবি করে বসছে। কোনো যাত্রী টাকা দিতে অস্বীকার করলে নানাভাবে হেনস্থা করছে। হেনস্থা হওয়ার ভয়েই টাকা দিচ্ছে অনেকে। নারী-পুরুষ, তরুণ-বয়স্ক কাউকেই ছাড় দিচ্ছে না হিজড়ারা।
কয়েকদিন আগের ঘটনা। সকালে আসাদগেট সিগন্যাল থেকে বাসে উঠলো দুই হিজড়া। উঠেই যাত্রীদের কাছ থেকে টাকা তুলতে শুরু করলো। এক বয়স্ক যাত্রী টাকা দিতে না চাইলে এক হিজড়া তার কোলে চড়ে বসে। টাকা না দেয়ায় অপর এক যাত্রীর কপালে চুমু খেতেও যায়।
হিজড়ারা টাকা তুলে বাস থেকে নেমে যাওয়ার পরপরই যাত্রীদের মধ্যে শুরু হলো তুমুল প্রতিক্রিয়া। একজন বললেন, ‘হিজড়ারা এভাবে প্রকাশ্যে ক্রাইম করছে। মানুষকে বেকায়দায় ফেলে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এদের মধ্যে বেশিরভাগই ফ্রড, নকল হিজড়া।’
অপর এক যাত্রী বললেন, ‘দেশে হিজড়াদের কাজের কোনো ক্ষেত্র নেই। পরিবার ও সমাজ তাদের ভালো চোখে দেখে না। এরা কোথায় যাবে। মানুষের কাছ থেকে সাহায্য নিয়েই এদের চলতে হয়। সরকার এদের কাজে লাগাতে না পারলে কিছুদিন পর অবস্থা আরো ভয়াবহ হবে।’
অথচ হিজড়ারা সামনে থাকা অবস্থায় কেউ টুঁ শব্দটিও করলেন না।
এদিকে, সমাজ সেবা অধিদপ্তরের ২০১২ সালের এক জরিপে দেখা গেছে, দেশে হিজড়া জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ৯ হাজার ২৮৫ জন। একই সময়ে করা আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের জরিপ অনুযায়ী এ সংখ্যা দাঁড়ায় প্রায় ৯ হাজারের কাছাকাছি। এই হিসাবটা শুধু সরকারি ভাতা যারা পায় তাদের। হিজড়াদের নিয়ে কখনো পূর্ণাঙ্গ জরিপ হয়নি।
বর্তমানে ৬৪টি জেলায় হিজড়াদের জন্য সরকারের কর্মসূচি চলছে। এসব কর্মসূচির আওতায় আছে, প্রাথমিক থেকে উচ্চস্তর শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষাবৃত্তি, বিভিন্ন প্রশিক্ষণ প্রদান, প্রশিক্ষণ শেষে ১০ হাজার টাকা অনুদান, ৫০ বছরের বেশি বয়সী এবং অক্ষম ও অস্বচ্ছল হিজড়াদের মাসিক ৫০০ টাকা ভাতা প্রদান।