ম্যাচের প্রথমার্ধে ব্যাটারদের বিপর্যয়ে লজ্জার হারের শঙ্কা জাগাচ্ছিল ঠিক সেখান থেকেই যেন ঘুরে দাঁড়ানোর সংগ্রাম করলেন রিশাদ। প্রথমে শেখ মেহেদি হাসানকে নিয়ে শুরু করলেন টিকে থাকার লড়াই। এরপর তাসকিন আহমেদের সঙ্গে আরেকটা বড় জুটি। মাঝের সময়টুকু জয়ের আশা দেখছিলেন দেশের ক্রিকেট সমর্থকরা
বাংলাদেশের হয়ে টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ডও নিজের করে নিয়েছেন এই লেগস্পিনার। তবে দলকে জেতানোর মত পর্যাপ্ত সময় হাতে ছিল না রিশাদের। বড় শট খেলতে গিয়ে আউট হয়েছেন। তাতে নিশ্চিত হয়েছে বাংলাদেশের হারও। তাসকিন নিজেও চেষ্টা করেছেন। কিন্তু ব্যাটাররা যেদিন ব্যর্থ, সেদিন শেষের ঝড়টাও টাইগারদের দিতে পারেনি জয়ের সুবাস।
নুয়ান তুশারার হ্যাটট্রিক আর ৫ উইকেট শিকারের দিনে বাংলাদেশ আরও একবার স্বাদ পেল সিরিজ হারের। লঙ্কানদের বিপক্ষে আগে কখনোই সিরিজ জেতা হয়নি টাইগারদের। সিলেটে প্রথম ম্যাচে ৩ রানের হারের পর দ্বিতীয় ম্যাচে জয়। তৃতীয় ম্যাচে তাই প্রত্যাশার পারদ কিছুটা উঁচুতেই ছিল বাংলাদেশের জন্য। কিন্তু তুশারার কল্যাণেই জয় আসেনি বাংলাদেশের ভাগ্যে।
থুসারার পঞ্চম শিকার শরিফুল
নুয়ান থুসারা পেয়ে গেলেন ৫ উইকেট। নিজের শেষ ওভারে শরিফুল ইসলামকে বিদায় করে প্রথমবার এই কীর্তি অর্জন করলেন শ্রীলঙ্কার পেসার। ২ বলে ৪ রান করে দাসুন শানাকাকে ক্যাচ দেন বাংলাদেশি ব্যাটার। ১৩৪ রানে ৯ উইকেট হারালো বাংলাদেশ। একই ম্যাচে হ্যাটট্রিক ও পাঁচ উইকেটের দেখা পেয়েছেন থুসারা। ৪ ওভারে ২০ রান দেন তিনি।
রিভিউয়ে তাসকিন টিকলেও রিশাদের বিদায়
১৭তম ওভারে অষ্টম উইকেট হারিয়েছিল বাংলাদেশ, আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী। মাহিশ ঠিকশানার বলে তাসকিন আহমেদের বিরুদ্ধে এলবিডব্লিউর আবেদনে সাড়া দেন আম্পায়ার। তাসকিন রিভিউ নেন, বল আউটসাইড লেগে পিচড হওয়ায় বেঁচে যান তাসকিন।
কিন্তু একই ওভারের পঞ্চম বলে আরেকটি বড় শট খেলতে গিয়ে আউট হন রিশাদ হোসেন। ৩০ বলে ৭ ছয়ে ৫৩ রান করে সাদিরা সামারাবিক্রমার ক্যাচ হন তিনি। এই জুটি ছিল ৪১ রানের। ১১৭ রানে আট উইকেট নেই বাংলাদেশের।
ছক্কা মেরে রিশাদের হাফ সেঞ্চুরি
দুর্দান্ত এক হাফ সেঞ্চুরি করলেন রিশাদ হোসেন। আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে ২৬ বলে হাফ সেঞ্চুরি করেছেন তিনি। ১৬তম ওভারের চতুর্থ বলে ছক্কা মেরে ফিফটির দেখা পান। পঞ্চাশ ছোঁয়ার পথে ৭ ছক্কা মারেন তিনি।
এক ওভারে রিশাদের তিন ছক্কায় একশতে বাংলাদেশ
৭৬ রানে ৭ উইকেট হারানোর পর ক্রিজে নামেন তাসকিন আহমেদ। প্রথম দুই বল ডট দিয়ে শেষ দুটিই চার মারেন তিনি।
১৫তম ওভারে ঝড় তোলেন রিশাদ হোসেন। মাহিশ ঠিকশানাকে তিনটি ছক্কা মেরে ১৮ রান আদায় করে নেন, তিনটিই কাউ কর্নার দিয়ে। তার ঝড়ো ইনিংসে গ্যালারি থেকে ভেসে আসে ‘রিশাদ, রিশাদ’। ওই ওভারেই বাংলাদেশের স্কোর একশ ছাড়িয়ে যায়।
