ইসরাইল-ফিলিস্তিন যুদ্ধে ইহুদী সেনাদের দ্বারা গাজায় নির্যাতিত অসহায় ফিলিস্তিনিরা মারাত্মক আহত বা বিভিন্ন কারণে জন্মভুমি ত্যাগ করে পার্শ্ববর্তী দেশ মিশরে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন।
বিভিন্ন দেশ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার পাশাপাশি এই অসহায় ফিলিস্তিনিদের আহারে সহযোগিতার জন্য রাজধানী কায়রো সহ দেশটির বিভিন্ন শহরে খোলা হয়েছে চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক 'মেহমানখানা'।
মিশরের এনজিও সংস্থা ইজিপশিয়ান ইয়ুথ কাউন্সিল এর সহযোগিতায় আমেরিকা ভিত্তিক বাংলাদেশের আলহাজ্ব শামসুল হক ফাউন্ডেশন 'আশ' আয়োজন করেছে এই মেহমানখানার।
গত শুক্রবার গিজা শহরের 'জাজিরাতুল অররা' এলাকার একটি মেহমান খানায় গিয়ে দেখা যায়, কয়েক শত নারী ও শিশু ফিলিস্তিনি শরনার্থীর জন্য নীলনদের মাছ দিয়ে রান্না হচ্ছে মিশরীয় ঐতিহ্যবাহী খাবার 'সামাক সাইয়ীদিয়াত'। তার সাথে আছে বিভিন্ন ধরনের মিষ্টি, ফলমূল ও কোমল পানীয়।
বিখ্যাত আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশি কিছু শিক্ষার্থী স্বেচ্ছাসেবীদের সাথে নিয়ে নিজ হাতে এসকল খাবার তৈরি করছেন আশ ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মুহাম্মদ নাছির উদ্দিন।
এসময় উপস্থিত গাজার অসহায় শরনার্থীরা আয়োজক সংস্থা আশ'কে ধন্যবাদ দেয়ার পাশাপাশি নিজেদেরর মর্মান্তিক দুদর্শাও তুলে ধরেন এই প্রতিনিধির কাছে। বিশেষ করে নিজেদের ঘনিষ্ঠ স্বজন হারানোর পর যে দুয়েক জন স্বজন এখনো জীবিত আছেন বলে উনারা জেনেছেন, তাদেরকে মিশরে আনার বিষয়ে সহযোগিতা চেয়ে আন্তরিক অনুরোধ করেন মিশর সরকার সহ আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছে।
মায়ের সাথে মেহমানখানায় আসা মায়াবী চেহারার আট বছরের শিশু তা'লা ও পাঁচ বছরের সিলা তাদের পিতাকে তাদের কাছে এনে দেয়ার আকুতি করুণ পরিস্থিতির সৃষ্টি করে।
শামসুল হক ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মুহাম্মদ নাছির উদ্দিন জানান, গাজা বাসীর জন্য আশ ফাউন্ডেশন রেডক্রস এর তত্ত্বাবধানে যুদ্ধাবস্থার প্রথম থেকেই কায়রো থেকে রাফাহ সীমান্ত দিয়ে সরাসরি গাজায় জরুরী খাবার সামগ্রীর পাশাপাশি কাফনের কাপড়, সেনিটারী ন্যাপকিন পাঠানোর বিষয় গুলো ইতোমধ্যে বেশ প্রশংসিত হয়েছে। আমরা এবার রাজধানী কায়রো সহ বিভিন্ন বিভিন্ন শহরে অবস্থানরত ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য মেহমান খানার ব্যবস্থা করেছি।
তিনি আরো জানান, চট্টগ্রামে করোনাকালীন সময় থেকে অদ্যাবধি চলমান মেহমানখানার একটি শাখা নিয়ে মিশরে এসেছি নির্যাতিত অসহায় গাজাবাসীর পাশে দাঁড়াতে। মেহমানখানায় খাবার পরিবেশন এর পাশাপাশি অসহায় পরিবারগুলির জন্য বিশেষ ফুড প্যাকেজ বিতরণ কর্মসূচিও চলছে।
নাছির উদ্দিন জানান, খুব শীঘ্রই গাজার অসহায় বাচ্চাদের জন্য আশ ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে একটা ইতিমখানা তৈরির কাজ শুরু করতে যাচ্ছি। গাঁজা থেকে মিশরে আসা শরনার্থী শিশুদের থেকে ১শত এতিম শিশুকে বাংলাদেশে নিয়ে শামসুল হক ফাউন্ডেশনের এতিম খানায় পালন করতে চাই।
প্রকৌশলী নাসির উদ্দিন বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, এবিষয়ে কায়রোস্থ বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে আবেদন করলে মিশরে অবস্থানরত গাজার এতিম শিশুদেরকে বাংলাদেশে নিয়ে লালন পালন করা সম্ভব। এ বিষয়ে আশ ফাউন্ডেশন মাঠ পর্যায়ের সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত আছে।
উল্লেখ্য গাজায় ইসরাইলের হামলায় পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারন করলে রেড ক্রিসেন্ট এর সহযোগিতায় হাজার হাজার নারী ও শিশু শরনার্থী হয়ে মিশরে প্রবেশ করেন।