muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

খেলার খবর

‘তিন গোল দেব আমরা ধরে নিন পর্তুগালকে গুঁড়িয়ে দিয়েছি’

ক্রিড়া ডেস্কঃ বড় মজায় কেটেছিল সেই রাতটা। শঁজেলিজে দিয়ে মানুষের স্রোত নেমেছিল। বাবাদের হাত ধরে দুই বন্ধু মিশে গিয়েছিলেন ফুটবল-পাগল ফরাসি গণজোয়ারে। দেশের মাটিতে জিনেদিন জিদানদের বিশ্বজয়ের রাত ছিল সেটা।

আঠারো বছর আগেকার সেই রাতের সব কথা হুগো আর ভ্যালেন্তাইনের হুবহু মনে আছে বললে বাড়াবাড়ি হবে। দু’জনেই এখন আঠাশ-উনত্রিশ। বর্তমান ফরাসি কোচ দিদিয়ের দেশঁ যে দিন বিশ্বকাপ তুলেছিলেন দেশের অধিনায়ক হিসেবে, ওরা দু’জনেই তখন হাফপ্যান্ট। প্রাণপণ মন হাতড়েও তাই টুকরো টুকরো মজার কয়েকটা ছবি ছাড়া কিছু উঠে না আসে মুঠোয়।

সেই জন্যই ওরা কোনও তুলনায় যেতে চান না। শুক্রবার রাতে জোয়াকিম লো অ্যান্ড কোম্পানিকে দু’গোলে দুমড়ে ইউরো কাপের ঢিলছোড়া দূরত্বে এসে দাঁড়ানোর আবেগের সঙ্গে গত শতাব্দীর সেই স্বপ্নরাতের তুলনা হয় কি না— এ সব চর্চায় দুই বন্ধুর আগ্রহ নেই। ওরা সোজাসুজি ঢুকতে চান আঁতোয়া গ্রিজম্যানে!

আদরের ‘গ্রিজ’-কে নিয়ে দুই বন্ধু দারুণ একটা গান বেঁধেছেন। শুক্রবার রাতে আটলেটিকো মাদ্রিদ স্ট্রাইকারের দ্বিতীয় গোলের পর যা তাদের গাইতে শোনা যাচ্ছিল। প্রথমে বোঝা যায়নি। পুরোটাই ফরাসিতে। কিন্তু মাঝে-মাঝে ‘আঁতোনি’ শব্দটা কানে আসায় জিজ্ঞেস করা গেল। এবং সোত্সাহে ইংরেজিতে যে অনুবাদ তারা করে দিলেন, তা এ রকম— আঁতোনি, আমাদের আঁতোনি/ তুমি আমাদের ফাইনালে তুললে/ আঁতোনি, আমাদের আঁতোনি/ তুমি আমাদের কাপও জেতাবে!

ফুটবলে গান নতুন কোনও বস্তু নয়। প্রত্যেকটা টিম নিয়ে গান থাকে, প্রিয় প্লেয়ার নিয়েও থাকে। ওয়েলস সমর্থকদের যেমন গ্যারেথ বেল, অ্যালান র‌্যামসিদের নিয়ে আছে। কথা একই রেখে নামগুলো পাল্টে-পাল্টে ওয়েলসবাসীরা গেয়ে থাকেন। দেশের টিমেও এই প্রথম কাউকে নিয়ে গান বাঁধা হল না। দিমিত্রি পায়েতকে নিয়ে বহু দিন আগে থেকে আছে। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে ওয়েস্টহ্যাম ম্যাচে যা শোনা যায়। ইউরোয় ছ’গোল করে গ্রিজম্যান এখন জাতীয় বীর, ফ্রান্সের জনপ্রিয়তম চরিত্র, জায়ান্ট স্ক্রিনে তাঁর দেবশিশুর মতো মুখ দেখামাত্র ফরাসি তরুণীদের উসখুস— গান তো এখন গ্রিজম্যান নিয়েই হবে!

বিস্ফোরণটা হল যুবকদের পরের সংলাপে। বিয়ারের নেশায় মত্ত হুগো এবং ভ্যালেন্তাইন ক্রমাগত তখন প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাচ্ছেন, গ্রিজ যদি তিন নম্বর গোলটা দিতে পারেন, তারা দু’জনেই সোজা পোশাক খুলে দেখাবেন উত্সব কাকে বলে!