হাসারাঙ্গার গুগলিতে মেহেদীর বিদায়
ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা তার শেষ ওভারে দ্বিতীয় উইকেট পেলেন। মেহেদী হাসান ও রিশাদ হোসেনের ইনিংস সর্বোচ্চ জুটি ভেঙে গেলো।
সপ্তম উইকেটে ৪৪ রান যোগ করেন মেহেদী ও রিশাদ। হাসারাঙ্গার গুগলিতে ২০ বলে ২টি চারে ১৯ রান করে বোল্ড হন মেহেদী।
জাকেরও হতাশ করলেন
জাকের আলীকে নিয়ে ভালো কিছুর প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু দলের বিপদে হাল ধরতে পারলেন না বাংলাদেশি ব্যাটার। ১৩ বলে মাত্র ৪ রান করে ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গার এলবিডব্লিউ হন তিনি। জাকের রিভিউ নিয়েও উইকেট বাঁচাতে পারেননি। ৩২ রানে ৬ উইকেট নেই বাংলাদেশের। আর কোন উইকেট না হারিয়ে ১০ ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৪২ রান।
থুসারার আঘাতে পাওয়ার প্লেতে বিধ্বস্ত বাংলাদেশ
পাওয়ার প্লেতে নুয়ান থুসারায় বাংলাদেশ দাঁড়াতেই পারেনি। ইনিংসের তৃতীয় ওভারে লিটন দাসকে (৭) দাসুন শানাকার ক্যাচ বানান ধনঞ্জয়া ডি সিলভা।
পরের ওভারে বল হাতে নেন থুসারা। দ্বিতীয় বল থেকে টানা তিন উইকেট তুলে নেন তিনি। নাজমুল হোসেন শান্ত (১), তাওহীদ হৃদয় (০) ও মাহমুদউল্লাহ (০) গোল্ডেন ডাক মারেন। হ্যাটট্রিক করার পরের ওভারে সৌম্য সরকারও বোল্ড হন। ২৪ রানে ৫ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে ৫ উইকেটে ২৫ রান করেছে তারা। লক্ষ্য ১৭৫ রানের।
থুসারার হ্যাটট্রিকে ৪ উইকেট নেই বাংলাদেশের
ম্যাথুজের ওভারে আম্পায়ার্স কলে রক্ষা পেলেও তৃতীয় ওভারে শেষ রক্ষা হয়নি লিটনের। ওভারটা ম্যাথুজেরই ছিল। কিন্তু গ্রোয়িনের চোটে এক বল করেই মাঠ ছাড়েন তিনি। তার অসমাপ্ত ওভার শেষ করতে নামেন ধনাঞ্জয়া। একই ওভারের প্রথম বলে ডেভাবে অফ সাইডে সরে খেলতে গিয়েছিলেন। দ্বিতীয় বলেও সেভাবে খেলতে গিয়ে বল উঠিয়ে ক্যাচ আউট হন লিটন। বিদায় নেন ৭ রানে। তার পর পাথিরানার বদলে খেলতে আসা নুয়ান থুসারার বোলিংয়ে তাসের ঘরে পরিণত হয় বাংলাদেশ। তার হ্যাটট্রিকে ১৫ রানে হারায় ৪ উইকেট!
হ্যাটট্রিকের শুরুটা হয় ওভারের দ্বিতীয় বলে নাজমুল হোসেন শান্তকে বোল্ড করে। পরের বলে তাওহীদকেও বোল্ড করেন থুসারা। মাহমুদউল্লাহ অবশ্য লেগ বিফোরে আউট হয়েছেন। তিন ব্যাটারের মধ্যে হৃদয় ও মাহমুদউল্লাহ রানের খাতাই খুলতে পারেননি।
আম্পায়ার্স কলে রক্ষা লিটনের
নতুন বলে শুরুটা করেন অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজ। প্রথম বলেই লিটনকে পরাস্ত করেন তিনি। তার ভেতরে ঢুকে পড়া বল প্যাডে লাগলে আবেদন করে সফরকারীরা। আম্পায়ার সাড়া দেননি যদিও। শ্রীলঙ্কা পরে রিভিউ নিলে দেখা যায় বেলস উপড়ে গেলেও আম্পায়ার্স কলে রক্ষা পেয়েছেন লিটন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: বাংলাদেশের স্কোর ১৯.৩ ওভারে ১৪৬/১০, লক্ষ্য ১৭৫