মিশর প্রতিনিধি: ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় হামাসের হাতে বন্দি থাকা ড্যানিয়েল অ্যালোনি নামের এক ইসরায়েলি নারী বন্দি হামাসের কাসাম ব্রিগেড যোদ্ধাদের সদয় ও মানবিক আচরণের জন্য তাদের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে চিঠি লিখেছেন।
তিনি লিখেছেন, আমরা আগামীকাল আলাদা হতে যাচ্ছি। তবে যাওয়ার আগে আমার অন্তরের অন্ত:স্থল থেকে আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। আপনারা আমার মেয়ে এমিলিয়ার প্রতি যে অসম্ভব সুন্দর আদর ও যত্ন দেখিয়েছেন তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। বন্দিত্ব চলাকালীন আপনারা তাকে তার মা বাবার মতো আগলে রেখেছেন। সে তার ইচ্ছে মতো আপনাদের রুমে যেয়ে ঘুরে আসতে পারতো। সে আপনাদেরকে তার বন্ধু মনে করতো। শুধু বন্ধুই না, প্রকৃত আহবাব ও অন্তরঙ্গ বন্ধুর মতো ছিলেন আপনারা। বন্দির সময়টাতে আপনারা যেরকম অভিভাবক সূলভ আচরণ করেছেন, সে জন্য অসংখ্য, অগনিত ধন্যবাদ!
ড্যানিয়েল অ্যালোনি আরো লিখেছেন, আপনারা আমার মেয়ের জ্বালাতন সহ্য করেছেন, অপর্যাপ্ততা সত্বেও বিভিন্ন ফলমূল, চকোলেট, মিষ্টান্ন দিয়ে তাকে সময় দিয়েছেন, সে জন্যও অশেষ ধন্যবাদ জানাই। বাচ্চাদের বন্দী হওয়া অনুচিত। কিন্তু আপনাদের অনুগ্রহ ও স্নেহময়তার পরশে আমার মেয়ে নিজেকে গাজা'র রাণী ভাবতো। আরো সোজা ভাষায় বললে, সে নিজেকে বিশ্বের কেন্দ্রবিন্দু মনে করতে শুরু করেছিলো।
এই পথ পরিক্রমায় আমরা আরো অনেক ভালো মানুষ দেখেছি। এই লম্বা সময়ে একেবারে সাধারণ সৈনিক থেকে অফিসার পর্যন্ত সবাই আমাদের সাথে অত্যন্ত সুন্দর আচরণ ও মধুর ব্যবহার করেছেন।
আমার মেয়ে এখান থেকে কোন প্রকার মেন্টাল ডিজঅর্ডার ছাড়াই বাড়ি যেতে পারছে, সে জন্য আপনাদের প্রতি আমি চিরকৃতজ্ঞ।
গাজায় আপনারা ভয়াবহ অবস্থা ও চরম মানবিক সংকট মোকাবিলা করছেন। এতদসত্বেও আপনারা আমাদের প্রতি যে উত্তম আচরণ করেছেন, সেটা আমি অবশ্যই সবাইকে বলবো।
তিনি লিখেন, ইশ, আমরা যদি এই পৃথিবীতে একে অপরের ভালো বন্ধু হতে পারতাম! আপনাদের এবং আপনাদের পরিবার পরিজনের সুস্থতা ও কল্যাণ কামনা করে শেষ করছি।
ইতি: দানিয়েল ও এমিলিয়া
উল্লেখ্য, ছয় বছর বয়সী মেয়ে এমিলিয়ার সঙ্গে ড্যানিয়েল অ্যালোনি নামের ওই নারীকে গাজায় আটক করে রাখা হয়েছিল। যুদ্ধবিরতির প্রথম দিনে মা-মেয়ে দুজনেই মুক্তি পান। (মূল চিঠিটি হিব্রু ভাষায় লেখা। সেটাকে আরবিতে অনুবাদ করে আজ হা/মা/সের পক্ষ থেকে প্রকাশ করা হয়েছে।)
ইসরায়েলি ও বিদেশি নাগরিকদের বন্দি করার পর হামাস জানিয়েছিল তারা গাজার মেহমান। তাদের প্রতি কোনো প্রকার অন্যায় করা হবে না। এমনকি বন্দিদের প্রয়োজনীয় সেবা দেওয়া হচ্ছে বলেও জানায় সশস্ত্র গোষ্ঠীটি। এর আগে, যুদ্ধের শুরুর দিকে চার বন্দিকে মুক্তি দিয়েছিল সংগঠনটি। তারা হলেন- মার্কিন নাগরিক জুডিথ রানান ও তার মেয়ে নাতালি রানান এবং ইসরায়েলি নাগরিক নুরিত কুপার ও ইয়োশেভেদ লিফশিৎজ। এসব বন্দিরা জানিয়েছিলেন হামাস সদস্যরা তাদের সঙ্গে সর্বোচ্চ মানবিক আচরণ করেছেন, এমনকি তাদের স্বাস্থ্যগত পরিচর্যাসহ প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ করেছে।