বরগুনার বেতাগীতে বেশ কিছুদিন যাবৎ সরকারি চাল ভিন্ন ভিন্ন ব্র্যান্ডের বস্তায় খোলাবাজারে বিক্রির উদ্দেশ্যে প্যাকেটজাত করে আসছেন একটি অসাধু চক্র। স্থানীয় সাংবাদিকদের দেওয়া তথ্যানুসারে সোমবার গভীর রাতে উপজেলার মোকামিয়া ইউনয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের এক কৃষকের গোঁয়ালঘর খাদ্য অধিদপ্তরের ১৩৩ বস্তা চালের সন্ধান পায় উপজেলা প্রশাসন। এছাড়া প্রশাসনের অভিযান পরিচালনা করার সময় দেশের নামি-দামি মিনিকেট ব্রান্ডিং প্যাকেট করার যন্ত্রের সন্ধান মিলে। প্রভাবশালী যুবলীগ নেতা চালবাজদের বিরুদ্ধে নিরব ভূমিকা পালন করেন স্থানীয় প্রশাসন। এতে স্থানীয় জনসাধারণের মধ্যে ক্ষোভের সৃস্টি হয়েছে। সোমবার রাত সাড়ে দশটায় স্থানীয়দের গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানা গেছে ,উপজেলার বুড়ামজুমদার ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড সংলগ্ন দক্ষিণ করুণা গ্রামের মৃত তোতা মিয়ার ছেলে আবদুল মন্নান এর গোঁয়াল ঘরের মধ্যে দেশের বিভিন্ন নামি দামী ব্র্যান্ডের ৫০ কেজি ওজনের ১৩৩ বস্তা সরকারি চালের খোঁজ পাওয়া যায়। ওই বাড়ির আব্দুল মান্নানের ভাষ্যমতে, তার মামাতো ভাই উপজেলা যুবলীগের সহসভাপতি শামীম আহম্মেদ এই চালের বস্তাগুলো রাখছে। তবে যুবলীগ নেতা শামীম আহম্মেদ এবিষয়টি স্বীকার করেন। সংবাদকর্মীরা খাদ্য অধিদপ্তরের এসব প্যাকেটজাতকরণ বস্তা এবং একাধিক খালি বস্তার ভিডিও সোস্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন। উপজেলা প্রশাসন এ ঘটনার খবর পেয়ে মাত্র ৮ কিলোমিটারের পথ ২ ঘন্টার পর রাত সাড়ে ১২ টায় ঘটনাস্থলে পৌছে সহকারি কমিশনার (ভূমি) বিপুল সিকদার এবং কিছু সংখ্যক থানা পুলিশ। সেখানে প্রশাসনের নানা নাটকীয়তার মধ্যে প্রায় তিন ঘন্টাব্যাপী চালবাজদের সাথে চলে সহকারি কমিশনার (ভূমি) বিপুল সিকদারের আলোচনা। পরে গভীর রাত হওয়ায় রাত সাড়ে ৩ টায় সংবাদকর্মীরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করে। এরপর জানা যায়, বিশ হাজার টাকা জরিমানা করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে চালবাজদের ১৩৩ বস্তা চাল এবং প্যাকেটজাতকরণের যন্ত্রপাতি। এতে স্থানীয় জনসাধারণের মধ্যে চরম ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। স্থানীয় একাধিক বলেন,‘ যুবলীগ নেতা বলে কথা, স্থানীয় প্রশাসনের ভূমিকা রহস্যজনক।’ তবে চাল গরিবদের মধ্যে বিতরণ করে দিলে ভালো হতো বলে একাধিক ব্যাক্তি জানান। জব্দ করা হয়নি নকল ব্র্যান্ডিং করা কোনো চালে বস্তা কিংবা নকল প্যাকেটজাত করণে ব্যবহৃত কোনো যন্ত্রপাতি। সরকারি চাল ভিন্ন ভিন্ন ব্র্যান্ডিং বস্তা প্যাকেটজাত করার প্রক্রিয়ায় সত্যতা পেয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে আসা ওই কর্মকর্তা। ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনাকালে তিনি বলেন, ওই চাল কাবিটা ও কাবিখার।’ একইসাথে তিনি সংবাদকর্মীদের উদ্দেশ্যে আরো বলেন,চাইলেই সব আইন সবক্ষেত্রে আইন প্রয়োগ করা যায় না ,তাই সহনশীলভাবে জরিমানা করা হয়েছে।’ এরপর তিনি ঘটনাস্থল থেকে ব্র্যান্ডিং ১৩৩ বস্তা চাল এবং সেলাইয়ের কাজে ব্যবহৃত জব্দকৃত মালামাল ও ভিন্ন ভিন্ন ব্র্যান্ডের শতাধিক প্যাকেটসহ ১৩৩ বস্তা চাল ফেরত দিয়ে দেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন বেতাগী উপজেলা খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা রিগান হালদার , সার্ভেয়ার রিয়াজ মাহমুদ, থানা পুলিশ এবং ভ্রাম্যমাণ অভিযানে আসা সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয় উপজেলা যুবলীগের সহসভাপতি মো. শামীম আহম্মেদ বলেন,‘ এ সকল চাল খাদ্যগুদাম থেকে আমার ক্রয় করা। যার বৈধ কাগজপত্র সংরক্ষিত আছে।্#৩৯; সরকারি চাল ব্র্যান্ডিং প্যাকেট করা যায় কিনা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন,্#৩৯; আমরা এভাবেই করে আসছি। এসব ব্যাপারে থানা ও প্রশাসন জানেন।্#৩৯; বেতাগী সহকারী কমিশনার(ভূমি) বিপুল সিকদার বলেন,‘ প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে বেতাগী উপজেলার দক্ষিণ করুণা গ্রামের এক বাড়ীতে অভিযান পরিচালনা করা হয়। এসময় ভিন্ন ভিন্ন ব্র্যান্ডের চালের বস্তায় কাবিটার চাল বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে প্যাকেটজাত করায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ এর ৫০ ধারা অনুযায়ী এক ব্যক্তিকে বিশ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জনস্বার্থে এ ধরণের অভিযান অব্যাহত থাকবে। তবে অভিযানে কোনো ধরনের মালামাল কিংবা প্রাপ্ত চাল জব্দ করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি কোনো উত্তর দেননি।’ এবিষয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারুক আহমেদ বলেন,‘ তদন্ত কমিটি গঠন করে সঠিক প্রতিবেদন দাখিল করার পর আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’