muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

ইসলামের কথা

ঈদের নামাজ আদায় করবেন যেভাবে

ইসলামের কথা ডেস্কঃ বছর ঘুরে এক মাস সিয়াম সাধনা শেষে আবারো হাজির হলো খুশির দিন -পবিত্র ঈদ ‍উল ফিতর।

 

এই ঈদ দেশ-বিদেশে এখন সার্বজনিন উৎসবে পরিণত হয়েছে। তবে প্রকৃত রোজাদারদের জন্য আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে ঈদ উল ফিতর হচ্ছে -বিশেষ পুরষ্কার।

 

কোরআন মজিদে আল্লাহ পাক এরশাদ করেন- ক্বুল বিফাদলিল্লাহে ওয়া বিরাহমাতিহি ফা বিজালিকা ফাল ইয়াফরাহু’। (সূরা ইউনুস, আয়াত ৫৮)

 

এ আয়াতে আল্লাহ বলেন (হে মোহাম্মদ সা.) আপনি বলুন, আল্লাহর অনুগ্রহ ও তাঁরই রহমতের উপর তারা (বান্দা) খুশি উদযাপন করুক।

 

এক মাস সঠিক সিয়াম সাধনার মাধ্যমে যারা রমজানের হক আদায় করেছেন, নিজেকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সা.) এর সন্তুষ্টির্জনে সক্ষম হয়েছেন তাদেরকে আল্লাহ পাক নিজেই ঈদের খুশি উদযাপনের নির্দেশ দিয়েছেন।

 

মূলত ঈদ উল ফিতরে খুশি উদযাপন করা মোস্তাহাব। ঈদের আগমনে অস্থির হয়ে পড়ে শয়তান। কারণ এক মাস রোজায় সিয়াম সাধনার কারণে আল্লাহ বান্দাকে ক্ষমা করে দিয়েছেন এবং সে সবকিছু থেকে মুক্ত নিষ্পাপ হয়ে যায়। আর তাতে মিশন ব্যর্থ হয়ে যায় শয়তানের। এ কারণে শয়তান অস্থির ও হতাশ হয়ে পড়ে।

 

ঈদ উল ফিতরের নামাজ

পবিত্র ঈদ উল ফিতরে ছয় তকবিরের সঙ্গে দুই রাকাত নামাজ আদায় করা প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়ষ্ক পুরুষের ওপর ওয়াজিব। বিনা কারণে এর নামাজ ত্যাগ করা গোমরাহী। ঈদের নামাজের খুতবা পড়া সূন্নাত আর তা মোক্তাদির জন্য শ্রবণ করা ওয়াজিব।

 

যেভাবে ঈদের নামাজ পড়বেন

প্রথমে নিয়্যত করবেন আরবী না হলে বাংলায় যার অর্থ হবে এরূপ- আমি আল্লাহ তাআলার ওয়াস্তে কেবলামুখি হয়ে এই ইমামের পেছনে অতিরিক্ত ছয় তকবিরের সঙ্গে ঈদ উল ফিতরের দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজের নিয়্যত করছি।

 

তারপর কান বরাবর হাত উঠিয়ে আল্লাহু আকবার বলে স্বাভাবিকভাবে নিয়ত বেঁধে ছানা পড়বেন। এরপর ইমামের সঙ্গে অতিরিক্ত তিনবার তাকবির (আল্লাহু আকবার) বলতে হবে। এর মধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় তাকবিরে হাত না বেঁধে ঝুঁলিয়ে রাখবেন। শেষ তাকবির বলে হাত বাঁধবেন।

 

এভাবে এক রাকাত নামাজের পর দ্বিতীয় রাকাতে ইমাম সাহেব যখন সূরা ফাতিহা ও অন্য সূরা পড়া শেষ করবে তখন ইমামের সঙ্গে অতিরিক্ত তিন তকবির করে হাত ঝুঁলিয়ে রাখবেন আর চতুর্থ তকবিরে তথা শেষ তকবিরে হাত না বেঁধে সরাসরি রূকুতে চলে যাবেন। এভাবে বাকী নামাজ শেষ করবন। (ফতোয়া আলমগীরী, ১ম খন্ড, ১৫০ পৃষ্ঠা)

 

