বিভিন্ন দেশ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার পাশা পাশি মিশর থেকে রাফাহ সীমান্তের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য গাজায় সহায়তা পাঠাতে বাংলাদেশ থেকে মিশর ছুটে এসেছেন এক যুবক। প্রকৌশলী মুহাম্মদ নাছির উদ্দিন নামের এই যুবক আমেরিকা ভিত্তিক বাংলাদেশী এনজিও ”আশ” ফাউন্ডেশন এর সভাপতি। মিশরের অন্যতম বৃহৎ এনজিও সংস্থা ‘ইজিপশিয়ান ফুড ব্যাংক’ ও "ইজিপশিয়ান ইয়ুথ কাউন্সিল"এর সাথে যৌথ ভাবে গাজায় মানবিক সাহায্য পাঠাচ্ছেন তিনি।
মুহাম্মদ নাছির উদ্দিন এই প্রতিবেদককে জানান, বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে অসহায় দেশটির ছোট ছোট কচি বাচ্চা, শিশুদের ছিন্নভিন্ন নিথর দেহ, অপ্রতুল চিকিৎসা নিয়ে হসপিটালের বেডে রক্তাক্ত শরীরের চীৎকার আমাকে বাংলাদেশে থাকতে দেয়নি। শুনেছি, গাজার সাথে একমাত্র সীমান্ত রাফা ক্রসিং এর মাধ্যমেই গাজাতে সহযোগিতা পাঠানো যায়। তাই, নির্যাতিত মানুষের পাশে দাঁড়াতে গত ৫ই নভেম্বর ছুটে এসেছি কায়রোতে।
তিনি জানান, সম্পূর্ণ অপরিচিত এই কায়রোতে এসে প্রথমেই ছুটে গিয়েছিলাম, বাংলাদেশ দূতাবাসে, সেখান থেকে কোন সহযোগিতা না পেয়ে মিশর সরকার অনুমোদিত ইজিপশিয়ান ফুড ব্যাংকের সাথে আমেরিকায় রেজিস্ট্রার্ড আশ ফাউন্ডেশন ইউ এস এ ইনক এর সাথে MoU করে তাদের মাধ্যমে দু'হাজার পরিবারের জন্য খাবার এবং পানির পাঠালাম।
এর আগে, মিশর সরকার অনুমোদিত সংস্থাটির সাথে গাজায় জরুরী সহযোগিতা পাঠাতে দীর্ঘ আলাপ আলোচনা, যাচাই-বাছাই এর পর দুই দেশের দুই সংস্থার মধ্যে সম্পাদিত করি মেমোরেন্ডাম অব আন্ডারস্ট্যান্ডিং (MoU)।
ASH Foundation এর সাথে MoU সম্পাদন করা ইজিপশিয়ান ফুড ব্যাংক’ রাফা সীমান্ত ও গাজায় সহযোগিতা পাঠাতে মিশর সরকার অনুমোদিত ৫টা সংস্থার মধ্যে অন্যতম একটি সংস্থা। এর ফলে আমরা ASH Foundation এর ভালোবাসার উপহার (জরুরী খাবার সামগ্রী) রেড ক্রিসেন্ট হয়ে গাজায় অবস্থিত জাতিসংঘের (UNRWA) এর সুনির্দিষ্ট বিতরন কেন্দ্রে পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়েছি। দু'দেশের অনুমোদন সাপেক্ষে ফিল্ডে সরাসরি স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে আমরা জরুরি ত্রান গুলো গাজায় পৌঁছে দিচ্ছি।
নাছির উদ্দিন আরো জানান, ইতি মধ্যে ইজিপশিয়ান ইয়ুথ কাউন্সিল নামে আরেকটি মানবিক সংস্থার সাথে কথা বলে এদের সাথেও MoU করলাম। গাজায় ত্রাণ পাঠাতে মিশর সরকার অনুমোদিত সংস্থার মাধ্যমে এলায়েন্সের লোগো সম্বলিত ট্রাকে করে ত্রাণ পাঠাতে হয়। এর আগে ত্রাণ গুলো কায়রোতে ইন্সপেকশন হয়ে সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স নিতে হয়। অত:পর রাফা ক্রসিং এ রেড ক্রিসেন্ট এর মাধ্যমে গাজাস্থ UNRWA এর বিতরণ পয়েন্ট গুলোতে পৌঁছাতে হয়। অবশ্য সীমান্তে ইসরাইলী সেনাবাহিনী ত্রান গুলো পর্যবেক্ষণ করে অনুমতি দিলেই গাজায় প্রবেশ করানো সম্ভব হয়।
তিনি জানান, আমরা ইচ্ছে করলেই যে কোন সামগ্রী পাঠাতে পারি না। রেড ক্রিসেন্ট এর চাহিদা পত্র যা ইসরাইল অনুমোদন দিয়েছে শুধুমাত্র এমন সামগ্রী ই পাঠাতে পারি ।
তিনি জানান, খবর পেলাম গাজায় কাফনের কাপড় সংকট। সকলে খাবার দাবার দিলেও কেউ কাফনের কাপড় দিচ্ছে না। সাথে সাথে বাচ্চাদের মুখছ্ববি নিথর দেহ আবার চোখের সামনে ভেসে উঠলো। সিদ্ধান্ত দিলাম, কাফনের কাপড় পাঠাবো। স্থানীয় সাপ্লাইয়ারের সাথে আমাদের একজন যোগাযোগ করলেন। স্টক সংকট, তিনি দিতে পারছেন না, ছুটলাম বাজারে। দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত ছুটাছুটি করে ৫০ জন নারী, ৫০ জন পুরুষ ও ১১০ জন শিশুর জন্য আঁতর, সাবান ইত্যাদি নিয়ে পুরো কাফনের কাপড়ের সেট তৈরী করে এই কাফনের কাপড় সহ দুই হাজার পরিবারের জন্য পানি লরীতে লোড দেয়া হলো। সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স নিয়ে এসব গাড়ী ছুটছে প্রিয় গাজার উদ্দেশ্যে।
এই কনভয়ের সাথে যাচ্ছে অস্ট্রেলিয়ান এক সংস্থার ট্রাক, ইন্দোনেশিয়া ও সিংগাপুরের সহযোগিতা। দেখলাম উনাদের দেশের স্ব স্ব রাষ্ট্রদূতরা ফিল্ডে এসে ত্রান কর্মীদের উৎসাহিত করতে।
আমরাও চেষ্টাকরেছি লাল সবুজের পতাকাখচিত গেঞ্জী পরে উপহার পাঠানো ট্রাকের সামনে দাঁড়ানো জন্য৷ কেউ করোক বা না করুক প্রিয় দেশকে আমরাই বিশ্বের বুকে মাথা উচু করে দেখাবো, ইনশাআল্লাহ।