ভারত মহাসাগরে পূর্ব আফ্রিকা উপকূলের সমুদ্রপথ বরাবরই ঝুঁকিপূর্ণ। তাই ঐ উপকূল থেকে যথেষ্ঠ দূরত্ব বজায় রেখেই চলতে হয় জাহাজগুলোকে। আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে মধ্যপ্রাচ্যের আবুধাবি আসার পথে ছিনতাই হওয়া বাংলাদেশি মালিকানাধীন জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ-র রুটও ছিল তীর থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচশো নটিক্যাল মাইল দূরে। কিন্তু নিরাপত্তা ব্যবস্থা শিথিল হওয়ায় সুযোগ নিয়েছে সোমালিয়ান জলদস্যুরা।
সোমালিয়ান জলদস্যুদের বাংলাদেশি জাহাজ 'এমভি আবদুল্লাহ' দখলে নেয়ার পর নতুন নির্দেশনার কথা জানিয়েছে নৌ-বাণিজ্য অধিদপ্তর।
দৃশ্যমান আর্মস গার্ড না থাকার সুযোগে প্রায় সাড়ে ৫০০ নটিক্যাল মাইল দূরে এসে বাংলাদেশি জাহাজ 'এমভি আবদুল্লাহ' ছিনতাই করা হয়। সোমালিয়ান জলদস্যুরা এ কাজে ব্যবহার করে আগে ছিনতাইয়ে ব্যবহার করা ইরানি ছোট ফিশিং বোট। এ ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে আন্তর্জাতিক সমুদ্রপথে জাহাজ পরিচালনায় নতুন নির্দেশনা দিলো নৌ-বাণিজ্য অধিদপ্তর। এখন থেকে ঝুঁকিপূর্ণ সমুদ্রপথে চলাচলকারী ৯৭টি বাংলাদেশি মালিকানাধীন জাহাজে নিয়োগ দিতে হবে অস্ত্রধারী নিরাপত্তারক্ষী। আন্তর্জাতিক নিয়মও মানতে হবে।
যদিও নতুন নির্দেশনায় জাহাজ পরিচালনার ব্যয় বাড়বে বলে দাবি করেছে সংশ্লিষ্টরা।
এতোদিন কোনো কোনো জাহাজ অস্ত্র নিরাপত্তা নিতো, আবার কোনো কোনো জাহাজ নিতো না। আর এমভি আবদুল্লাহর বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, ভারত মহাসাগর পাড়ি দিলেও খরচ কমাতে তারা নিরাপত্তা নেয়নি। যার সুযোগ নিয়েছে সোমালিয়ান জলদস্যুরা।
ফলে এখন থেকে লোহিত সাগরের পাশাপাশি ভারত মহাসগর পাড়ি দেয়ার সময় আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, অস্ত্রধারী নিরাপত্তারক্ষী রাখতে হবে বলে নির্দেশনা দিয়েছে নৌ-বাণিজ্য অধিদপ্তর।
নৌ-বাণিজ্য অধিদপ্তরের প্রিন্সিপাল অফিসার ক্যাপ্টেন সাব্বির মাহমুদ বলেন, আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী জাহাজ চলাচলে মালিকরা নিয়ম মানলে, নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করলে এমন ঘটনা ঘটবে না। তাই এখন থেকে ঝুঁকিপূর্ণ সমুদ্রপথে চলাচলকারী ৯৭টি বাংলাদেশি মালিকানাধীন জাহাজে অস্ত্রধারী নিরাপত্তারক্ষী নিয়োগ দিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
যদিও জাহাজ পরিচালনায় যুক্ত ব্যবসায়ীরা বলছেন, নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে গেলে জাহাজ পরিচালনার খরচ অনেক বেড়ে যাবে।
বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরোয়ার্ড অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস চেয়ারম্যান খায়রুল আলম সুজন বলেন, দস্যুতা মোকাবিলায় নিরাপত্তা জোরদার করতে হলে কোনো একটি সংস্থা থেকে নিরাপত্তারক্ষী ভাড়া করতে হবে। তখন অতিরিক্ত খরচ হবে। অনেক জাহাজ মালিকই এই খরচ করতে চান না। আর সেই গাফিলতি থেকেই এই জিম্মিদশা।
আগে কখনো উপকূল থেকে ৫০০ নটিক্যাল মাইল দূরে এ জলদস্যুরা আসতো না। কিন্তু নিরাপত্তা ব্যবস্থা শিথিল হওয়ায় সোমালিয়ান জলদস্যুরা বাংলাদেশি জাহাজ ছিনতাই করে আটকে রেখেছে। আর এমন করুণ দশার কারণ হিসেবে জাহাজের নিরাপত্তা দুর্বলতাকেই দায়ী করেন যুক্তরাজ্যের মাস্টার মেরিনার ক্যাপ্টেন এম আনাম চৌধুরী।
তিনি বলেন, অটোমেটিক আইডেনটিফিকেশন সিস্টেম থাকলে আশপাশের কমপক্ষে ৫০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত কোনো জাহাজের কী অবস্থা তা জানা যাবে। ওই জাহাজে অস্ত্রধারী নিরাপত্তারক্ষী ছিল না। রেজার ওয়্যার দিয়ে একটা বেরিকেড সৃষ্টি করার কথা, সেটাও ছিল না। ফলে ওরা যখন এসেছে কোনো বাধা ছাড়াই জাহাজে উঠে গেছে।
গত মঙ্গলবার (১২ মার্চ) দুপুর দেড়টার দিকে কবির গ্রুপের মালিকানাধীন এসআর শিপিংয়ের জাহাজটি জলদস্যুদের কবলে পড়ার খবর জানতে পারে গ্রুপের কর্মকর্তারা।
ওই দিন সন্ধ্যার পর জিম্মি জাহাজটির প্রধান কর্মকর্তা (চিফ অফিসার) মো. আতিক উল্লাহ খান তার স্ত্রীর কাছে ফোন করে বলেন, আমাদের কাছ থেকে মোবাইল নিয়ে নিচ্ছে। ফাইনাল কথা হচ্ছে, এখানে যদি টাকা না দেয়, আমাদের একজন একজন করে মেরে ফেলতে বলেছে। তাদের যত তাড়াতাড়ি টাকা দেবে, তত তাড়াতাড়ি ছাড়বে বলেছে। এই বার্তাটা সবদিকে পৌঁছে দিয়ো।