muktijoddhar kantho logo l o a d i n g

খেলার খবর

ব্যাটিং দিয়েই পাল্লা দিতে হবে ভারতের সঙ্গে

mushfiq vs india
বিশ্বকাপ থেকে ভালো সময়ের মধ্য দিয়ে যেতে থাকা বাংলাদেশ দলকে দুটি ব্যাপারে স্থির সিদ্ধান্তে পৌঁছে যেতে সহায়তা করেছে পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ। প্রথমত ব্যাটসম্যানরা তাঁদের সামর্থ্যের সব কয়টা ডানা মেলতে পারলে এমনকি শক্ত প্রতিপক্ষকেও রুখে দেওয়া সম্ভব। পাকিস্তানের সঙ্গে খুলনা টেস্ট ড্র করে ফেলা এরই জ্বলন্ত উদাহরণ। দ্বিতীয়ত ব্যাটসম্যানরা পারফর্ম না করলে বাংলাদেশের যে বোলিং অ্যাটাক, তা দিয়ে শক্তিশালী দলকে নাড়িয়ে দেওয়ার আশাও বাস্তবসম্মত নয়। পাকিস্তানের বিপক্ষে ঢাকা টেস্ট সেটিও চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে।

দুয়ে মিলে যে শিক্ষা, সেটি আঁকড়ে ধরেই এখন চলছে ভারতের বিপক্ষে আগামী মাসে একমাত্র টেস্টের জন্য বাংলাদেশের রণসজ্জা। নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামে ১০ জুন থেকে শুরু হতে যাওয়া টেস্টের জন্য ভারতীয় দল ঘোষণা হওয়ার কথা ২০ মে। সেই দল দেখেই নিজেদের কম্বিনেশন ঠিক করার অপেক্ষায় ফারুক আহমেদের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের নির্বাচক কমিটি। বোলিং নিয়ে হাহাকার যেহেতু সহসাই মুছে যাওয়ার নয়, তাই হোম সিরিজের ওই টেস্ট খেলার জন্য বাংলাদেশের নীতিমালাও একরকম চূড়ান্তই হয়ে আছে।

নীতিটা হলো শক্তিশালী ব্যাটিং নির্ভর ভারতের সঙ্গে ব্যাটিং দিয়েই পাল্লা দেওয়ার। সেই সঙ্গে ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের স্পিন খেলার দক্ষতা এমনই প্রশ্নাতীত যে স্বাগতিক হওয়ার সুবিধা নিয়ে টার্নিং উইকেট বানিয়েও সুফল তোলার সম্ভাবনা নেই খুব একটা। তা ছাড়া পাকিস্তানের বিপক্ষে খুলনা ও ঢাকা টেস্টও এই বার্তা দিচ্ছে যে বাংলাদেশের আসলে কেমন উইকেটে খেলা দরকার। খুলনায় একেবারেই ফ্ল্যাট উইকেটে ড্র করার সাফল্য। কিন্তু ঢাকার উইকেটে সামান্য বাউন্স থাকার সুবিধা নিয়ে পাকিস্তানের বোলাররা বিপদের কারণ হয়ে উঠেছেন।

এমন টাটকা অভিজ্ঞতা থাকায় ভারতের বিপক্ষে কেমন উইকেট বেছে নেওয়া হবে, সেই সিদ্ধান্তে খুব সহজেই পৌঁছে যেতে পারছেন প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদ, ‘আমাদের এখন টেস্টে ব্যাটিং উইকেটে খেলা উচিত বলেই আমি মনে করি। সেটিই আমাদের জন্য সুবিধাজনক হবে। টেস্টে বাংলাদেশের রেকর্ডের দিকে যদি তাকান, তাহলে দেখবেন তা খুব ভালো নয়। বিশেষ করে আমাদের বোলিং শক্তি যা, তা নিয়ে খুব ভালো করারও কথা নয়। পাকিস্তানের বিপক্ষে শেষ টেস্টেও আমরা সেটি দেখেছি। তাই নিজেদের শক্তির সঙ্গে মানানসই উইকেটেই খেলা দরকার।’

অর্থাৎ ফতুল্লায় তামিম ইকবাল, ইমরুল কায়েস, মমিনুল হক, মাহমুদ উল্লাহ, সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিমদের জন্য স্বাচ্ছন্দ্যে রান করার উইকেটই বেছে নেওয়া হচ্ছে। যদিও ব্যাটিং উইকেটে ভারতেরও রান পাহাড় গড়ার সম্ভাবনা থাকবে। কিন্তু পাকিস্তানের বিপক্ষে খুলনা অভিজ্ঞতায় সেটিও ফারুককে বিচলিত করতে পারছে না। তিনি বরং ব্যাটিং দিয়েই সম্ভাব্য সেরা ফল দেখার আশায়, ‘এটা ঠিক যে দুনিয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যাটিং লাইন ওদের। পুরো শক্তির ভারতীয় দল এলে তো কথাই নেই। তবু মানতে হবে যে ব্যাটিংই আমাদের শক্তি। ব্যাটিংটা ভালো হলে টেস্ট ড্র করে ফেলাও সম্ভব। ড্র করাই আমাদের মূল লক্ষ্য থাকবে।’

যে লক্ষ্য নিয়ে অনেকের ভিন্নমতের কথাও মাথায় রাখছেন ফারুক, ‘অনেকে ড্র করার লক্ষ্যকে নেতিবাচক বলে মনে করতে পারেন। কিন্তু আমি মোটেও তা মনে করি না।’ বিশেষ করে বোলিং নিয়ে আস্থাশীল হতে যখন আরো অনেক সময়ের প্রয়োজন, ‘চাইলেই তো মুরালির মতো একজন স্পিনার আমরা পেয়ে যাচ্ছি না। টেস্টের জন্য উঁচু দরের বোলিং অ্যাটাক দাঁড় করাতে আমাদের পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা দরকার। জোর দিতে হবে ঘরোয়া ক্রিকেটেও।’ বোলিং নিয়ে আস্থাহীনতার পাশে ব্যাটিংয়ে আস্থাও বেড়েছে ফারুকের, ‘টেস্ট ক্রিকেট খেলার শুরু থেকেই ব্যাটিং আমাদের শক্তির দিক ছিল। হয়তো পারফরমেন্স ভালো হতো না। কিন্তু এখন সেই ধারাও বদলেছে। আমাদের ব্যাটসম্যানরা এখন টেস্টে ডাবল সেঞ্চুরিও করছে।’

টেস্ট জেতানোর মতো বোলিং অ্যাটাক না হওয়া পর্যন্ত ব্যাটিংয়ে আস্থা রেখে যাওয়া ছাড়া কোনো উপায়ও তো দেখছেন না ফারুক, ‘যত দিন পর্যন্ত শক্ত প্রতিপক্ষকে টেস্টের দুই ইনিংসে আমরা অলআউট করতে না পারছি, তত দিন পর্যন্ত এই লক্ষ্য নিয়েই খেলা উচিত, যাতে দেশের মাটিতে কেউ আমাদের সহজে হারাতে না পারে। তত দিন পর্যন্ত ব্যাটিং শক্তিতে আস্থা রেখেই আমাদের খেলতে নামতে হবে।’ পাকিস্তান টেস্ট সিরিজ আপাতত এমন উপসংহারই টেনে দিয়ে গেছে!

Tags: