সোমালিয়ার জলদস্যুদের কাছ থেকে একটি জাহাজ দখলে নিয়েছে ভারতের নৌবাহিনী। এসময় ১৭ জন ক্রু সদস্যকেও উদ্ধার করেছে তারা। এছাড়া অভিযানের সময় জাহাজটিতে থাকা ৩৫ জন জলদস্যুও আত্মসমর্পণ করেছে।
উদ্ধারকৃত এই জাহাজটি কয়েক মাস আগে ছিনতাই করেছিল জলদস্যুরা। ভারতীয় নৌবাহিনীর বরাত দিয়ে রোববার (১৭ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
ভারতীয় নৌবাহিনীর একজন মুখপাত্র বলেছেন, বিশেষ কমান্ডোসহ ভারতীয় নৌবাহিনী সোমালি জলদস্যুদের হাইজ্যাক করা একটি পণ্যবাহী জাহাজ জব্দ করেছে এবং ১৭ জন ক্রু সদস্যকে উদ্ধার করেছে।
শনিবার সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে ভারতীয় নৌবাহিনী আরও বলেছে, মাল্টিজ-পতাকাবাহী বাল্ক কার্গো জাহাজ এমভি রুয়েনে অবস্থানরত ৩৫ জন জলদস্যু আত্মসমর্পণ করেছে এবং জাহাজটিতে অবৈধ অস্ত্র, গোলাবারুদ এবং মাদক আছে কিনা তা পরীক্ষা করা হয়েছে।
আল জাজিরা বলছে, এমভি রুয়েন গত বছরের শেষের দিকে হাইজ্যাক করা হয়েছিল এবং ভারতীয় নৌবাহিনী জানিয়েছে, তারা প্রথমে জাহাজটিকে গত শুক্রবার আটক করে।
নৌবাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছে, ‘জাহাজে থাকা জলদস্যুদের আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়েছিল এবং জাহাজটিকে এবং এতে যেসব বেসামরিক নাগরিককে তাদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে আটকে রাখা হয়েছিল, তাদেরকেও ছেড়ে দিতে বলা হয়’।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘ভারতীয় নৌবাহিনী এই অঞ্চলে সামুদ্রিক নিরাপত্তা এবং নাবিকদের নিরাপত্তার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
ইউরোপীয় ইউনিয়নের নৌবাহিনী জানিয়েছে, গত সপ্তাহে সোমালিয়ার উপকূলে বাংলাদেশের পতাকাবাহী একটি কার্গো জাহাজ দখলের জন্য এই জাহাজটিকে বেস বা ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকতে পারে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের নৌবাহিনী গত বৃহস্পতিবার জানায়, সোমালি জলদস্যুরা গত বছরের ডিসেম্বরে মাল্টিজ-পতাকাবাহী বাল্ক কার্গো জাহাজ রুয়েন ছিনতাই করেছিল। আর সেই জাহাজটিই তারা দুই দিন আগে সোমালিয়ার উপকূলে বাংলাদেশের পতাকাবাহী একটি কার্গো জাহাজ দখলে নিতে ব্যবহার করতে পারে।
সোমালি জলদস্যুরা ২০১৮ সাল পর্যন্ত এক দশক ধরে গুরুত্বপূর্ণ বৈশ্বিক জলপথে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে রেখেছিল। এরপর তাদের কার্যক্রম কিছুটা স্তিমিত হয়ে পড়লেও গত বছরের শেষের দিক থেকে তাদের আক্রমণ আবারও বাড়তে শুরু করে।
মূলত ২০১৭ সাল থেকে আন্তর্জাতিক নৌবাহিনীর ব্যাপক তৎপরতার কারণে এডেন উপসাগর এবং ভারত মহাসাগরে ছিনতাই বন্ধ করে দেয় সোমালি জলদস্যুরা। এরপর থেকে গত বছরের ডিসেম্বরে মাল্টিজ-পতাকাবাহী বাল্ক কার্গো জাহাজ এমভি রুয়েন হাইজ্যাক করাই ছিল তাদের প্রথম সফল ছিনতাই।
সেই ঘটনার পর কয়েক মাস পার হলেও রুয়েনের অপহৃত ক্রুদের মুক্তিপণ পরিশোধ করা হয়নি বলে ব্রিটিশ মেরিটাইম সিকিউরিটি ফার্ম অ্যামব্রে জানিয়েছিল। এছাড়া জলদস্যুরা চিকিৎসার কারণে একজনকে ছেড়ে দিলেও ১৭ জন ক্রুকে ধরে রেখেছিল বলে মিডিয়া রিপোর্টে বলা হয়েছিল।
আল জাজিরা বলছে, পশ্চিমা শক্তিগুলো ইয়েমেনের ইরান-সমর্থিত হুথিদের আক্রমণের ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করায় জলদস্যুদের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা প্রদানের জন্য লোহিত সাগরের পূর্বে অন্তত এক ডজন যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন করেছে ভারত।
এই অঞ্চলে সাম্প্রতিক হামলার পর দক্ষিণ এশিয়ার এই দেশটির নৌবাহিনীও আরব সাগরে তাদের নজরদারি বাড়িয়েছে।
এর আগে গত জানুয়ারিতে আরব সাগরে ছিনতাইয়ের চেষ্টার পর ভারতীয় নৌবাহিনী লাইবেরিয়ার পতাকাবাহী একটি বাণিজ্যিক জাহাজ থেকে সকল ক্রু সদস্যকে উদ্ধার করেছিল।