muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

জাতীয়

ডিসি-এসপিকে হুমকি, রামগঞ্জের স্বতন্ত্র প্রার্থী পবনকে ইসিতে তলব

ডিসি-এসপিকে হুমকি, রামগঞ্জের স্বতন্ত্র প্রার্থী পবনকে ইসিতে তলব

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লক্ষ্মীপুর-১ (রামগঞ্জ) আসনের ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী হাবিবুর রহমান পবনের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় লক্ষীপুর জেলা প্রশাসক নির্বাচন কমিশন বরাবর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে সুপারিশ করেছেন। এ ব্যাপারে পবনকে ইসিতে তলব করা হয়েছে। ১ জানুয়ারি বিকেল ৩টায় নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে সশরীরে উপস্থিত হয়ে ইসির কাছে ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়।

ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র এ প্রার্থী বাংলাদেশ যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য।

শনিবার (৩০ ডিসেম্বর) লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহান নির্বাচন কমিশন (ইসি) বরাবর স্বতন্ত্র প্রার্থীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে সুপারিশ করেন। এছাড়া হাবিবুর রহমান পবনকে সশরীরে নির্বাচন ভবনে হাজির ও ব্যাখ্যা দেয়ার জন্য চিঠি পাঠানো হয়েছে রোববার (৩১ ডিসেম্বর)।

এ চিঠি পাঠিয়েছেন ইসির আইন শাখার উপ-সচিব মো. আব্দুছ সালাম।

জেলা প্রশাসক সুপারিশ পত্রে বলা হয়, নির্বাচন কার্যক্রম শুরু থেকে লক্ষ্মীপুর-১ আসনের ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. হাবিবুর রহমান পবনের আচরণের বিষয়ে সময়ে সময়ে মৌখিকভাবে অবহিত করা হয়। কিন্তু এ স্বতন্ত্র প্রার্থী রিটার্নিং অফিসারকে হোয়াটসঅ্যাপে হুমকি প্রদানের ঘটনায় নির্বাচন সংশ্লিষ্ট সকল কর্মকর্তা উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন। নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে তাদের মধ্যে ভয়-ভীতি ও শঙ্কা কাজ করছে।

নির্বাচন কমিশনকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণে সুপারিশ পত্রে বলা হয়, ১৯৭২-এর ৮৪ক অনুচ্ছেদ অনুসারে লক্ষ্মীপুর-১ সংসদীয় আসনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান পবন (প্রতীক-ঈগল) অপরাধ করেছেন। তার অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনায় এবং নির্বাচনের সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ অবস্থা বজায় রাখাসহ মাঠ পর্যায়ে নির্বাচনের দায়িত্বপালনকারী কর্মকর্তাদের মনোবল অক্ষুন্ন রাখার স্বার্থে ব্যবস্থা নেয়া হোক।

লক্ষ্মীপুর-১ আসনের নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি ইসি বরাবর জানিয়ে জেলা প্রশাসক পক্ষ থেকে বলা হয়, চলমান দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জেলা প্রশাসক রিটার্নিং কর্মকর্তা হিসাবে দায়িত্ব পালন করছেন। রিটার্নিং কর্মকর্তার নেতৃত্বে নির্বাচনী এলাকায় পুলিশ, এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট, বিজিবি, র‍্যাব, আনসার, কোস্টগার্ডসহ জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা, প্রিসাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার ও অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারীরা নির্বাচনী দায়িত্ব পালন কাজে নিয়োজিত রয়েছে। সবার সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে লক্ষ্মীপুর জেলার চারটি সংসদীয় আসনে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনের যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। এ ছাড়াও জেলার আইনশৃঙ্খলা ও নির্বাচনী পরিবেশ এখন পর্যন্ত স্বাভাবিক রয়েছে। প্রার্থীদের সহাবস্থান নিশ্চিতে নির্বাচনী এলাকায় জেলা প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যৌথ টহল চলমান রয়েছে।

জানা যায়, লক্ষ্মীপুর-১ (রামগঞ্জ) আসনের স্বতন্ত্র পদপ্রার্থী মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান পবন শনিবার সন্ধ্যা সাতটা ২২ মিনিটে লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহানকে হোয়াটসএ্যাপে ফোন করেন। এ সময় তিনি ফোন কলে নির্বাচনী বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে আলোচনার উচ্চবাচ্য শুরু করেন। এক পর্যায়ে তিনি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে অকথ্য ভাষায় আপত্তিকর বক্তব্য দেন।

ইসি বরাবর জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে বলা হয়, স্বতন্ত্র প্রার্থী তার বক্তব্যে রিটার্নিং অফিসার ও পুলিশ সুপারকে তিন দিনের মধ্যে বদলিসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে মন্তব্য করেন ও হুমকি দিয়ে বলেন, ‘আপনার সব কথা রেকর্ড হচ্ছে। আমি বুঝে গেছি আপনারা থাকলে আমি নির্বাচন করতে পারব না। আপনি যা যা বলেছেন কিছুই করেননি। আমি (স্বতন্ত্র প্রার্থী) আপনাকে (২৮ ডিসেম্বর) ১২ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছিলাম। দৃশ্যমান কিছুই করেন নাই, কোনো আসামি গ্রেপ্তার হয়নি। কোনো অভিযোগ দিলে আপনি পাঠান এসপির কাছে, এসপি পাঠায় আপনার কাছে। এসপি আমাকে আইন দেখায়। আপনি আর এসপি এখানে কীভাবে কাজ করেন তা আমি দেখে নিব। আপনি আর এসপি আগামী তিন দিনের মধ্যে এর ফলাফল জানতে পারবেন। আপনারা জানেন না আমি কোথায় যেতে পারি। আগামীকাল নির্বাচন কমিশনে যাবো, আপনারা কীভাবে এখানে থাকেন তা আমি দেখবো।’ প্রায় ৪ মিনিট বক্তব্য প্রদানকালে জেলা প্রাশাসক ও পুলিশ সুপারকে বিভিন্ন হুমকি দেন বলে ওই পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়।

এদিকে, ব্যাখ্যা চেয়ে তলবের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লক্ষ্মীপুর-১ সংসদীয় আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান পবন ৩০ ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৭টা ২২ মিনিটে সময় জেলা প্রশাসক, লক্ষ্মীপুর ও সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারকে ০১৯০৪৮৩১৮৮৪ নম্বর হতে Whats app এর মাধ্যমে ফোন কল করে অকথ্য, আপত্তিকর ও অশোভন বক্তব্য দেন এবং রিটার্নিং অফিসার ও পুলিশ সুপারকে তিন দিনের মধ্যে বদলিসহ বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে ভয়-ভীতি ও হুমকি দেন।

অধিকন্তু, সংশ্লিষ্ট নির্বাচনি অনুসন্ধান কমিটি উক্ত প্রার্থী নির্বাচনি আচরণবিধি লঙ্ঘন ও নির্বাচনি অপরাধে জড়িত থেকে নির্বাচন-পূর্ব অনিয়ম’ সংঘটন করেছেন মর্মে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশসহ প্রতিবেদন ৩১ ডিসেম্বর নির্বাচন কমিশনে প্রেরণ করেছেন। উপরিউক্ত কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে Representation of the People Order, 1972 এর Article 84A এর বিধান লঙ্ঘন করেছেন।

এমতাবস্থায়, বর্ণিত উপায়ে নির্বাচনি অপরাধসহ ‘নির্বাচন-পূর্ব অনিয়ম’ সংঘটনের দায়ে Representation of the People Order, 1972 এর Article 91A এবং Article 9IE এর বিধান অনুযায়ী আপনার বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়ে আগামী ১ জানুয়ারি বিকেল ৩টায় নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে (কক্ষ নং-৩১৪, নির্বাচন ভবন, আগারগাঁও, ঢাকা) সশরীরে উপস্থিত হয়ে আপনাকে নির্বাচন কমিশনের কাছে ব্যাখ্যা দেয়ার জন্য অনুরোধ করা হলো।

Tags: