সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি শীত পড়েছে ২০১৮ সালে। ঐ বছরের ৮ জানুয়ারি পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় তাপমাত্রা নেমেছিল দুই দশমিক ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াসে, যা বাংলাদেশের ইতিহাসে রেকর্ড। সেবছর সারাদেশে দফায় দফায় তীব্র শৈত্যপ্রবাহও দেখা গিয়েছিল। সেখানে এ বছর এখন পর্যন্ত কোনো জেলাতেই তীব্র শৈত্যপ্রবাহ দেখা যায়নি বলে জানাচ্ছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
কিন্তু তারপরও কেন অস্বাভাবিক শীতের কথা বলছে সাধারণ মানুষ? এই প্রশ্নের জবাবে আবহাওয়াবিদরা বলছেন, খাতা-কলমে তাপমাত্রা খুব একটা না কমলেও বেশ কিছু কারণে এবার শীত বেশি অনুভূত হচ্ছে। পুরো জানুয়ারি মাসজুড়েই শীতের এমন অনুভূতি থাকতে পারে বলেও জানিয়েছেন তারা।
দীর্ঘ সময়ের কুয়াশা
যেসব কারণে বাংলাদেশে এ বছর শীত বেশি অনুভূত হচ্ছে, সেগুলোর একটি হচ্ছে দীর্ঘ সময় ধরে কুয়াশা পড়া। কোথাও কোথাও ১৮ থেকে ২০ ঘণ্টা পর্যন্ত কুয়াশা থাকছে। আর এই দীর্ঘ সময়ের কুয়াশার কারণে সূর্যের কিরণকাল কমে এসেছে। অর্থাৎ সূর্য বেশিক্ষণ আলো দিতে পারছে না। এতে ভূপৃষ্ঠ উত্তপ্ত হতে না পারায় দিনের ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য অনেকটাই কমে গেছে। ফলে শীতও বেশি অনুভূত হচ্ছে।
হঠাৎ কুয়াশা বাড়ছে কেন?
বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা আইকিউ এয়ারের সূচকে সম্প্রতি বেশ কয়েকবারই রাজধানী ঢাকাকে শীর্ষ দূষিত শহরের তালিকায় দেখা গেছে। যানবাহন, ইটভাটা ও শিল্প-কারখানার দূষিত ধোঁয়ার পাশাপাশি নির্মাণকাজের সংখ্যা বৃদ্ধিসহ নানান কারণে সারাদেশেই আগের চেয়ে বায়ু দূষণ বেড়েছে বলে বিভিন্ন গবেষণায় বলা হচ্ছে।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, দূষিত এই বাতাসে প্রচুর পরিমাণে ধূলিকণা মিশে রয়েছে, যা মেঘ ও কুয়াশা তৈরিতে নিয়ামক হিসেবে ভূমিকা রাখছে।
হিমালয়ের বাতাস
আবহওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক গণমাধ্যমকে বলেছেন, পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশজুড়ে উচ্চচাপ বলয় তথা বাতাসের চাপ বেশি থাকার কারণে হিমালয়ের পাদদেশ থেকে উত্তর প্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গ হয়ে শীতের ঠান্ডা বাতাস উত্তর ও উত্তর-পশ্চিম দিক থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করায় শীতের অনুভূতি তীব্র হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ঊর্ধ্ব আকাশের বাতাস খুব ঠান্ডা হওয়ায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে ‘জেড স্ট্রিম’ বা প্রচণ্ড গতিবেগ সম্পন্ন বাতাস কখনো নিচে নেমে আসছে, কখনো উপরে উঠে যাচ্ছে। এর ফলে শীত বেশি অনুভূত হচ্ছে।
ঘন কুশায়ায় স্বাস্থ্য ঝুঁকি
বায়ু দূষণের কারণে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার সারাদেশেই বেশি কুয়াশা দেখা যাচ্ছে। ধূলিকণাময় এই কুয়াশা শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে শরীরে ঢুকলে নানা ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি হতে পারে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
এ বিষয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের (ঢামেক) ডা. শাহনূর শরমিন গণমাধ্যমকে বলেন, বাংলাদেশে এখন আমরা আগের চেয়ে বেশি ফুসফুসের সমস্যা ও এলার্জিজনিত রোগ দেখতে পাচ্ছি। কুয়াশায় মিশে থাকা ধূলিকণা এসব রোগীদের শ্বাসযন্ত্রে ঢুকলে জটিলতা আরও বাড়তে পারে। সেজন্য কুয়াশার মধ্যে বাইরে বের হলে অবশ্যই মাস্ক পরে বের হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
বৃষ্টি ও শৈত্যপ্রবাহ
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আগামী কয়েকদিন দেশের বিভিন্ন জেলায় আকাশ আংশিক মেঘলা থাকতে পারে। শুক্রবার (১৯ জানুয়ারি) নাগাদ ঢাকা, খুলনা, রাজশাহী ও বরিশাল বিভাগে অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়ার সাথে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলেও জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ফলে এই সময়ে তাপমাত্রা আরও কমে আসতে পারে বলে জানানো হয়েছে।