ক্রিড়াডেস্কঃ নতুন বছরে নতুন মহাদেশে আরেকটি কোপা আমেরিকা-ফাইনালেও আগের বছরের সেই দুই প্রতিপক্ষ। গতবারের রানার্সআপ আর্জেন্টিনা শিবিরে তাই সেই পুরনো লক্ষ্য- চিলিকে হারিয়ে শিরোপা খরা ঘোচানো।
যুক্তরাষ্ট্রের ইস্ট রাদারফোর্ডে বাংলাদেশ সময় আগামী সোমবার ভোর ৬টায় শুরু হবে কোপা আমেরিকার শতবর্ষী আসরের ফাইনাল।
মেটলাইফ স্টেডিয়ামে পরিষ্কার ফেভারিট হিসেবেই ফাইনাল ম্যাচটি খেলতে নামবে ১৯৯৩ সালের কোপা আমেরিকা জয়ের পর আর কোনো শিরোপার মুখ না দেখা আর্জেন্টিনা।
পিঠের চোটের কারণে চিলির বিপক্ষে এবারের প্রতিযোগিতায় নিজেদের প্রথম ম্যাচে খেলতে পারেননি দেশটির অধিনায়ক মেসি। তাকে ছাড়াই চিলিকে ২-১ গোলে হারিয়েছিল আর্জেন্টিনা।
এর পর সামনে পড়া সব প্রতিপক্ষকেই উড়িয়ে দিয়ে ফাইনালে উঠে জেরার্দো মার্তিনোর দল। এখন পর্যন্ত খেলা ৫ ম্যাচে প্রতিপক্ষের জালে ১৮টি গোল করে তারা। বিপরীতে খেয়েছে কেবল ২ গোল।
আর্জেন্টিনা অধিনায়ক মেসি আছেন দারুণ ছন্দে। চিলির বিপক্ষে না খেলা বার্সেলোনার এই তারকা পরের দুই ম্যাচে মাঠে নামেন বদলি হিসেবে। তবে ৫ গোল করে এখন পর্যন্ত টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা তিনি। ৬ গোল নিয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতা চিলির এদুয়ার্দো ভারগাস।শুধু মেসিই নন, আর্জেন্টিনার আক্রমণভাগের আরেক তারকা গনসালো হিগুয়াইনও ফর্মেই আছেন। ৪ গোল করে এখন পর্যন্ত টুর্নামেন্টের তৃতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা সেরি আতে এক মৌসুমে সবচেয়ে বেশি গোলের রেকর্ড গড়ে কোপা আমেরিকায় আসা নাপোলির এই ফরোয়ার্ড।
এই টুর্নামেন্টে এখনও পর্যন্ত নিজের নামের প্রতি সুবিচার করতে না পারলেও বড় উপলক্ষে জ্বলে ওঠার সামর্থ্য আছে ম্যানচেস্টার সিটির ফরোয়ার্ড সের্হিও আগুয়েরোরও।
২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপে শিরোপা-খরা ঘোচানোর খুব কাছে চলে গিয়েছিল আর্জেন্টিনা। কিন্তু ফাইনালে জার্মানির কাছে ১-০ গোলে হেরে মেসিদের স্বপ্ন ভাঙে। এর পর গত বছর চিলির কাছে ফাইনালে হেরে আবারও হতাশ হয়ে ফিরতে হয় তাদের। সব মিলিয়ে আর্জেন্টিনা জাতীয় দলের হয়ে এখনও পর্যন্ত কিছু জিততে না পারা মেসি এবার বেশ সতর্ক। ইতিহাস বদলাতে মরিয়া এই তারকা ফরোয়ার্ড সতীর্থদের সর্বস্ব উজাড় করে দেওয়ার অনুরোধ করেন।“টানা তিনটি ফাইনালে ওঠা অসাধারণ। আমি আশা করি, খুব আকাঙ্ক্ষিত কাপটি আমরা জিততে পারব।”
“এখন কিছু না দেওয়ার সময় নয়। কারণ, আমরা এখানে যা অর্জন করতে এসেছিলাম তার খুব কাছে চলে এসেছি। গত বছর থেকে আমরা দল হিসেবে অনেক উন্নতি করেছি। আমরা খুব ভালোভাবে এখানে এসেছি। আমরা খুব রোমাঞ্চিত এবং ফাইনালে খেলতে উন্মুখ হয়ে আছি।”