ঈদের খুতবার আহকাম

নামাজের পর ইমাম সাহেব খুতবা পড়বেন। জুমার খুতবায় সে সমস্ত কাজ সূন্নাত ঈদের খুতবায়ও তা সূন্নাত। জুমার খুতবা দেওয়ার পূর্বে ইমামের মিম্বরে বসা সূন্নাত আর ঈদের নামাজে খুতবার আগে না বসা সূন্নাত। ঈদের প্রথম খুতবার পূর্বে নয় বার আর দ্বিতীয় খুতবার পূর্বে সাতবার এবং মিম্বর থেকে নামার পূর্বে চৌদ্দবার আল্লাহু আকবার বলা সূন্নাত।

 

ঈদের মোস্তাহাব

ঈদের দিন ফজরের নামাজ মহল্লার মসজিদে পড়া, ঈদের নামাজের আগে সদকায়ে ফিতর আদায় করা, ঈদের জামাতে যাওয়ার আগে কয়েকটা খেজুর, কিংবা মিষ্টি জাতীয় কিছু খাওয়া, ঈদের নামাজ ঈদগাহে আদায় করা, ঈদগাহে পায়ে হেঁটে যাওয়া, এক রাস্তা দিয়ে যাওয়া অন্য রাস্তা দিয়ে ফিরে আসা, চুল ও শরীরের প্রয়োজনীয় লোম কাটা, নখ কাটা, গোসল করা, মিসওয়াক করা, ভাল (নতুন) কাপড় পরিধান করা,  খুশবু লাগানো, ঈদের আনন্দ প্রকাশ করা, বেশি করে সদকা দেওয়া, ঈদের আনন্দে অপরের সঙ্গে করমর্দন ও আলিঙ্গন করা, ঈদে যাওয়ার সময় নিচুস্বরে তাকবির পড়া।

 

হাদিসে আছে, হযরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, মহানবী (সা.) ঈদের দিন কয়েকটা খেজুর না খেয়ে  জামাতে আসতেন না, আর খেজুরের সংখ্যা বেজোড় হতো। (সহিহ বুখারী)

 

ঈদ কারো জন্য আনন্দের কারো শাস্তির

পবিত্র ঈদ কার জন্য এ উত্তরে বলা হয়েছে- তার জন্য ঈদ যে বান্দা আল্লাহর শাস্তিকে ভয় করেছে আর তার জন্য ঈদ নয়, যে নতুন কাপড় পড়েছে।

 

অর্থাৎ আল্লাহর আযাবকে ভয় করে আল্লাহর সন্তষ্টির জন্য যে একমাস রোজা যথাযথভাবে আদায় করেছে তার জন্য আজ সতিক্যার খুশির  দিন। আর নামাজ দোয়া নেই, ঠিকমত রোজা রাখেনি কিন্ত নতুন নতুন দামি জামা পরিধান করে যে ঈদ করতে  আসে তার জন্য ঈদ উল ফিতর খুশির দিন নয় আজাবের দিন তথা শাস্তির দিন।

 

আমিরুল মুমেনিন হযরত ওমর (রা.) এক ঈদে ঘরের দরজা বন্ধ করে কাঁদছিলেন, লোকেরা খলিফার এ অবস্থা দেখে জিজ্ঞেস করলেন হে আমিরুল মুমেনিন আজ খুশির দিন আপনি কেন কাঁদছেন? তখন হযরত ওমর (রা.) চোখের পানি মুছতে মুছতে জবাব দিলেন, হে লোকেরা এটা ঈদের দিন আবার আযাবের হুমকির দিনও। আজ যাদের নামাজ রোজা কবুল হয়েছে তাদের জন্য নিঃসন্দেহে ঈদের দিন। আর যাদের কবুল হয়নি তাদের জন্য  আজ আযাবের হুমকির দিন। তাদের রোজা তাদের মুখেই ছুঁড়ে মারা হয়েছে।

 

হযরত ওমর (রা.) বলেন, আমি জানি না আমি কি মকবুলদের অন্তর্ভূক্ত নাকি প্রত্যাখ্যাতদের।

 

আল্লাহ আমাদের সবাইকে নামাজ রোজা সঠিকভাবে আদায় করে প্রকৃত খুশি উদযাপনের তওফিক দিন। ঈদ উল ফিতর বয়ে আনুক অনাবিল আনন্দ ও প্রশান্তি… আমীন।

 

মুক্তিযোদ্ধার কণ্ঠ ডটকম/    ০৬- ০৭-২০১৬ ইং/মো: হাছিবুর রহমান

 

 

Tags: