মুক্তিযোদ্ধার কণ্ঠ ডেস্কঃ ‘তিনি ছিলেন আমার খুবই পছন্দের মানুষ। প্রিয় মানুষ। তাকে সবসময় ফলো করতাম। তার দ্বারা অনুপ্রাণিত হতাম। সবসময় তার পরামর্শ পেতাম, দিকনির্দেশনা নিতাম। তাকে আপন বড় ভাই হিসেবে জানতাম। সেই প্রিয় মানুষটি আমার হাতের ওপরই মারা যায়।’
গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত বানানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সালাউদ্দিন খানের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে এসব কথা বলেন বনানী থানার পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) মো. ওয়াহিদুজ্জামান।
তিনি জানান, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশে বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সালাউদ্দিন খানসহ তারা ঘটনাস্থলে যান। প্রথমবার তারা রেস্তোরাঁর প্রথম গেট পর হয়ে চিন্তা করেন- ভেতরে যাবেন, নাকি যাবেন না। তারা ভেতরে না গিয়ে ফিরে আসেন। পরে আবার তারা সামনের দিকে এগোতে থাকেন। আবার প্রথম গেট পার হন। তখনই আকস্মিকভাবে সন্ত্রাসীরা গ্রেনেড ছোড়ে। পরপর ৬/৭ টি গ্রেনেডের শব্দ পাওয়া যায়। এখানে যে এতো বড় ঘটনা ঘটবে, প্রথমে তা তারা বুঝতে পারেননি তারা। গ্রেনেড ছোড়ার পর তারা দিগ্বিদিগ ছোটাছুটি শুরু করেন।
রাতে অন্ধকারে কোথায় যাবেন, কী করবেন, কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলেন না। ভেতরে কারা আছে, কতজন আছে, কতজনকে জিম্মি করে রেখেছে, তাদের হত্যা করা হয়েছে নাকি জীবিত আছে, কিছুই বোঝা যাচ্ছিল না। গ্রেনেড হামলায় চার মিনিট পর মো. ওয়াহিদুজ্জামান ওসি সালাউদ্দীনকে দেখতে পান। এরপর তাকে নিয়ে যান হাসপাতালে। হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক জানান, তিনি মারা গেছেন।
গ্রেনেড হামলায় আহত হওয়ার পর তাকে উদ্ধার এবং চিকিৎসকের মৃত ঘোষণা- পুরো সময়টাই ওয়াহিদুজ্জামানের হাতের ওপর ছিলেন ওসি সালাউদ্দিন।
ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, প্রিয় মানুষ আমার হাতের ওপর মারা যায়। তার শোকে আমি মর্মাহত। ৭/৮ মাস ধরেই আমি তার কাছে কাছে থেকেছি।
ওসি সালাউদ্দিন সম্পর্কে ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ‘তার মতো ভালো মানুষ হয় না। একজন ভালো মানুষের যত গুণ থাকা দরকার তার সবই স্যারের ছিল। আমি সারা দিনে অন্তত ২০ বার স্যারের রুমে যেতাম। সব বিষয়ে স্যারের কাছ থেকে দিকনির্দেশনা নিতাম। তিনি ছিলেন আমার বড় ভাইয়ের মতো। তিনি সবসময় বটগাছের মতো ছায়া দিয়ে আমাদের আগলে রাখতেন। তার কাছে কোনো কিছুর জন্য এসে কেউ খালি হাতে ফেরেননি। তিনি প্রচুর দান করতেন। দেখতাম, তার এলাকার অনেক দরিদ্র মানুষ আসতেন। তিনি কাউকেই খালি হাতি ফেরাতেন না। যাকে যেভাবে সম্ভব সেভাবে সহযোগিতা করতেন।’
তিনি মনে করেন, সালাউদ্দিনকে হারিয়ে পুলিশ বিভাগ অনেক বড় কিছু হারিয়েছে। পুলিশের দক্ষ কর্মকর্তাদের মধ্যে তিনি অন্যতম। আইন বিষয়ে অনেক দখল ছিল তার। সব বিষয়ে জানে-বোঝে, এমন লোক খুবই কম আছে।
বনানী থানায় প্রবেশ করতে প্রথমেই চোখে পড়ে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) কক্ষ। রোববার দুপুরে বনানী থানায় গিয়ে দেখা যায়, থানার সবাই যেন নীরব। সবাই শোকাহত। প্রথম রুমের দরজার ওপরে নেম প্লেটে লেখা রয়েছে নিহত ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. সালাউদ্দিন খানের নাম। শুক্রবারও এই রুমে বসে ছিলেন ওসি সালাউদ্দিন। আজ আর তিনি নেই। রুমটি তালাবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। কর্মকর্তাদের অনুমতি ছাড়া রুমটি খোলা হয় না।
রুমের সামনে দাঁড়িয়ে ক্যালো ব্যাজ পড়ছিলেন কয়েকজন পুলিশ সদস্য। তাদের মধ্যে কনস্টেবল মশিউর বলেন, ‘স্যারের মতো ভালো মানুষ দেখিনি। আজ স্যার নেই। স্যারের আদর্শ নিয়েই সারা জীবন চলব।’
উপ-পরিদর্শক শ্রীদাম চন্দ্র রায় বলেন, ‘স্যার ছিলেন অনেক পুরানো ও দক্ষ কর্মকর্তা। স্যারের কাছ থেকে অনেক কিছু শেখার ছিল। অনেক কিছু শিখেছি। তিনি দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছেন। এমন মহৎ কাজ আর কি হতে পারে।’
গুলশানের সন্ত্রাসী হামলায় আহত ২৫ পুলিশ সদস্য এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল আহত পুলিশ সদস্যদের হাসপাতালে দেখতে গিয়ে বলেছেন, আমরা গর্ব করে বলতে পারি, পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা বীরত্বের সাথে এ ঘটনার মোকাবিলা করেছে।’
মুক্তিযোদ্ধার কণ্ঠ ডটকম/ ০৪-০৭-২০১৬ ইং/মো: হাছিবুর রহমান