ঈশ্বরের কৃপায় সে জিনিস দেখতে হয়নি। গ্রিজম্যান দু’গোলেই আটকে রইলেন। দুই বন্ধু তখন মধ্যরাতের আইফেল টাওয়ার ফ্যান জোনে গাইতে শুরু করলেন, ‘ওনে ফিনাল… ওনে ফিনাল!’ ‘ওনে ফিনাল’ মানে, ‘আমরা ফাইনালে’। কিন্তু এদের চলন-বলন, নাটকীয়তার বহর দেখলে কথাটাকে একটু পাল্টে দিতে ইচ্ছে করবে। ‘আমরা ফাইনালে’ নয়, এ যেন ‘আমরা ফাইনালটাও জিতে গিয়েছি!’

ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোকে এরা কেউ ধর্তব্যের মধ্যেই আনছেন না! গ্রিজম্যান-মায়ায় ফ্রান্স এখন এতটাই আচ্ছন্ন যে, ওয়েলসের বিরুদ্ধে সেমিফাইনালে পর্তুগিজ নায়কের দুর্ধর্ষ প্রত্যাবর্তন মৃদু কম্পনও তুলতে পারছে না। বেশ কয়েক জনের সঙ্গে কথা বলে তাঁর প্রতি ‘সম্মান’-এর যা নমুনা পাওয়া গেল, তাকে দু’টো শব্দে মিটিয়ে ফেলা যায়— ‘‘ধুর, রোনাল্ডো!’’

বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের ধ্বংস করলে নিজেদের পৃথিবীর অধীশ্বর মনে হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু তা বলে ‘‘ধুর রোনাল্ডো!’’ অধুনা ফুটবল-বিশ্বের সম্রাট না হলেও যুবরাজ তো বটেই তিনি। একত্রিশ বছর বয়স হলেও গোলের সামনে যার স্পটজাম্প বা নাক্‌ল বল ফ্রি-কিক গোলকিপারের হৃদযন্ত্র সাময়িক স্তব্ধ করে দেয়, তাকে এমন খোলাখুলি যুদ্ধের আহ্বান?

প্রশ্নটা তুলতে ওরা এ বার রোনাল্ডোর পুরুষকারকে চ্যালেঞ্জ করে বসলেন! হুগো বললেন, “তিন গোল দেব। ধরে নিন পর্তুগালকে আমরা গুঁড়িয়ে দিয়েছি। ফাইনালটা নেহাত খেলতে হবে বলে খেলব।” বন্ধুর কথা শুনে ভ্যালেন্তাইন এ বার জুড়ে দেন, “রোনাল্ডোকে বলছি, তুমি পুরুষকার দেখাও। প্রমাণ করো ভাগ্য-টাগ্য কিছুই নয়, তুমিই একাই যা করার করছো। এত বড় প্লেয়ার তো তুমি, দেশকে বড় মঞ্চ পর্যন্ত নিয়ে এসেছো। এ বার ফ্রান্সকে হারিয়ে দেখাও!” ততক্ষণে আশপাশ থেকে কয়েকজন এগিয়ে এসেছেন। হাতে একটা অদ্ভুত মুদ্রা করছেন ওরা। এটা নাকি ধ্বংসের চিহ্ন। সঙ্গে স্লোগান— ‘ধ্বংস হবে রোনাল্ডো!’

অধিনায়ক হুগো লরিসের মন বলছে, ফাইনালে তাদের হারানো খুব কঠিন হবে। গ্রিজম্যান গোটা দেশকে একটু ধৈর্য ধরতে অনুরোধ করেছেন। আসলে বলেছেন, উত্সব জমিয়ে রাখতে! “এটা আমাদের সবার জয়। ১০ জুলাইয়ের জন্য এখন অপেক্ষা করছি আমরা,” বলেছেন গ্রিজম্যান। ভাবলে কেমন লাগে! চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনালের মতো মঞ্চে পেনাল্টি মিস করেছিলেন গ্রিজম্যান। ম্যানুয়েল ন্যয়ারকে উল্টো দিকে ছিটকে দেওয়া এক পেনাল্টিতেই আজ তিনি মহানায়ক। আর কোচ দিদিয়ের দেশঁ? তার কাছেও এটা স্বপ্নের মুহূর্ত, গর্বের রাত। বলেছেন, “প্লেয়াররা নিজেরাই নিজেদের ইতিহাসে পৌঁছে দিল। ফ্রান্সের মাঠে এমন জয়… এই অনুভূতি ভাষায় বোঝানো যাবে না!”

মুক্তিযোদ্ধার কণ্ঠ ডটকম/    ০৯ – ০৭-২০১৬ ইং/মো: হাছিবুর রহমান

Tags: