জুবাইদা সুলতানা (৪৪) অবসরপ্রাপ্ত এক যুগ্ম সচিবের মেয়ে। পরিবারের পরিচয় ব্যবহার না করে রাজধানীর অভিজাত পাড়ার বিভিন্ন হোটেল, ক্লাবে ভুয়া পরিচয়ে সেমিনার এবং নানা প্রোগ্রামে রেজিস্ট্রেশন ও অংশগ্রহণ করতেন। এর নেপথ্যে মূল উদ্দেশ্য চুরি। অভিজাত পাড়ায় অভিজাত চোরের খ্যাতি পাওয়া এই নারী গত ১২ বছরে প্রায় আট শতাধিক মোবাইল ফোন চুরি করেছেন।
গত ৩ মার্চ ঢাকা ক্লাবে গাইনোকোলজিক্যাল অনকোলজি বিষয়ক এক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে গাইনোকোলজিক্যাল অনকোলজি বিভাগের চিকিৎসক ডা. ফারহানা হকও অংশ নেন। সেমিনারে অংশ নেন জুবাইদা সুলতানাও। তিনি কৌশলে ক্যানসার চিকিৎসার বিখ্যাত এ চিকিৎসকের মোবাইল ফোন, ব্যাগ ও গহনা চুরি করেন।
ডা. ফারহানা হকের জিনিসপত্র বিক্রি করে দিলেও তার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরটি নিজের মোবাইলে ট্রান্সফার করে নেন। এরপর জুবাইদা নিজে সাজেন ডা. ফারহানা। রোগীরা যোগাযোগ করলে, পরামর্শ চাইলে ফারহানা সেজে ব্যবস্থাপত্র দিয়ে হাতিয়ে নিয়ে আসছিলেন মোটা অঙ্কের টাকা।
এ বিষয়ে গত ১২ মার্চ রমনা মডেল থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়। মামলা পর থেকে এ বিষয়ে ছায়া তদন্ত শুরু করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তদন্তের এক পর্যায়ে গতকাল (১৫ মার্চ) তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারের সময় তার কাছ থেকে মহিলাদের ১৬টি হ্যান্ডব্যাগ, ৪টি মোবাইল, ৫টি বিভিন্ন ব্যাংকের ক্রেডিট কার্ড, অলংকার, বিভিন্ন সুপার শপের কার্ড, ৪টি পেনড্রাইভ জব্দ করা হয়।
ডিবি জানায়, জুবাইদা সুলতানা গত ১২ বছর ধরে রাজধানীর বিভিন্ন অভিজাত ক্লাব ও হোটেলে চুরি করে আসছেন। এ পর্যন্ত প্রায় ৭-৮শ মোবাইল ছাড়াও ল্যাপটপ ও দামি ভ্যানিটি ব্যাগ চুরি করেন অভিজাত এলাকা থেকে।
আজ শনিবার (১৬ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর মিন্টু রোডে নিজ কার্যালয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন অর রশীদ বলেন, জুবাইদা অভিজাত চোর। তার টার্গেট চাকরিজীবী নারী ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়া নারী শিক্ষার্থীরা। তিনি ঢাকা ক্লাব, গুলশান ক্লাব, রেডিসন এবং সোনারগাঁওয়ের মতো অভিজাত হোটেলে যেতেনই মূলত চুরি করতে।
হারুন বলেন, অভিজাত পাড়ার এসব হোটেল ক্লাবে নানা সময় দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মানের বিভিন্ন সভা-সেমিনারের আয়োজন করা হয়। জুবাইদা বিভিন্ন পাঁচতারকা হোটেলে ও রেস্টুরেন্টে পেশাজীবী বিভিন্ন সংগঠনের সভা-সিম্পোজিয়াম, সেমিনারে পারিবারিক কোনো পরিচয়ে রেজিস্ট্রেশন করতেন না। একেক সময় ভিন্ন ভিন্ন ভুয়া নাম-ঠিকানা ব্যবহার করে অনলাইন রেজিস্ট্রেশন করে অংশগ্রহণ করতেন। সারাদিন গুরু-গম্ভীর আলোচনার ফাঁকে ফাঁকে চুরি করে সটকে পড়তেন। চোরাই জিনিস ব্যবহার করে যাপন করতেন বিলাসী জীবন। বিগত ১২ বছর ধরে জুবাইদা চুরি করে আসছেন। নিজেকে রাখতেন পরিমিতভাবে গুছিয়ে।
তিনি আরও বলেন, জুবাইদার বাবা পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের একজন অবসরপ্রাপ্ত যুগ্ম সচিব। তার বোন গ্রামীণফোনের বড় কর্মকর্তা। তার এসব খারাপ অভ্যাসের জন্য তাকে পরিবার থেকে বিতাড়িত করা দেওয়া হয়েছে। জুবাইদ বিয়ে করেছেন দুটি। তার বর্তমান স্বামীর তিনি চতুর্থ স্ত্রী। তার স্বামী বর্তমানে সৌদিপ্রবাসী। স্বামী সৌদিতে থাকলেও জুবাইদার চুরি করা জিনিসপত্র বিক্রি করে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিতেন।
গোয়েন্দা পুলিশ জানিয়েছে, জুবাইদা এখন পর্যন্ত রেডিসন হোটেল, ঢাকা ক্লাব, সোনারগাঁও হোটেল, কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন, গুলশান শুটিং স্পোর্টস ক্লাব, এছাড়া বিভিন্ন অভিজাত হোটেল ও রেস্টুরেন্ট চুরি করেছেন।
অভিজাত পাড়ায় জুবাইদার চুরি, সহায়তাকারীদের খুঁজছে ডিবি জুবাইদা তো একা নন। তার দ্বিতীয় স্বামী চোরাই মাল বিক্রিতে সহায়তা করছেন। কিন্তু কারো সহায়তা ছাড়া গত ১২ বছর ধরে একাধারে চুরি করা সম্ভব না। অভিজাত পাড়ায় এ ধরনের চুরি তো বড় ধরনের ব্যবসা। চোরের নামে ইনভাইটেশন, রেজিস্ট্রেশন কারা করে দিচ্ছে। নিশ্চিত সেসব হোটেল বা ক্লাবের কেউ না কেউ তাকে সহায়তা বা সহযোগিতা করছেন। সেটা আমরা খতিয়ে দেখছি। ডিবি পুলিশ তাদের খুঁজছে।