চিলিকে নিয়ে সতীর্থদের অবশ্য সাবধান করে দেন মেসি।
“আমরা চিলিকে চিনি, এটা খুব নিখুঁত একটি দল এবং এ কারণেই আবার ফাইনালে উঠেছে তারা।”
গত বছরের ফাইনালের পুনর্মঞ্চায়নকে অনেকেই দেখছেন আর্জেন্টিনার জন্য প্রতিশোধ নেওয়ার উপলক্ষ হিসেবে। গ্রুপ পর্বে মুখোমুখি হওয়ার আগে আর্জেন্টিনা কোচ মার্তিনো বলেছিলেন, বিষয়টিকে এভাবে দেখেন না তারা। এবার মেসিও বলেন, প্রতিশোধ নিয়ে ভাবছে না তার দল।“যা শেষ এবং আমরা যেটা জিততে পারিনি তা অবশ্যই ভুলে যেতে হবে আমাদের। আর ভাবুন, আমরা একটা নতুন সুযোগ পেয়েছি।”
চিলিকে প্রথমবারের মতো কোপা আমেরিকা জেতানো হোর্হে সামপাওলি কোচের পদ ছেড়ে দেওয়ার পর দেশটির জাতীয় দলের দায়িত্ব নিয়েছিলেন হুয়ান আন্তোনিও পিস্সি। তবে তাদের খেলার ধরন আর মানসিকতায় কোনো পরিবর্তন আসেনি।
প্রতিপক্ষকে ভীষণ চাপে রেখে আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলার সঙ্গে রক্ষণেও বেশ গোছানো চিলি। কোয়ার্টার-ফাইনালে মেক্সিকোর জালে সাতবার বল পাঠালেও বিপরীতে কোনো গোল খায়নি তারা।
মুখোমুখি লড়াইয়ের পরিসংখ্যানে অবশ্য একতরফাভাবে এগিয়ে ফিফা র্যাংকিংয়ের এক নম্বরে থাকা আর্জেন্টিনা। এ পর্যন্ত খেলা ৮৭ ম্যাচের ৫৮টিতেই জয় পেয়েছে তারা। বিপরীতে চিলি জিতেছে কেবল ৬ ম্যাচে। বাকি ২৩টি ম্যাচ হয়েছে ড্র।ফিফা র্যাংকিংয়ের ৫ নম্বরে থাকা চিলির কোচ পিস্সি অবশ্য অতীত নিয়ে ভাবছেন না। ক্লাওদিও ব্রাভো, গারি মেদেল, আর্তুরো ভিদাল, আলেক্সিস সানচেস সমৃদ্ধ তার দলও শিরোপা জিততে পারে বলে বিশ্বাস করেন তিনি।
“আমরা খুব ভালো অবস্থায় ফাইনালে এসেছি। আমরা শক্তিশালী। তাদের (খেলোয়াড়দের) অবশ্যই প্রতিপক্ষকে সমীহ করতে হবে, কিন্তু তাদের অবশ্যই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে হবে এবং জিততে হবে।”
ফাইনালের আগে আর্জেন্টিনা দলে চোট নিয়ে দুশ্চিন্তা আছে। মাঝমাঠে দলের অন্যতম বড় ভরসা আনহেল দি মারিয়ার এই ম্যাচে খেলা নিয়ে শঙ্কা আছে। অ্যাডাক্টর মাংসপেশির চোটে পড়া দি মারিয়া গত বৃহস্পতিবার অনুশীলনে ফিরলেও পুরো সেশন শেষ করতে পারেননি। পরীক্ষা করার পর তার চোটের অবস্থার অবনতি ধরা পড়ে।
বাঁ কনুইয়ের রেডিয়াল হাড়ে চিড় ধরায় খেলতে পারবেন না ফরোয়ার্ড এসেকিয়েল লাভেস্সি। আরেক ফরোয়ার্ড নিকোলাস গাইতানের সঙ্গে চোটে ভুগছেন ডিফেন্ডার মার্কোস রোহো ও মিডফিল্ডার আউগুস্তো ফের্নান্দেসও।চোটের থাবা পড়েছে চিলি দলেও। কলম্বিয়ার বিপক্ষে ২-০ গোলে জেতা সেমি-ফাইনালে হাঁটুর চোটে পড়েন মিডফিল্ডার পাবলো এর্নান্দেস। এই টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরা মিডফিল্ডার মার্সেলো দিয়াসের খেলা নিয়েও শঙ্কা আছে।
সব কিছুর পরও ফুটবল রোমাঞ্চপিয়সীরা ধ্রুপদী এক ফাইনাল দেখার অপেক্ষায় থাকতেই পারে।